ব্যারিস্টার মইনুলের জন্য ডিভিশন চাইতে হবে কেন? প্রশ্ন ড. কামালের

ব্যারিস্টার মইনুলের জন্য ডিভিশন চাইতে হবে কেন? প্রশ্ন ড. কামালের

ঢাকা, ২৮ অক্টোবর (জাস্ট নিউজ) : মানহানির এক মামলায় গ্রেফতার সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন কারাগারে ডিভিশন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেছেন। রবিবার শুনানি শেষে এ বিষয়ে আদেশের জন্য সোমবার দিন ধার্য করেছেন আদালত।

এদিকে শুনানিতে ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের জন্য কেন ডিভিশন চেয়ে আবেদন করতে হবে? রাষ্ট্র নিজে থেকেইতো ডিভিশন দেয়ার কথা। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য এই বাংলাদেশে আজ মানিক মিয়ার ছেলেকে ডিভিশনের জন্য আবেদন করতে হচ্ছে।

মইনুল হোসেনের সহধর্মিনী সাজু হোসেনের করা এক আবেদনের ওপর শুনানি শেষে রবিবার বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ আদেশের জন্য সোমবার দিন ধার্য করেন।

আদালতে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের পক্ষে শুনানি করেন ড. কামাল হোসেন ও খন্দকার মাহবুব হোসেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেসুর রহমান।

শুনানিতে ড. কামাল হোসেন বলেন, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে যে মামলায় কারাগারে পাঠানো হয়েছে সেটা জামিনযোগ্য। তারপরও তাকে জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন সাবেক সংসদ সদস্য, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি। তিনি দৈনিক ইত্তেফাকের মালিক তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার ছেলে। এই মানিক মিয়া বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কারাগারে ছিলেন। তার নামে মানিক মিয়া এভিনিউ করা হয়েছে। অথচ তাকে কারাগারে ডিভিশন না দিয়ে সাধারণ কয়েদির সঙ্গে রাখা হয়েছে।

এ সময় আদালত রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্য জানতে চেয়ে বলেন, মি. ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল। এটা কী হচ্ছে? সামান্য একটি বিষয় নিয়ে কী আমাদের হস্তক্ষেপ করতে হবে? জেলার (তত্ত্বাবধায়ক) কোন এখতিয়ার বলে বলেন যে তাকে সাধারণ হাজতিদের সঙ্গে রাখা হবে?

এরপর অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতে উপস্থিত হয়ে বলেন, আইন অনুযায়ী- বিচারিক হাকিম আদালত এ বিষয়ে আদেশ দেবেন। সরাসরি হাইকোর্টে আসার সুযোগ নেই। এছাড়া হাকিম আদালতের কোনো আদেশের কপি এখানে নেই। তাই এটা অসম্পূর্ণ আবেদন।

এ সময় খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ঢাকার হাকিম আদালতের আদেশের পর আমরা রংপুর আদালতে ডিভিশন চেয়ে আবেদন করেছি। কিন্তু কোনো লিখিত আদেশ দেয়নি ওই আদালত। ফলে এখানে তা দিতে পারিনি।

এ সময় আদালত অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে জানতে চান, মইনুল হোসেনকে ডিভিশন দেয়া যায় কিনা? জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আইন অনুযায়ী বিষয়টি দেখবে বিচারিক আদালত।

এ সময় খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, উচ্চপর্যায় থেকে বলা হলো- মামলা করেন। আমরা দেখব। এটা বলার পরই দেশের বিভিন্ন স্থানে একের পর এক মামলা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, এ পর্যন্ত ১৮টি মামলা হয়েছে বলে শুনেছি। আমরা তো তার জামিন চাচ্ছি না। আমাদের আবেদন ডিভিশনের জন্য। শুনানি শেষে আদালত আদেশের জন্য সোমবার দিন ধার্য করেন।

গত ১৬ অক্টোবর রাতে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের টকশোতে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে জামায়াতের প্রতিনিধি বললে তিনি সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে বলেন ‘আপনাকে চরিত্রহীন বলে মনে করতে চাই’ বলে মন্তব্য করেন।

এ ঘটনায় মাসুদা ভাট্টিসহ নারী সাংবাদিকরা মইনুল হোসেনকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান।

মইনুল হোসেনের মন্তব্যকে নারী সমাজের জন্য অবমাননাকর দাবি করে একই অভিযোগে তার বিরুদ্ধে জামালপুরের আদালতেও মামলা করেন একজন নারী। যদিও ওই দুটি মামলায় তিনি উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেন।

এ ছাড়াও একই ঘটনায় কুড়িগ্রাম ও রংপুরের আদালতেও পৃথক মামলা হয়। এর মধ্যে রংপুরের মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।

পরে গত ২৩ অক্টোবর মইনুল হোসেনকে আদালতে হাজির করা হলে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কায়সারুল ইসলাম।

এরপর সেদিন বিকালে ঢাকার কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয় ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে। সেখানে মইনুলকে সাধারণ হাজতির মতো রাখা হয়।

(জাস্ট নিউজ/একে/২১১০ঘ.)