যতই দিন যাবে, রক্তপাত ততই বাড়বে: অলি আহমদ

যতই দিন যাবে, রক্তপাত ততই বাড়বে: অলি আহমদ


ঢাকা, ২৩ অক্টোবর (জাস্ট নিউজ) : আগামী দিনগুলো খুব কঠিন হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ২০ দলীয় জোটের শরিক দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রম। তিনি বলেছেন, দিনগুলো খুবই কঠিন। যতই দিন যাবে, ততই বিশৃঙ্খল হবে। যতই দিন যাবে, রক্তপাত বৃদ্ধি পাবে। বিরোধী দলগুলোকেও সংযত হতে হবে, সরকারকে নমনীয় হতে হবে।

মঙ্গলবার বিকালে বিভিন্ন ‘রাজনৈতিক দলের’ নেতাকর্মীদের এলডিপিতে যোগদান অনুষ্ঠানে কর্নেল (অব.) অলি আহমদ এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচনের জন্য আমি বঙ্গবন্ধু কন্যাকে অনুরোধ করব, রক্তপাত এড়ান। গালি দিয়ে, মন্দ কথা বলে, কাউকে শাসিয়ে, সমালোচনা করে সমস্যার সমাধান হবে না। বসেন, আলোচনা করেন।

অলি আহমদ বলেন, কীভাবে সুন্দর নির্বাচন হবে, প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল কীভাবে অংশগ্রহণ করবে, সবার জন্য কীভাবে সমান-সুযোগ নিশ্চিত করা হবে, এগুলো নিয়ে কথা বলার জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এখনো সময় আছে। বিপথগামী না হয়ে গালাগালি বন্ধ করে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে জাতীয় সমস্যা যেগুলো আছে, সেগুলো কীভাবে মীমাংসা করবেন- দুর্নীতিবাজদের কীভাবে ধরা হবে, সন্ত্রাসী, মাদকের সঙ্গে জড়িতদের কীভাবে ধরা হবে এসব নিয়ে ভাবার কথা বলেন।

এলডিপি সভাপতি বলেন, যারা দলীয় ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে টুঙ্গিপাড়ায় যায়, তারাই দেখবেন হঠাৎ করে উল্টোদিকে মোড় নিয়ে চলাফেরা করছে। এখনো সময় আছে, সঠিক পথে এসে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যাগুলো সমাধান করেন। জনগণকে আলোর পথ দেখান, রক্তপাত বন্ধ করেন।

অলি বলেন, এখন আমি ক্ষমতায় আছি, আমি হাজার কোটি টাকা চুরি করব কেউ আমাকে ধরতে পারবে না। যেই ক্ষমতা নেই, দুই টাকা চুরি করলেও তাকে জেলে নিয়ে যায়। এভাবে একটি দেশ চলতে পারে না।

তিনি বলেন, এখন দলীয় ভিত্তিতে নিয়োগ হচ্ছে, দলীয় ভিত্তিতে বিচারকাজ চলছে। আমি তো মনে করি এই সরকার যখন ক্ষমতা থেকে যাবে, এই জজেরা (বিচারকেরা) তাদের ফাঁসিরকাষ্টে ঝুলাবে, যাবজ্জীবন জেল দেবে, ১০-৫ বছর জেল দেবে। নিজের উদ্বেগের কথা জানিয়ে প্রবীণ এ রাজনীতিক বলেন, আগামী দিনগুলো খুবই কঠিন।

আমি বারবার কিন্তু দেশবাসীকে সাবধান করে দিচ্ছি, প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের প্রতি আমি সাবধান বাণী ঘোষণা করছি- আগামী দিনগুলো খুবই কঠিন। যতই দিন যাবে, ততই বিশৃঙ্খল হবে। যতই দিন যাবে, রক্তপাত বৃদ্ধি পাবে। বিরোধী দলগুলোকে সংযত ও সরকারকে নমনীয় হতে হবে। সরকারকে আলোচনার জন্য এগিয়ে আসতে হবে।

অলি আহমদ বীরবিক্রম বলেন, কেউ যদি মনে করে, আমরা একাই দেশ চালাব, এটা হয় না। দেশ চালাতে হলে প্রত্যেকের অংশগ্রহণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কেউ বিরোধী দলে থাকবে, কেউ সরকার পরিচালনা করবে, এটাই নিয়ম। কিন্তু এটা কে সিদ্ধান্ত নেবে? সিদ্ধান্ত নেবে জনগণ।

তিনি বলেন, রাজনীতি দুর্নীতিগ্রস্ত, রাজনীতিবিদেরা দুর্নীতিগ্রস্ত। মানুষের যাওয়ার জায়গা নেই। একটি সৎ, সুন্দর রাজনীতি চায় মানুষ। জনগণের প্রতিনিধির মাধ্যমে সংসদ, সরকার গঠন করতে চায়, সরকার পরিচালনা করতে চায়। মানুষের সেই আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ হচ্ছে না। আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম, আমাদের একটি লক্ষ্য ছিল- সেই লক্ষ্য আজও পূরণ হয়নি। আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত আছে।

সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে এলডিপি সভাপতি বলেন, আমরা যদি অন্যায়ভাবে ভোট চুরি করে এমপি নির্বাচিত হই, তাহলে আমরা নিজের বিবেকের কাছে যেভাবে দায়ী, জনগণের কাছে আমরা দায়ী। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর কয়েকটি সময় খুবই কঠিন ছিল, তার মধ্যে অন্যতম কঠিন সময় হলো ২০১৮ সাল।

অর্থনৈতিকভাবেও খুবই কঠিন। বাংলাদেশে এমন কোনো ব্যাংক নেই যেখানে তারল্য সংকট নেই। দুর্নীতির মাধ্যমে অনেক ব্যাংকের মূলধন পর্যন্ত চলে গেছে। লাখ-লাখ, হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। বিগত ২০ বছরে যারা বিদেশে টাকা পাচার করছে, যারা সেকেন্ড হোম (বাড়ি) করেছে মালয়েশিয়া ও অন্যান্য দেশে, তাদের বিচারের আওতায় আনা হয়নি। কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

মাদকের বিষয়ে এলডিপির সভাপতি অলি বলেন, দক্ষিণ চট্টগ্রামে অনেক লোক আছে যারা মাদকের সঙ্গে জড়িত, তাদের নাম আমি জানি। তাদের ধরা হয়নি, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। যারা ২০টা, ৫০টা ইয়াবা ট্যাবলেট বিক্রি করে, তাদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। যারা শত শত কোটি টাকা নিয়ে ইয়াবা ব্যবসা করে, তাদের এখনো ধরা হয়নি। মাদক ব্যবসায়ীদের ধরা হয়নি। ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎকারীদের ধরা হয়নি। বিদেশে টাকা পাচারকারীদের ধরা হয়নি। বিগত দিনগুলোতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না।

অনুষ্ঠানে রাজধানীর ডেমরা, বাড্ডা এলাকার বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক কর্মী ও প্রাইম ইউনিভার্সিটির কয়েকজন শিক্ষার্থী এলডিপিতে যোগ দেন। এ সময় তাদের হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগত জানান এলডিপির প্রেসিডেন্ট অলি আহমদ ও মহাসচিব রেদওয়ান আহমদ। এ সময় এলডিপির প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল্লাহ, কামাল উদ্দিন মোস্তফা ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বক্তব্য দেন।

(জাস্ট নিউজ/একে/২১৪০ঘ.)