ইভিএমকে না বলুন

জনগণ ভোট বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত : মির্জা আলমগীর

জনগণ ভোট বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত : মির্জা আলমগীর

ঢাকা, ২২ নভেম্বর (জাস্ট নিউজ) : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জনগণ ভোট বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। জনগণ ভোটযুদ্ধে লড়বে। তাদের কেউ আটকে রাখতে পারবে না।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গুলশান হোটেল লেকশোর এ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আয়োজনে ‘ইভিএমকে না বলুন আপনার ভোটকে সুরক্ষিত করুন’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ মন্তব্য করেন।

মির্জা আলমগীর বলেন, নির্বাচনে আমরা যাবো। জাতি নির্বাচনে যাবে। কিন্তু সেই নির্বাচনকে অবশ্যই জনগণের রায়ে পরিণত করতে হবে। জনগণ ভোটের লড়াই করবে, ভোটের যুদ্ধে লড়বে। সেখানে কোনো কিছুই তাদেরকে আটকে রাখতে পারবে না। ৩০ ডিসেম্বর ভোট বিপ্লব হবে।

বর্তমান সরকার ইসিকে আজ্ঞাবহ করে রেখেছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগ কারচুপির মাধ্যমে আবারো ক্ষমতায় আসতে সব ধরণের অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

এ সময় মির্জা আলমগীর বলেন, ‘রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া একটি দল আওয়ামী লীগ। তারা আবার ক্ষমতায় ফিরে আসার জন্যে জোর করে সব ধরনের অপকৌশল ব্যবহার করছে। ইভিএম তারই অংশ। নির্বাচন কমিশন নিজে থেকেই আজ্ঞাবহ হয়ে বসে আছে। সেজন্যে জনগণের কোনো কথায় তাদের কানে যাচ্ছে না।

বিএনপি মহাসচিব আরো বলেন, এই সরকার গণতান্ত্রিক স্পেসগুলো বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে একটি গণতান্ত্রিক দল হিসেবে বিএনপিকে কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। জটিল এক রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন। কিন্তু আমরা তো যুদ্ধ করনো না। যুদ্ধ করতে চাই না। তাদের মতো গণতন্ত্রের রাস্তা বন্ধ করতে চাই না। আমরা চাই গণতন্ত্র ফেরাতে। চাই গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে একটি শান্তিপূর্ণ নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন।

মির্জা আলমগীর বলেন, ‘আমরা যখন নির্বাচনে যাচ্ছি, তখনো আমাদের অসংখ্য নেতা কারাগারে রয়েছে। আমাদের প্রার্থী হওয়ার উপযুক্ত যারা, তারা কারাগারে রয়েছেন। গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এমনকি আমাদের নির্বাচনী মনোনয়ন প্রক্রিয়ার আসার পথে পথে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান সেমিনারে বলেন, ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে যদি নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হয়। কেননা সংবিধান বলা হয়েছে, ভোট সরাসরি হতে হবে। কিন্তু ইভিএম পরোক্ষ ভোট। পরোক্ষ ভোট হিসেবে ইভিএমে কীভাবে জালিয়াতি হতে পারে তার ব্যাখ্যা তুলে ধরেন তিনি।

মঈন খান আরো বলেন, ‘ধারণা করা হচ্ছে শতকরা ৮০ বা ৯০ ভাগ ভোটও বিএনপির বাক্সে পড়তে পারে। কিন্তু আপনি যদি তার দুটো খুলে উল্টা করে দেন মেশিনের ভেতরে; আপনি টিপ দেবেন এ, রেকর্ড হবে বি-তে। টিপ দেবেন এ-তে, রেকর্ড হবে বি-তে। অর্থাৎ আওয়ামী লীগের সব ভোট বিএনপিতে যাবে যা ১০ থেকে ২০ শতাংশ আর বিএনপির ৮০ শতাংশ দেখাবে আওয়ামী লীগের।’

