চট্টলার জনসমুদ্রে জাতীয় নেতৃবৃন্দ

‘সময় থাকতে ৭ দফা মেনে নিন, নইলে কঠোর শাস্তি’

‘সময় থাকতে ৭ দফা মেনে নিন, নইলে কঠোর শাস্তি’

চট্টগ্রাম, ২৭ অক্টোবর (জাস্ট নিউজ) : সরকারের প্রতি ঈঙ্গিত করে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতা, গণফোরাম সভাপতি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান নেতা ড. কামাল হোসেন বলেছেন, অনতিবিলম্বে ৭ দফা মেনে নিন নইলে ভবিষ্যতে যে শাস্তি আপনারা পাবেন তা কল্পনাও করতে পারবেন না।

শনিরাব বিকালে চট্টগ্রাম নূর আহম্মদ রোডে মহানগর বিএনপির কার্যালয়ের সামনে বিশাল জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন।

সরকারের পদত্যাগ, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন, বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির নিঃশর্ত মুক্তি এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মজলুম জননেতা তারেক রহমানের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ ৭ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে এ জনসভার আয়োজন করা হয়। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট চট্টগ্রাম শাখার উদ্যোগে এ জনসভা হয়।

জনসভায় সভাপতিত্ব করেন চট্রগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন। এর আগে ২৬ অক্টোবর চট্রগ্রাম বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় নসিমন ভবনের সামনে ২৫ শর্তে জনসভা করার অনুমতি দেয় মহানগর পুলিশ। জনসভা শুরুর আগে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ ঐক্যফ্রন্টের নেতারা হজরত শাহ আমানত (রহ.) এর মাজার জিয়ারত করেন।

ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চাওয়ার ব্যাপার নয়, এটা তো হওয়ার ব্যাপার। এটা আর কত চাওয়া হবে। চাইতে চাইতে তো মানুষ ক্লান্ত হয়ে গেছে। ওর মুক্তি অবশ্যই হোক।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান নেতা ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেন বলেন, '২০১৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত যত অন্যায় করেছেন সব কিছুর জবাবদীহি করতে হবে। জনগণ সকল ক্ষমতার মালিক। লালদীঘি মাঠে জনসভার অনুমতি না দিয়ে মালিকদেরকে কষ্ট দিয়েছে সরকার। এ জন্য সরকারকে কৈফিয়ত দিতে হবে। সঠিক কৈফিয়ত না পেলে সকলকে শাস্তির আওতায় আনা হবে।

প্রবীণ এই আইনজীবি বলেন, লালদীঘি কারো পৈত্রিক সম্পদ নয়। লালদীঘি মাঠে জনসভা করার অনুমতি না দেয়ার পেছনে যারা জড়িত ছিল তাদেরকে খুঁজে বের করা হবে। তিনি বলেন, সরকার একটার পর একটা অসাংবিধানিক কাজ করে যাচ্ছে। অসাংবিধানিক কাজ করে বর্তমান সরকার সাংবিধানিক শপথ ভঙ্গ করেছে। শপথ ভঙ্গকারীদের বিচার করে তাদেরকে শাস্তি দেয়া হবে। এ সরকারের সকল অপকর্মের বিচার একদিন না একদিন বাংলার মাটিতে হবে। বাংলাদেশ তাদের পৈত্রিক সম্পদ না। দেশের মালিক জনগণ। মালিক এবার সচেতন হয়েছে।

ড. কামাল হোসেন বলেন, জনগণ সকল বাধা উপেক্ষা করে নুর আহমদ সড়কের ছোট একটি জায়গায় ৪ ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকে কষ্ট করেছে। আমি বেঁচে থাকলে জনগণকে কষ্ট দেয়ার অপরাধে জড়িতদের বিরুদ্ধে কোর্টে মামলা করে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। জনসভা করার মৌলিক অধিকার নাগরিক হিসেবে জনগণের আছে। তিনি বলেন, আমরা স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে চাই। তিনি ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা দাবী মেনে নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান।

