নয়াপল্টনে তরিকুল ইসলামের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত

নয়াপল্টনে তরিকুল ইসলামের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত

ঢাকা, ৫ নভেম্বর (জাস্ট নিউজ) : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী তরিকুল ইসলামের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার সকাল ১০টা ২০ মিনিটে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

এরপর বিএনপির পক্ষ থেকে তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়। এসময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির কেন্দ্রীয়, মহানগরের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

এরপর বেলা সোয়া ১১টায় তার মরদেহ নেয়া হবে জাতীয় সংসদ ভবনে। দক্ষিণ প্লাজায় হবে দ্বিতীয় জানাজা। পরে মরদেহ হেলিকপ্টারে নেয়া হবে জন্মস্থান যশোরে। যশোর ঈদগা মাঠে তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এর পর পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।

এর আগে সকাল ১০টায় তরিকুল ইসলামের মরদেহ চিরপরিচিত নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নেয়া হয়।

রবিবার বিকাল ৫টা পাঁচ মিনিটে তিনি রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭২ বছর।

প্রবীণ এই রাজনীতিকের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

এর আগে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তরিকুল ইসলামকে ঢাকার অ্যাপেলো হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। তিনি দীর্ঘদিন ধরে কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন। তাকে কয়েক দিন আগে পুরান ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে অ্যাপেলো হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

যাশোর থেকে চার বার নির্বাচনে জিতে সংসদে যাওয়া তরিকুল ইসলাম চারদলীয় জোট সরকারের তথ্যমন্ত্রী এবং পরিবেশ ও বনমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটিতে আসার আগে তিনি সহ-সভাপতিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন।

তরিকুল ইসলামের লাশ নিজ জেলা যশোরে নেওয়া হবে। সেখানেই তাকে দাফন করা হবে।

প্রসঙ্গত, ১৯৪৬ সালের ১৬ নভেম্বর জন্ম নেন তরিকুল ইসলামের। তিনি বাংলাদেশ সরকারের সাবেক মন্ত্রী ৪ বারের মন্ত্রী। যশোর থেকে দৈনিক লোকসমাজ নামে একটি দৈনিক পত্রিকার প্রকাশক তিনি। তরিকুল ইসলাম দুই পুত্র সন্তানের জনক। স্ত্রী নারর্গিস ইসলাম তার অন্যতম রাজনৈতিক সহযোদ্ধা।

পারিবারিক ব্যবস্থাপনায় তরিকুল ইসলামের বাল্যশিক্ষা শুরু হয়। এরপর ১৯৫৩ সালে তিনি যশোর জিলা স্কুলে তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হন। একটানা আট বৎসর শিক্ষা গ্রহণের পর ১৯৬১ সালে তিনি এই স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৩ সালে তিনি যশোর মাইকেল মধুসূদন মহাবিদ্যালয় থেকে আই. এ. এবং ১৯৬৮ সালে একই কলেজ থেকে তিনি অর্থনীতিতে বি. এ. (অনার্স) ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৬৯ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অর্থনীতিতে এম. এ ডিগ্রী লাভ করেন।

যশোর মাইকেল মধুসূদন মহাবিদ্যালয়ের শহীদ মিনার জরাজীর্ণ হওয়ায় ১৯৬২ সালে সহপাঠীদের শহীদ মিনার তৈরি করে পাকিস্তান সামরিক সরকারের রোষানলে পড়েন, গ্রেফতারও হন।

কারাগারে কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের সঙ্গে পরিচয়। সেই সূত্রে দীক্ষা বাম রাজনীতিতে। ১৯৬৩-৬৪ শিক্ষাবর্ষে ছাত্র ইউনিয়নের প্রার্থী হিসেবে যশোর এমএম কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

১৯৬৮ সালে আইয়ুববিরোধী আন্দোলনের জন্য রাজবন্দি হিসেবে যশোর ও রাজশাহীতে কারাভোগ করেন দীর্ঘ ৯ মাস। ১৯৬৯ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গণআন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ায় গ্রেফতার হন।

১৯৭০ সালে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগ দেন তরিকুল। মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ন্যাপ থেকে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) হয়ে পরে বিএনপিতে যোগ দেন বরেণ্য এ রাজনীতিক।

মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে বিএনপির ৭৬ সদস্যের প্রথম আহ্বায়ক কমিটির অন্যতম সদস্য তরিকুল ইসলাম। সেই সঙ্গে বিএনপির যশোর জেলা আহ্বায়কের দায়িত্ব পান। ১৯৮০ সালে জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

এছাড়া বিভিন্ন সময়ে তিনি দলের যুগ্ম মহাসচিব, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব, ভাইস চেয়ারম্যান ও ২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত দলের পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলে স্থায়ী কমিটির সদস্য পদ লাভ করেন। দলের বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ করেছেন তিনি। চারদলীয় জোট সরকারের সময় তিনি তথ্য এবং পরিবেশ ও বনমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

(জাস্ট নিউজ/একে/১০৫৫ঘ.)