সেমিনারে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, আমরা ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ইসি ও সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করবো। সংবিধানের কোথাও ইভিএম ব্যবহারের কথা উল্লে নেই। সংবিধানের ৬৫ অনুচ্ছেদের ২(ক) তে বলা আছে, সংসদ গঠন হবে প্রত্যক্ষ ভোটে। সংবিধানে ইংরেজিতে স্পষ্টভাবে ‘ডিরেক্ট’ শব্দটি উল্লেখ করা আছে, যার অর্থ প্রত্যক্ষ। ইভিএম প্রত্যক্ষ ভোটের আওতায় পড়ে না। নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা সংবিধান বিরোধী। তাই সংবিধান সংশোধন ছাড়া ইভিএম ব্যবহার করা যাবে না।

নির্বাচন কমিশনকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করতে ইভিএম কেন্দ্রগুলোতে নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

র‌্যাব, পুলিশ, সেনাবাহিনী, ডিবি, নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বলবো, আপনারা নিরপেক্ষ হন। নির্বাচনের পর দেশে আপনারা থাকবেন, আমরাও থাকবো। আপনাদের ভূমিকার জন্য জনগণের কাছে জবাব দিতে হবে।

ইভিএম সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনের সুস্পষ্ট ধারণা নেই দাবি করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা ও বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ইসির উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘আগে নিজেরা ইভিএম চালানো শিখুন, পরে অন্যকে শেখান।’

বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর লেকশোর হোটেলে ‘ইভিএমকে না বলুন আপনার ভোট সুরক্ষিত করুন’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী আরো বলেন, ‘ইভিএম যারা এনেছে তারাও এর ব্যবহার ঠিকমতো জানে না, যারা ভোট দেবে তারা কখনো ইভিএম দেখেইনি। একজন নাগরিকের ইচ্ছেমতো, পছন্দমতো ভোট দেয়ার অধিকার আছে। কিন্তু যে যন্ত্র জনগণ কখনো দেখেনি সেটা স্পর্শ করলে যে ভোট হবে এটা তারা বিশ্বাস করতে পারে না।’

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, যারা ৫ জানুয়ারি উড়ে এসে চাপ দিয়ে নির্বাচন করতে বাধ্য করেছে, তারাও বলেছে এবার আর প্রহসনের নির্বাচন মানবে না। আমরা আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছি।

তিনি বলেন, বিনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদের মতো প্রতিদিন যদি একটা ব্রিফিং করা যেত, তাহলে সরকার যে কতরকম বদমাইশি করছে তা বলা যেত। তারা যে পাপ করেছে, সেটার বোঝা বহন করতে হবে।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, দেশকে যদি শান্তির পথে রাখতে হয়, তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচন দরকার। সুষ্ঠু নির্বাচনে ইসির ভয় কীসের। কমিশনকে বলেছি, তারা কতটি ইভিএম ব্যবহার করবে, তারা বলেছে, সীমিত আকারে, এটা কোনো সংখ্যা নেই। সহজেই বোঝা যায়, তাদের মতলব খারাপ। জনগণকে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেন, তা না হলে লুকিয়ে থেকেও রেহাই পাবেন না।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, কোনো প্রতিষ্ঠানের উপর আস্থা রাখতে হয়, তাদের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা থাকতে হয়। সেখানে স্বচ্ছতা নেই বলেই ইসির উপর আস্থা রাখতে পারছি না।

সুব্রত চৌধুরী বলেন, ইভিএম মহা ভোট ডাকাতির পদ্ধতি। মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে বোকা বানিয়ে ইভিএমের উপর ভর করে আবারো ক্ষমতায় থাকতে চায়।

এর আগে ইভিএমের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নানাভাবে ভোট জালিয়াতির কয়েকটি নমুনা দেখান বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল ও দলের তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ দল।

(জাস্ট নিউজ/একে/২০১৫ঘ.)