ড. কামাল হোসেন বলেন, দেশের মানুষ আজ নিরাপদ নেই। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হয়নি। ওই নির্বাচন সংবিধানবিরোধী হয়েছে। তাই এবার সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি আদায়ের লক্ষে ৭ দফা ঘোষণা করেছে ঐক্যফ্রন্ট। এই ৭ দফা আদায় না হলে ঐক্যফ্রন্ট ঘরে ফিরবে না। এটা গণমানুষের দাবি।

তিনি বলেন, যারা আমাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে, মনে করে তারা তো পার পেয়ে গেছে। এখন কে আমাদের বিচার করবে? ইনশাআল্লাহ, এবার ন্যূনতম যেটা আমাদের ৭ দফা দাবি, সময় থাকতে এগুলো মেনে নিন। কিন্তু, এটা অমান্য করলে বিচার হবে। ২০১৪ সাল থেকে সংবিধান লঙ্ঘন করার জবাবদিহিতা, সেটাও জনগণ আপনাদের থেকে আদায় করবে।

সিলেটে গণরায় হয়েছে উল্লেখ করে উপস্থিত জনতার উদ্দেশে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, আজকে আপনারা জানিয়ে দিন, যারা ক্ষমতা আকড়িয়ে বসে আছে তাদের। হাত উঁচু করে বলুন, আপনারা ৭ দফার পক্ষে আছেন কি না। আপনার রায় দিয়েছেন, এখানেও গণরায় হয়ে গেছে। এরপর আমরা রাজশাহীতে যাবো, শেষে ঢাকায় এটাকে আমরা সম্পন্ন করবো। এবার জনগণ যখন ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, অসম্ভবকে সম্ভব করেছে। আপনারা জেনে রাখুন, এই চিটাগং থেকে জনসভা করে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। অর্থাৎ এটা অসম্ভব না। এটা সম্ভব।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার ভয় পেয়েছে। তাই জনসভা করার জন্য আমাদেরকে লালদিঘী ময়দানে অনুমতি দেয়নি। এতো ভয় কেনো? জনগণকে আটকে রেখে কেউ ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। বন্দুকের জোরে কেউ ক্ষমতায় থাকতে পারেনি আপনারও পারবেন না। আমরা অন্যায়ের কাছে মাথানথ করবো না ৭ দফা দাবি আদায় করেই ঘরে ফিরবো। এই স্বৈরচারী সরকারকে বিদায় নিতেই হবে।

তিনি বলেন, সরকার জনগণকে দেখলেই নাশকতার কথা বলেন, নাশকতা তো আপনারা করছেন। আওয়ামী লীগ নাশকতাকারী। জনগণ যাকে খুশি তাকে ভোট দিবে। জনগণ ভোট দিতে পারলে জনগণ ভাঙ্গা নৌকায় আর কেউ উঠবে না।

নেতাকর্মীদের নির্যাতনের কথা উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের অনেক নেতাকে গুম করা হয়েছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে লাভ হবে না। মিথ্যা মামলা দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে সাজা দিয়ে নির্বাসিত করে রাখা হয়েছে। হাজার হাজার নেতাকর্মী আজ ও কারাগারে বন্দি, এই চট্টগ্রামের অনেক নেতাকর্মীকে হারিয়েছি এই স্বৈরাচার সরকারের শাসনকালে। জনগণ এই দুঃশাসন থেকে মুক্তি চায়।

জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, আমাদের ৭ দফা মানা ছাড়া, আমাদের সাথে আলাপ করা ছাড়া তফসিল যদি ঘোষণা করেন তাহলে বুঝব যে, আপনি ও আপনার সরকার নির্বাচন বানচাল করতে চান। আমরা নির্বাচন করতে চাই, বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে চাই। সরকারকে বলব, নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা করবেন না। তফসিল ঘোষণা আলোচনা না করে করলে, দেশের ১৬ কোটি মানুষকে যদি সংকটের ভেতরে ঠেলে দেন এর সমস্ত দায়-দায়িত্ব আপনাদের বহন করতে হবে। নেতা-কর্মীদের সতর্ক থাকার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনাদের হুঁশিয়ার থাকতে হবে। উস্কানি দেবে, ভেস্কি দেবে। সতর্ক থাকবেন। শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের এগুতে হবে। আমরা শান্তি চাই, আমরা ন্যায় বিচার চাই, গুম-খুন মিথ্যা ও গায়েবী মামলা প্রত্যাহার চাই। জাতীয় ঐক্যর সাথে সমস্ত পেশা ও ধর্মের মানুষ এক হয়েছে। সরকারকে বলব, ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে। ৭ দফা দাবি মেনে নিন। নইলে আপনাদের পালবার পথ থাকবে না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এই চট্টগ্রাম থেকে আমরা আন্দোলনের সূচনা করতে চাই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ফিরিয়ে আনতে এখান থেকে আন্দোলন করতে হবে। আন্দোলন ছাড়া বিকল্প নাই। এই স্বৈরাচার-ফ্যাসিস্ট সরকার আন্দোলন ছাড়া আমাদের দাবি মানবে না। তাই আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের নেত্রীকে মুক্তি করে তাকে সঙ্গে নিয়ে আমরা নির্বাচনে যাবো। এদেশে জনগণের সরকার ইনশাল্লাহ প্রতিষ্ঠা করবো। জনসভায় নেতা-কর্মীদের সমাগম কমাতে স্থানীয় জনপ্রাসন ও পুলিশ বাহিনীর ভূমিকার সমালোচনা করে তাদেরকে প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারি হিসেবে ‘নিরপেক্ষ’ ভাবে কাজ করার আহবান জানান।

তিনি বলেন, সরকার জাতীয় ঐক্য ও জনগণকে ভয় পায়। আজকে যে ক্রান্তিকাল তা থেকে উত্তরণের নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিযোগিতামূলক করতে হলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড করতে হবে। বিদেশী বন্ধু রাষ্ট্ররা বলেছেন, বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হতে হবে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপিসহ বিরোধী দল ছাড়া অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হতে পারে না। তাই আমরা চট্টগ্রাম থেকে যে মুক্তিযুদ্ধে শুরু হয়েছে, এই আন্দোলন শুরু করতে হবে।

গণস্বাস্থ্য সংস্থার ট্রাষ্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নিজের ছায়াকেও ভয় পায়। আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগকে ভয় পায়। আমি বলি প্রধানমন্ত্রী আপনি ভয় পাবেন না। ড. কামাল হোসেন আছেন, তিনি আপনাকে আইনী সহায়তা দিবেন। বেগম খালেদা জিয়াকে যে ভাবে হেনেস্তা করা হচ্ছে তেমনি যেন আপনার বেলায় না হয়। তিনি বলেন, ১০ দিনের মধ্যে পরিস্থিতি বদলে যাবে। বি. চৌধুরী ও কাদের সিদ্দিকীরা জাতীয় ঐক্যফ্রণ্টের সাথে যোগ দিবেন।



