সংলাপে বাম গনতান্ত্রিক জোটের লিখিত বক্তব্য

সংলাপে বাম গনতান্ত্রিক জোটের লিখিত বক্তব্য

ঢাকা, ৬ নভেম্বর (জাস্ট নিউজ) : সংবিধানের মধ্যেই প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধনের ধারাও রয়েছে। সংসদ যেহেতু এখনও বহাল রয়েছে এবং সংসদে আপনাদের দুই তৃতীয়াংশের বেশী সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত থাকলে এই জন্যে আপনারা প্রয়োজনীয় সংশোধনীও নিয়ে আসতে পারেন। বর্তমান সামগ্রীক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য করতে আমরা আমাদের সুনির্দিষ্ট দাবিসমূহ আবারো উল্লেখ করছিঃ-

ক) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পূর্বে বর্তমান সরকারকে পদত্যাগ করে সব দল ও সমাজের অপরাপর মানুষের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তদারকি সরকার গঠন করতে হবে।

খ) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পূর্বে বর্তমান জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দিতে হবে।

গ) জনগণের আস্থাহীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে।

ঘ) সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা প্রবর্তনসহ টাকার খেলা, পেশীশক্তি, সাম্প্রদায়িকতা, প্রশাসনিক কারসাজি নির্ভর বিদ্যমান গোটা নির্বাচনী ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করতে হবে।

ঙ) আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিতর্কিত ইভিএম চালুর পাঁয়তারা বন্ধ করতে হবে।

চ) রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করার উদ্দেশ্যে নাশকতা ও বিশৃংখলার কারণ দেখিয়ে দেশব্যাপী যেসব মামলা দায়ের করা হয়েছে তা প্রত্যাহার করতে হবে। এসব মামলায় যে গণ-হয়রানি ও গ্রেফতার করা হচ্ছে অবিলম্বে তা বন্ধ করতে হবে। ৫৭ ধারায় রুজু করা মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেফতারকৃতদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে
হবে।

ছ) নির্বাচনের আগে অস্ত্র উদ্ধার, মাদক নির্মূল ও জঙ্গী সন্ত্রাসী গ্রেফতারের নামে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের হয়রানি ও গ্রেফতার বন্ধ করতে হবে।

জ) নাগরিকদের স্বাধীন মতপ্রকাশ, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা, মুক্ত ও অনুসদ্ধানী সাংবাদিকতার পরিপন্থী ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’ ও সম্প্রচার বিধিমালার অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক ধারাসমূহ বাতিল করতে হবে। নির্বাচনী ব্যবস্থার গণতান্ত্রিক সংস্কারের লক্ষ্যে ইতিমধ্যে আমরা একটি পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাবনা হাজির করেছি। তার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক সম্পর্কে আমরা আপনার মনযোগ আকর্ষণ করছি।

* এলাকাভিত্তিক বর্তমান প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থার পাশাপাশি ‘জাতীয়ভিত্তিক সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা’ প্রবর্তন করা।

* নির্বাচনে টাকার খেলা বন্ধ করা, প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যয়ের সর্বোচ্চ সীমা কমিয়ে ৩ লক্ষ টাকা ও জামানত ৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা।

* নির্বাচনে পেশীশক্তি, প্রশাসনিক কারসাজি ও সাম্প্রদায়িক প্রচারণা রোধ কল্পে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

* তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানসমূহ নির্বাচন কমিশনের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে রাখা।

* ‘না’ ভোটের বিধান চালু করা।

*আরপিও’র দল নিবন্ধনের অগণতান্ত্রিক শর্ত বাতিল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনের জন্য ১% ভোটারের সমর্থনসূচক স্বাক্ষরের বিধান বাতিল করা।

* অবাধ, নিরপেক্ষ ও ভীতিহীন নিরাপদ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠান ও নির্বাচনের আগে-পরে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রের সকল বাহিনীর কার্যকরি ও নিরপেক্ষ ভূমিকা নিশ্চিত করা।

** অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ নির্বাচনের উপরোক্ত দাবী ও প্রস্তাবাবলীর পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক, সাম্যভিত্তিক রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠায় নিম্নোক্ত বিষয়ে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও পদক্ষেপসমূহকেও আমরা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ মনে করি।

ক) সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ, বিশেষ ক্ষমতা আইন, ২য় ও ৮ম সংশোধনীসহ সংবিধানের স্বৈরতান্ত্রিক, সাম্প্রদায়িক, ক্ষুদ্র জাতিসত্বাবিরোধী সকল বিধান বাতিল করে সংবিধানের গণতান্ত্রিক বৈশিষ্ঠ্য নিশ্চিত করা। সাংবিধানিক কমিশনের মাধ্যমে সাংবিধানিক পদে নিয়োগের বিধান চালু করা। ৫৪ ধারা, ৫৭ ধারাসহ নিবর্তমূলক ও অগণতান্ত্রিক সকল আইন ও সার্বজনীন মৌলিক অধিকার পরিপন্থী সকল কালাকানুন বাতিল করা। সাংবিধানিক নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় আইন প্রনয়ন করে নির্বাচন কমিশন গঠন করা দরকার, যাতে নির্বাচন কমিশনকে ঘিরে অপ্রয়োজনীয় বিতর্ক এড়ানো যায়।

খ) বিচার বিভাগসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠাসমূহের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।

গ) সাম্প্রায়িক জঙ্গিগোষ্ঠীর অপতৎপরতা বন্ধ, ‘৭১ এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা।

ঘ) গুম-খুন, ক্রসফায়ার ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড অবিলম্বে বন্ধ করা। স্বাধীন কমিশন গঠনের মাধ্যমে প্রতিটি বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের গ্রহণযোগ্য তদন্ত, অপরাধিদের চিহ্নিত ও তাদের আইনানুগ বিচার নিশ্চিত করা। গণতান্ত্রিক আন্দোলনে পুলিশী হস্তক্ষেপ, পুলিশী ক্ষমতার অপপ্রেয়োগ, পুলিশের গ্রেফতার বাণিজ্য ও রিমান্ডের নামে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন অবিলম্বে বন্ধ করা।

ঙ) ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুসহ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিধান এবং ধর্মীয়, জাতিগত ও সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি ও হানা-হানির প্রচেষ্টা কঠোরভাবে দমন করা। এই পর্যন্ত সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হামলা-আক্রমনের ঘটনাসমূহের নিরপেক্ষ তদন্ত করে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা। ধর্মীয় ও জাতিগত ভিন্নতার কারণে নাগরিকদের মধ্যে বৈষম্য পুরোপুরি পরিহার করা।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/২৩৪০ঘ.)