অপ্রতিরুদ্ধ ভালোবাসায় সিক্ত খালেদা জিয়া

অপ্রতিরুদ্ধ ভালোবাসায় সিক্ত খালেদা জিয়া

ঢাকা, ৭ অক্টোবর (জাস্ট নিউজ) : অসুস্থ বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে নেয়া হচ্ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বের হচ্ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া, শুরু হয় মুষলধারে বৃষ্টি। এ বৃষ্টি উপেক্ষা করে পথে পথে, রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে যান কর্মী-সমর্থকরা। শুধু নেত্রীকে একটু দেখা যায় কিনা।

বেলা পৌনে ৩টায় কঠোর নিরাপত্তার মাঝে বেগম খালেদা জিয়াকে নেয়া হয় হাসপাতালে। মৎস্য ভবনের সামনে কয়েকশ’ কর্মী-সমর্থক জড়ো হয়ে স্লোগান দিতে থাকেন, এ সময় পুলিশ ট্রাফিক জ্যামের অজুহাতে তাদের ধাওয়া করে। পুলিশের ধাওয়া ও বৃষ্টি উপেক্ষা করে কর্মী-সমর্থকরা স্লোগান দিতে দিতে দৌড়ে পালিয়ে যায়। একইভাবে হাইকোর্টের সামনে কর্মী-সমর্থকরা জড়ো হওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশি বাধায় মিছিল হয়নি।

কাকরাইল মসজিদের সামনে কর্মী-সমর্থকরা স্লোগান দিতে থাকলে পুলিশের ধাওয়ায় ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। হোটেল সাকুরা, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, পরিবাগ এলাকায় হাজার-হাজার নেতাকর্মী সমর্থক রাস্তার দু’পার্শ্বে দাঁড়িয়ে ছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল হাসপাতালের পশ্চিমপার্শ্বে কর্মী-সমর্থকরা জড়ো হলে পুলিশ বাধা দেয়, পরে লাঠিচার্জ করে।

পরিবাগ এলাকায় বিএনপি কর্মী জসিম উদ্দিন জানান, নেত্রীকে দেখতে পারলাম না। পুলিশ রাস্তায় দাঁড়াতে দেয়নি। পুলিশের লাঠির আঘাতে আমাদের বন্ধু তছলিমুর রহমান গুরুতর আহত হয়েছে।

বারডেম হাসপাতাল সংলগ্ন ফুটওভারব্রিজের নিচে বিএনপির শতাধিক কর্মী জড়ো হলে পুলিশ তাদের ধাওয়া করলে তারা হাসপাতালের ভেতরে ঢুকে পড়ে। সেখানে পুলিশ তাদের ওপর আবার হামলা চালায়।

আহত জালাল আহম্মদ কান্নাজড়িত কণ্ঠে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, কি অপরাধ করলাম, নেত্রীর প্রতি ভালোবাসার কারণে বৃষ্টি উপেক্ষা করে সকাল থেকে অপেক্ষা করছিলাম। বারডেম হাসপাতালে আউটডোর থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে ব্যবস্থাপত্র হাতে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি। পুলিশ আবারো আমাকে মেরেছে। কিছু বলার নেই।

এভাবে পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল হাসপাতাল পর্যন্ত রাস্তার দু’পার্শ্বে উৎসবমুখর সাধারণ মানুষের উপস্থিতি লক্ষণীয়। পুলিশি বাধা, গ্রেফতার, বৃষ্টিও থামাতে পারেনি বেগম খালেদার প্রতি সাধারণ মানুষের ভালোবাসা।

পুলিশ সকালে ঐ সব এলাকার বেশ ক’টি সড়ক বন্ধ করে দিয়েছিল। বেলা ১১টায় আবার সড়কগুলো খুলে দেয়। দুপুর আড়াইটায় পুনরায় ঐ সব সড়ক বন্ধ করে দিলে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়ে পথচারী যাত্রী সাধারণ।

এদিকে খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নেয়া হবে, এমন খবরে পুলিশের কড়াকড়ির মধ্যেই মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে দুপুরের আগেই শতশত নেতাকর্মী ঢুকে পড়েন। বিকালে খালেদা জিয়াকে বহনকারী গাড়ি যখন হাসপাতালের কেবিন ব্লকের সামনে পৌঁছায়, তখন তুমুল বৃষ্টি পড়ছিল। এর মধ্যেই আগে থেকে জড়ো হওয়া নেতাকর্মীরা স্লোগান তোলেন। পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের থামানোর জন্য চারপাশে ব্যারিকেড দিয়ে রাখে। মহিলা পুলিশের সাথে ছাত্রদল নেত্রীদের ধস্তাধস্তির ঘটনাও ঘটে। বেগম খালেদা জিয়াকে আনার সময় রাস্তার দুইপাশে নেতাকর্মীরা দাঁড়িয়ে তাকে সম্মান জানান।

বিএনপি নেতাদের মধ্যে তখন উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা বারের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, নজরুল ইসলাম মঞ্জু, শামীমুর রহমান শামীম, শিরিন সুলতানা, হেলেন জেরিন খান, নাজিম উদ্দিন আলম, আবু নাসের মো: রহমাতুল্লাহ, আরিফা জেসমিন নাহীন, ছাত্রদলের রাজীব আহসান, মামুনুর রশীদ মামুন, আসাদুজ্জামান আসাদ, আবুল হাসান, মফিজুর রহমান আশিক, রাজিব আহসান পাপ্পু, আরিফা সুলতানা রুমা, নাদিয়া পাঠান পাপন, মুহাম্মদ এরশাদ খান, তানভীর আহমেদ খান ইকরাম এবং মহিলা দল, যুবদলসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতারা।

বিকাল বিকাল ৩টা ৪০ মিনিটে যখন সাদা রঙের একটি মিৎসুবিশি প্রাইভেট কারে (ডিএমপি ৭১৬০) বিএনপি চেয়ারপারসনকে কেবিন ব্লকের নিচে নিয়ে আসা হয়। এর আগেই দুটি হুইল চেয়ার নিয়ে সংশ্লিষ্টরা অপেক্ষা করছিলেন বেগম খালেদা জিয়াকে কেবিনে নিয়ে যাওয়ার জন্য। তখন বাইরে মুসলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল। এ সময় বেগম খালেদা জিয়াকে একনজর দেখার জন্য হাসপাতালের ভেতরে ও বাইরে শতাধিক চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং বিএনপির নেতাকর্মীরা অপেক্ষা করছিলেন।

যদিও মারমুখী পুলিশ কিছুক্ষণ পরপর তাদের দূরে সরিয়ে দিচ্ছিল। পুলিশ বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেককেই খালেদা জিয়ার কাছে ঘেঁষতে দেয়নি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী, খায়রুল কবির খোকন, শিরিন সুলতানা প্রমুখ। তবে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও তার স্ত্রী আফরোজা আব্বাস গেটে ঢুকলেও পুলিশ তাদের বাধা দেয়।

(জাস্ট নিউজ/একে/০৯৩৫ঘ.)