নাগরিক ঐক্যর সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, গদি ছাড়তে হবে, ভোট দেয়ার অধিকার দিতে হবে। আর যদি তা না হয়, তবে কীভাবে গদি থেকে নামাতে হয় তা জানি। বর্তমান সরকার সবসময় বলার চেষ্টা করছে তাদের অধীনে নির্বাচন হবে। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, তোমাদের অধীন নির্বাচন হবে না। জাতীয় ঐক্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য একটাই এ সরকারের পতন চাই। আমাদের ঐক্য আছে, ঐক্য থাকবে। ধীরে ধীরে স্বাধীনতার বিরোধী শক্তি ছাড়া সবাই এই ঐক্যে শামিল হবেন।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ও ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর বলেন, এই আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ নয়। এটা তাজউদ্দীনের আওয়ামী লীগ নয়। এটা লুটপাটের আওয়ামী লীগ। গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য তাই ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্য করেছি। এই ঐক্য ক্ষমতার ঐক্য নয়, জনতার ঐক্য। তিনি আরো বলেন, সরকার যদি উন্নয়ন করে থাকে তাহলে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে এত ভয় পাচ্ছে কেন? উন্নয়ন হয়ে থাকলে মানুষকে এত ভয় কেন! তাহলে বুঝতে হবে, ডাল ম্যা কুচ কালা হ্যায়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, গণতন্ত্র ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া একই সূত্রে গাঁথা। বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পেলে গণতন্ত্র মুক্তি পাবে, গণতন্ত্র মুক্তি পেলে দেশের মানুষ মুক্তি পাবে। তিনি বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মাধ্যমে সরকারকে সংলাপে বসতে বাধ্য করা হবে। আওয়ামী লীগ একটি স্বৈরাচারী রাজনৈতিক দল। তাদের অগণতান্ত্রিক আচরণের কারণে আইনের শাসন গণমাধ্যমের শাসন আমরা হারিয়েছি। আমরা এই জাতীয় ফ্রন্টের মাধ্যমে সরকারকে সংলাপে বসতে বাধ্য করা হবে। এই ঐক্যফ্রন্টের মাধ্যমে তাদের পতনও ত্বরান্বিত হবে। তিনি বলেন, যে কোনো স্বৈরাচার সরকারকে অপসারণের জন্য এই জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন। আমরা সফলভাবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেছি। ঐক্যের মাধ্যমেই গণতন্ত্র ফিরিয়ে আসবে। আর সরকার সংলাপে না বসলে দেশে যে অরাজকতা হবে তার জন্য তারা দায়ী থাকবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, আজকে দেশ ও গণতন্ত্র এক জায়গায় বন্দি। বেগম খালেদা জিয়া বন্দি। তিনি বন্দি থাকলে গণতন্ত্র চলতে পারে না। তিনি হলেন- গণতন্ত্রের নেত্রী। তাকে মুক্ত করতে হবে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের বাঁধ ভাঙ্গা জোয়ার শুরু হয়েছে। এই বাঁধ ভাঙ্গা জোয়ারে সরকার পালিয়ে যাবে। তখন গণতন্ত্র ও বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি লাভ করবেন।



বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান আব্দল্লাহ আল নোমান বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মতো কারচুপির জাতীয় নির্বাচন আমরা এই দেশে আর হতে দেবো না। স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েই আমরা গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবো। সরকারের প্রতি তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘চট্টগ্রামের মাটি বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের ঘাঁটি। এই মাটি থেকেই শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান মহান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এবার অবৈধ সরকার পতনের আন্দোলনও এই মাটি থেকেই শুরু করা হবে। জাতীয় ঐক্য গঠনের পর সরকার দিশেহারা হয়ে গেছে। দেশের মানুষ সরকারের পতন চায় দাবি করে তিনি আরো বলেন, ‘ভোটে আলোচনায় অথবা যেকোনো পন্থায় দেশের মানুষ এই অবৈধ সরকারের পতন চায়।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এবং সাবেক বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা না মানা পর্যন্ত এবং কারান্তরীণ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গুলশান কার্যালয়ে না আসা পযন্ত এই দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষণ দেখেছেন?’ এ সময় নেতাকর্মীরা না সূচক উত্তর দেন। তিনি বলেন, এ জনসমুদ্রের মাঝেও পুলিশ চারপাশে অবস্থান নিয়েছে। এটা সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষণ নয়। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি আরো বলেন, ‘ভয় নেই, ভয়ের কোনো কারণ নেই, পুরানো কারাগারে যদি স্বাধীনতার ঘোষকের স্ত্রী আপোষহীন নেত্রী থাকতে পারে তাহলে আমরাও কারাগারে যেতে প্রস্তুতি আছি।

জনসভার মঞ্চে লেখা ছিলো- ‘‘অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন, ‘মাদার অব ডেমোক্রেসী’ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও সকল রাজবন্দির নিঃশর্ত মুক্তিসহ ৭ দফা দাবি’। মঞ্চের পাশে টানানো হয়েছে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে রায় বাতিলের দাবি সম্বলিত ডিজিটাল ব্যানার।

জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে আসা নেতা-কর্মীদের কারো কারো হাতে রয়েছে কারান্তরীণ বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী, মহানগর সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, ভারতের মেঘালয়ে বন্দি সালাহউদ্দিন আহমেদসহ স্থানীয় নেতাদের ছবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড।

