সংলাপ নিয়ে হতাশ বিএনপি বসছে বৈঠকে

সংলাপ নিয়ে হতাশ বিএনপি বসছে বৈঠকে

ঢাকা, ২ নভেম্বর (জাস্ট নিউজ) : সংলাপ নিয়ে কখনও আশাবাদী ছিল না বিএনপি। তবে দীর্ঘ আলোচনা শেষে তাদের হতাশা বেড়েছে আরও। প্রধান দাবিগুলোর সবগুলোই নাকচ হয়ে যাওয়ায় কৌশল নির্ধারণে নতুন করে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন দলটির নেতারা।

বৃহস্পতিবার রাতে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের যে নেতারা গণভবনে যান তাদের মধ্যে ছয় জন ছিলেন বিএনপির নেতা। সংলাপে যাওয়ার আগে ফ্রন্টের ঘোষিত সাত দফা দাবি নিয়ে আলোচনার কথা জানিয়ে যান নেতারা। তবে শেষমেশ প্রধান দাবিগুলো কার্যত নাচক করে দেন প্রধানমন্ত্রী। কেবল সভা সমাবেশে বাধা দেয়া হবে না বলে নিশ্চয়তা এসেছে সরকারপ্রধানের কাছ থেকে। এর বাইরে রাজনৈতিক মামলা বলে বিএনপি যেগুলো বলছে, সেগুলোর একটি তালিকা চেয়েছেন তিনি।

এর বাইরে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি আইন ও আদালতের বলে পাশ কাটিয়েছে আওয়ামী লীগ। ভোটে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সেনা মোতায়েনের বিষয়টিও মানা হয়নি। নির্বাচন কমিশন সীমিত আকারে ইভিএম ব্যবহারের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে আওয়ামী লীগের সমর্থন থাকবে বলেও জানানো হয়েছে।

ভোটের আগে সংবিধান ভেঙে দেয়ার দাবিও নাচক করা হয়েছে এই বলে যে, সংসদীয় গণতন্ত্র রয়েছে এমন দেশে সংসদ বহাল থাকা অবস্থানেই ভোট হয়। আর সরকারের পদত্যাগ করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে ভোটের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়নি বলেই জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

সংলাপে ঐক্যফ্রন্টের প্রতিনিধি হয়ে যাওয়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জমির উদ্দিন সরকার বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয় নিয়ে আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিলাম এবং আইনের বিষয়ও কোট করেও বলছিলাম। পরামর্শ দিয়েছিলাম সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু, বর্তমান আইনমন্ত্রী, স ম রেজাউল করিমদের সঙ্গে কথা বলে তাকে মুক্তির ব্যবস্থা করেন। তিনি নির্বাচনে কনটেস্ট করতে না পারলেও নির্বাচনটা গ্রহণযোগ্য হওয়ার ক্ষেত্রে সুবিধা হবে। কিন্তু সেটার বিষয়ে আইনের কথা বলে দিলেন তিনি (প্রধানমন্ত্রী)।

নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠক ও সেনা মোতায়েন নিয়ে কথা বলা হয়েছে। তারও তেমন কোরো সদুত্তর মেলেনি। সভা সমাবেশ করার ব্যাপারে কথা বলেছেন (প্রধানমন্ত্রী)। জানিয়েছেন, এ ক্ষেত্রে অনুমতি লাগবে না। কিন্তু সেটা করতে হবে মাঠে বা হলরুমে। রাস্তা আটকে সমাবেশ হবে না জানানো হয়েছে।কিন্তু সভা সমাবেশ করা তো আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। এটা নিয়ে আলাদা করে আশ্বাস কেন দিতে হবে?

‘নতুন করে মামলা হবে না এমনটাও বলা হয়েছে। তবে যারা আটক আছে তাদের মুক্তির বিষয়ে তার মনোভাব দেখলাম কঠোর।’

সংলাপে যাওয়ার আগেই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংশয়ে ছিলেন, আদৌ কোনো ফায়দা হবে কি না। সংলাপ শেষে বের হয়ে যাওয়ার সময় গণভবনের সামনেই গণমাধ্যমকর্মীদেরকে তিনি বলেন, ‘স্পষ্টভাবে আমরা সন্তুষ্ট নই।’

আবার গণভবনে ‘আলোচনা ভালো হয়েছে’ বললেও নিজ বাসায় গণমাধ্যমকর্মীদেরকে ড. কামাল বলেন, ‘আজকের সংলাপে বিশেষ সমাধান আমরা পাই নাই।’

ঐক্যফ্রন্ট তথা বিএনপির হতাশার কারণ জানিয়ে জমিরউদ্দিন সরকার বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম প্রধানমন্ত্রী সংসদ ভেঙে দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন। এটা তো ভেরি ইজি। কিন্তু সেটাও করেননি।’

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক জানিয়েছেন, ছোট পরিসরে আবার সংলাপ হতে পারে। তবে বিএনপি রাজি কি না- জানতে চাইলে জমিরউদ্দিন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যদি আমাদের ডাকেন তাহলে হয়ত যাওয়া যাবে। কিন্তু আমরা নিজেদের থেকে যেচে যাব বলে মনে হয় না এখন পর্যন্ত। '

বিএনপি কি তাহলে আবার আন্দোলনের দিকেই যাবে- এমন প্রশ্নে জবাব আসে, ‘দেখা যাক। সন্ধ্যায় মিটিং হবে। পরে জানতে পারবেন কী হবে।’

সংলাপে অংশ নেয়া আরেক জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘সংলাপের কিছু অর্জন আছে। যেমন সভা সমাবেশ করার ক্ষেত্রে সমস্যা করবে না সরকার, বিদেশি পর্যবেক্ষক নির্বাচন উপলক্ষ্যে কাজ করতে পারবে এসব বিষয়। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং সংসদ ভেঙে দেয়া তার তো কোনো সুরাহা হয়নি।’

(জাস্ট নিউজ/এমজে/১৬০০ঘ.)