কেউ চাইলেও বিএনপিকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখতে পারবে না: খালেদা জিয়া

কেউ চাইলেও বিএনপিকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখতে পারবে না: খালেদা জিয়া

ঢাকা, ২ জানুয়ারি (জাস্ট নিউজ) : বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, বিএনপি নির্বাচনে যাবেই। চাইলেও বিএনপিকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখা যাবে না। নির্বাচন হবে। আমরা নির্বাচন করব। কিন্তু সে নির্বাচনটি হতে হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। হাসিনার অধীনে নয়। সেই নির্বাচনই এই দেশে হবে। কারণ, সারা পৃথিবী বুঝে গেছে হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি, হবে না। সেটা মানুষ বুঝেছে।

বেগম খালেদা জিয়া বলেন, এই সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। ভোটে নির্বাচিত নয় বলেই তাদের অধীনে নির্বাচন হতে পারে না। আজকে পার্লামেন্ট বলে কিছুই নেই। হাসিনারা ক্ষমতায় থাকার জন্য পার্লামেন্ট রেখে নির্বাচন করার ব্যবস্থা করেছিল। ২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচনে এরা কেউ ভোটই পাননি। এরা পার্লামেন্টের মেম্বার থাকার যোগ্য নন। কাজেই পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে নির্বাচন দিতে হবে।

সরকার যদি মনে করেন আমাদের নেতাকার্মীদের গ্রেপ্তার করে তারপর নির্বাচন দেবেন, সেটা হবে না। বিএনপি চেয়ারপারসন আরো বলেন, বাংলাদেশ এখন পুরোটাই কারাগার। আমরা সবাই বন্দি। একমাত্র মুক্ত আছেন শেখ হাসিনা।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষির্কীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বেগম খালেদা জিয়া বলেন, দেশে গণতন্ত্র নেই, বৈধ সরকার নেই, আইনের শাসন, কথা বলার অধিকার নেই। তার প্রমাণ একটু আগে দেখলাম। অনেকদিন ধরে ছাত্ররা আলোচনা সভার প্রস্তুতি নিয়েছে। অনুমতি দিয়েছে, ভাড়াও নিয়েছে। অথচ হঠাৎ করে হলরুমে তালা লাগিয়ে দিলো। এটা কেমন আচরণ? আজকে দেশ এক ব্যক্তির দখলে। দেশ পিছিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ তার জন্য দায়ী। গুম, খুন বেড়েছে, দ্রব্য মূল্য বেড়েছে। মানুষের অভাবের শেষ নেই।

সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগকে মানুষ বিশ্বাস করে না। আওয়ামী লীগ যতবার ক্ষমতায় এসেছে অন্যের কাঁধে ভর করে। অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসে মানুষ নির্যাতন করছে। বিএনপি মানুষের ভোটে ক্ষমতায় আসে। অন্যের ওপর নির্ভর করে নয়।

বেগম খালেদা জিয়া বলেন, মানুষের দুঃখের সীমা নেই। তার জন্য আওয়ামী লীগ দায়ী। সে জন্য তাদের চলে যেতে হবে। নতুন যে কোনো সরকার আসতে হবে। পরিবর্তন আসতে হবে। সে জন্য একটি নিরপেক্ষ সহায়ক সরকার লাগবে।

বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, পদ্মা সেতুর স্বপ্ন দেখাচ্ছে সরকার। কিন্তু পদ্মা সেতু আওয়ামী লীগের আমলে হবে না। এ সেতু জোড়া তালি দিয়ে বানানো হচ্ছে। এ সেতুতে কেউ উঠবেন না।

বেগম খালেদা জিয়া বলেন, ভারত আমাদেরকে স্বাধীনতার সময় সাহায্য করেছে। ভারতকে আমরা বন্ধুর মতো দেখতে চাই। বন্ধু হয়ে থাকতে চাই সবসময়। তিনি বলেন, দেশের পুলিশ খারাপ নয়, আওয়ামী লীগ পুলিশকে খারাপ বানাচ্ছে। পুলিশ নিজেদের কাজ করুক। তবে আমার অনুরোধ, আমার ছেলেদের ধরবেন না। যারা জেলে আছে ছেড়ে দিন।

সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী আরো ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের শুধু ছবি তোলে আন্দোলনে আছে তা না দেখিয়ে মনপ্রাণ উজাড় করে আন্দোলনে নামার আহ্বান জানান। বেগম খালেদা জিয়া বলেন, তোমরা ঐক্য, ইমান, শৃংখলা ঠিক রাখলে সব কিছু জয় করা সম্ভব। শুধু স্লোগান দিলে হবে না। স্লোগানের ধারা পরিবর্তন করতে হবে। আগের স্লোগান দিলে হবে না সময়ের প্রেক্ষাপট অনুযায়ী তা পরিবর্তন করতে হবে। "তোমরা এগিয়ে চলো। ২০১৮ সাল হবে গণতন্ত্রের বছর"- বলেন খালেদা জিয়া।

এর আগে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট চত্বর পৌঁছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে তিনি সেখানে পৌঁছান।

ফটকে তালা দেয়ায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিউশনের চত্বরে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেয় ছাত্রদল। বিকালে সেখানে স্থাপন করা অস্থায়ী মঞ্চে বক্তব্য দেন বিএনপির কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। পরে বিক্ষোভের মুখে সমাবেশের জন্য ইঞ্জিনিয়ার ইন্সটিটিউশন মিলনায়তন খুলে দেয়া হয়।

এর আগে মঙ্গলবার বিকালে ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সমাবেশের অনুমতি থাকলেও মিলনায়তনের গেইট বন্ধ থাকায় ভেতরে ঢুকতে পারেননি ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। তাই ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট চত্বরে দুপুর থেকে বিক্ষোভ করে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।

প্রায় একমাস আগে অনুমতি নেয়া হলেও মঙ্গলবার সকালে হঠাৎ করে নিরাপত্তার কথা বলে অনুষ্ঠান করা যাবে না বলে কর্তৃপক্ষ ছাত্রদলের নেতাদের জানান। পরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নয়াপল্টনে সংবাদ সম্মেলন করে একথা জানিয়ে প্রশাসনের কাছে নির্বিঘ্নে সমাবেশ করতে সহযোগিতা কামনা করেন।

এদিকে বেলা ১১টার পর থেকেই ছাত্রদলের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা মিছিলসহ অনুষ্ঠানস্থলে আসতে থাকেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে।

খালেদা জিয়া আসার আগে বিকাল ৩টার দিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান আমান উল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সৈয়দ মুয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব উন নবী খান সোহেল, প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, সুলতান সালাউদ্দিন টুটু, শামা ওবায়েদসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা অনুষ্ঠানস্থলে আসেন।

(জাস্ট নিউজ/একে/১৯৫০ঘ.)