জনসভায় জনতার ঢল
সংসদ ভেঙে দেয়া, নির্বাচনকালীন সরকার গঠন, নির্বাচন কমিশন পূনর্গঠন, নির্বাচনের সময়ে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনসহ ৭ দফা দাবিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের চট্টগ্রামের জনসভায় জনতার ঢল নামে। শনিবার পুলিশি বাধা, হামলা গ্রেফতার উপেক্ষা করে জনসভায় যোগ দেয় বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ছাড়াও সুশীল সমাজ ও বিভিন্ন পেশা শ্রেণীর মানুষ জনসভায় যোগ দেয়। চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলা, আনোয়ারা, পটিয়া, হাটহাজারী, বোয়ালখালী, বাশখালী, সাতকানিয়া, সিতাকুন্ড, মিরসরাই থেকে জনগণ দুপরের আগেই মাঠপ্রাঙ্গণে আসতে থাকে। অনেকে আবার আগের দিন বিভিন্ন এলাকা থেকে এসেও চট্রগ্রাম শহরে অবস্থান নেয়। দুপুর ১২টার আগেই নেতাকর্মীরা বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আসতে থাকে। এক সময় নছিমন ভবনের সামনের সড়ক ছাপিয়ে পুরো এলাকা পরিণত হয় জনসমুদ্রে। সমাবেশস্থলে উপস্থিত হওয়া সকলেই দুর্নীতিবাজ, স্বৈরাচারী সরকার বিদায় চাই, নিতে হবে, ‘খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই, মুক্তি চাই’, ‘খালেদা জিয়ার কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে’, ‘আমার নেত্রী আমার মা বন্দি থাকতে দিবো না’, ‘তারেক রহমানের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকে। জনসভা উপলক্ষে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সড়ক থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা:শাহাদত হোসেনের সভাপতিত্বে এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এস এম সাইফুল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন চৌধুরী লিটন, সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুল ইসলামের যৌথ সঞ্চালনায় জনসভায় আরো বক্তব্য রাখেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, বরকত উল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টার আমানউল্লাহ আমান, ফজলুর রহমান, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, ড. সুকোমল বড়ুয়া, গোলাম আকবর খন্দকার, এসএম ফজলুল হক, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, খায়রুল কবির খোকন, প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, গণফোরামের মোস্তফা মহসিন মন্টু, সুব্রত চৌধুরী, আওম শফিকউল্লাহ, একেএম জগলুল হায়দার আফ্রিক, জানে আলম, জেএসডির তানিয়া রব, আবদুল মালেক রতন, বেলাল আহমেদ, শফিক উদ্দিন স্বপন, গোলাম জিলানী, নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার, সোহরাব হোসেন, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সুলতান মো. মনসুর আহমেদ, আবম মোস্তফা আমিন প্রমুখ।

আরো বক্তব্য রাখেন ২০ দলীয় জোটের শরিক কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, এলডিপির ড. রেদোয়ান আহমেদ, সাহাদাত হোসেন সেলিম, জাতীয় পার্টির আহসান হাবিব লিংকন, বৃহত্তর চট্টগ্রামের সাবেক সাংসদ জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, শাহজাহান চৌধুরী, ওয়াদুদ ভুঁইয়া, লুৎফর রহমান কাজল, গাজী শাহজাহান জুয়েল, ম্যামা চিং, বিএনপি নেত্রী রেহানা আখতার রানু, নুরে আরা সাফা, সাকিলা ফারজানা, কোরবান আলী, আবু সুফিয়ান, ভিপি নাজিম উদ্দিন, শাহ আলম প্রমুখ।

এছাড়াও জনসভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. মামুন আহমেদ, খেলাফত মজলিশের এম এ রকিব, মাওলানা মজিবুর রহমান, বিকল্পধারা মহাসচিব শাহ আহমেদ বাদল, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা শওকত আমীন, গণফোরামের মোশতাক আহমেদ, নাগরিক ঐক্যের জাহিদুর রহমান, গণফোরামের রফিকুল ইসলাম পথিক, আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সানা উল্লাহ মিয়া, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, ব্যারিস্টার মীর হেলাল, রফিক শিকদার, ড. দীপেন দেওয়ান, ফোরকান ই আলম, গাজীপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ভিপি ইব্রাহিমসহ লক্ষ্যাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

(জাস্ট নিউজ/একে/২০০০ঘ.)