‘জনগণের বুকে গুলি চালাবেন না’

ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে বেরিয়ে আসুন: তারেক রহমান

ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে বেরিয়ে আসুন: তারেক রহমান

লন্ডন, ২৭ নভেম্বর (জাস্ট নিউজ) : দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বিএপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মজলুম জননেতা তারেক রহমান বলেছেন, নিজেদের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় সকল ভয়ভীতি উপেক্ষা করে দলে দলে ঘর থেকে বেরিয়ে আসুন। জনগণের বিজয় সুনিশ্চিত ইনশাআল্লাহ। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে, ভোট ডাকাতির সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এবার আমরা অবশ্যই বিজয়ী হবো ইনশাআল্লাহ। অবশ্যই 'খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন, মুক্তি পাবে গণতন্ত্র।

মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় বেলা ১১টায় লন্ডন থেকে এক জাতির উদ্দেশ্যে এক ভাষণে তারেক রহমান এই আহবান জানান। তার ভাষণটি ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একযোগে প্রচারিত হয়।

দেশনায়ক তারেক রহমান সবরকম দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ভুলে হিমালয়ের মতো সুদৃঢ়-ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তোলার জন্য সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে যারা বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন কিংবা যারা মনোনয়ন পাননি, সবাই কি আমরা পারি না -সেই কারাবন্দি মা'য়ের কথা মনে রেখে সবরকম দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ভুলে অন্তত আগামী ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিজেদের ঐক্যকে হিমালয়ের মতো সুদৃঢ় এবং ইস্পাতের মতো কঠিন রূপে গড়ে তুলতে? সারাদেশে আমার দলের সর্বস্তরের হাজার হাজার হাজার নেতা, লক্ষ লক্ষ কর্মী, কোটি কোটি ধানের শীষের ভোটার, একমাত্র আপনাদের ঐক্য এবং দৃঢ় প্রত্যয়ই পারে আপনার নেত্রীকে মুক্ত করতে, একমাত্র আপনাদের ঐক্য এবং দৃঢ় প্রত্যয়ই পারে কারাবন্দি মা'কে মুক্ত করতে। আজ কি আমরা অন্তত একবারের জন্য, আর একটি বারের জন্য কি পারি না, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিজেদের সকল প্রকার রাজনৈতিক চাওয়া পাওয়া ভুলে মা'য়ের মুক্তির জন্য- গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে?
তৃণমূলের আমার প্রিয় ভাই ভাই বোনেরা, আমরা কি অন্তত একবারের জন্য আর একটি বারের জন্য কি পারি না, শুধুমাত্র আগামী কয়টি দিনের জন্য নিজেদের চাওয়া পাওয়া ভুলে উর্ধে উঠে দেশের জন্য-গণতন্ত্রের জন্য মা'য়ের মুক্তিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে?

তারেক রহমান আসন্ন নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীবৃন্দের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদের ঐক্য এবং দৃঢ় প্রত্যয়ই পারে জালিমের কারাগারে নিরপরাধ হাজার হাজার ভাইবোনকে মুক্ত করতে, আপনাদের ঐক্য এবং দৃঢ় প্রত্যয়ই পারে ভোট কেন্দ্রগুলোতে ভোট ডাকাতি রোধ করতে, আপনাদের ঐক্য এবং দৃঢ় প্রত্যয়ই পারে প্রতিটি ব্যালট বাক্সকে নিরাপদ রাখতে। এই 'ধানের শীষ' এখন জাতীয় ঐক্যের প্রতীক।

তিনি বলেন, এবারের নির্বাচনে পাওয়া না পাওয়ার দ্বন্দ্বে যদি আমরা জড়িয়ে পড়ি, আমরা যদি বিবাদ বিরোধে জড়িয়ে পড়ি, মা'য়ের মুক্তি-গণতন্ত্রের মুক্তির স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ থাকতে না পারি তাহলে ক্ষমতাসীন অপশক্তি আবারো গায়েবি মামলা কিংবা আদালতের রায়ের অজুহাত দেখিয়ে অত্যাচার নির্যাতনের মাত্রা বহুগুন বাড়িয়ে দেবে। যারা সকল অন্যায় অত্যাচার মোকাবেলা করে নিজেদের প্রস্তুত করে গড়ে তুলেছেন আপনারাসহ সকল নেতাকর্মীকে আরো বেশি নির্মম নিষ্ঠুরতার নিষ্ঠুরতার মধ্যে ফেলে দেবে। সম্ভাব্য সকল পরিস্থিতি বিবেচনা করে দল একজনকেই মনোনয়ন দিতে পারবে। এই মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে হয়তো আমাদের 'এরর অফ জাজমেন্ট' থাকতে পারে। তারপরও আমি আপনাদের ভাই হিসেবে, আপনাদের সন্তানতুল্য হিসেবে দেশের প্রতিটি নির্বাচনী এলাকার আমার দলের সর্বস্তরের প্রতিটি নেতা কর্মী সমর্থকের কাছে আমার একান্ত অনুরোধ কারাবন্দি মায়ের মুক্তির কথা বিবেচনা করে দলের সিদ্ধান্তকে আপনারা সর্বশক্তি দিয়ে বাস্তবায়ন করবেন। দলের ওপর, দেশনেত্রীর ওপর আস্থা রাখুন। আমি কথা দিচ্ছি, দেশে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে অবশ্যই রাজনৈতিকভাবে আপনাদের প্রত্যেকের ত্যাগ তিতিক্ষা যোগ্যতার সর্ব্বোচ্চ মূল্যায়ন করা হবে।

দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে তারেক রহমান বলেন, ক্ষমতাসীন অপশক্তি এবং তাদের দোসররা আমাদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি এবং ঐক্য নষ্টের নানারকম ষড়যন্ত্র ও অপকৌশল অবলম্বন করছে এবং করবে। এ কারণেই আমাদেরকে সাহস ও সতর্কতার সঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে। এই অপশক্তি সোশ্যাল মিডিয়া কিংবা বিভিন্ন গণমাধ্যমে আমাদের সম্পর্কে, আমাদের প্রার্থী সম্পর্কে এবং আমাদের বিভিন্ন নেতাকর্মী সম্পর্কে বিভিন্ন প্রকার মিথ্যা, কাল্পনিক ও বানোয়াটি খবর কিংবা ছবি প্রকাশের মাধ্যমে জনগণ ও আপনাদেরকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবে।

তিনি সরকারী প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভয় দিয়ে বলেন, ক্ষমতাসীন অপশক্তি এবং তাদের দোসররা মিথ্যে কথা ছড়িয়ে দিয়ে প্রশাসনকেও বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবে। আমি আগেও বলেছি, আবারো বলছি, আমাদের দল সরকার গঠন করলে অন্যায়ভাবে অথবা রাজনৈতিক কারণে কোনো সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারীর চাকরি যাবে না। প্রশাসনে যাদেরকে বর্তমান অবৈধ সরকার অপকর্ম করতে বাধ্য করেছে কিংবা এখনো করছে তাদের সামনে একটি সুযোগ এসেছে।

এ দেশ আপনাদেরই, এ দেশের জনগণ আপনাদেরই পরিবারেরই অংশ। তাই জনগণের ইচ্ছের বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন না। গণতন্ত্রের বিপক্ষে দাঁড়াবেন না। জন প্রশাসনের বিধিবদ্ধ আইনকে উপেক্ষা করবেন না। জনগণের বুকে গুলি চালাবেন না। তিনি বলেন, বর্তমান অবৈধ ক্ষমতাসীনরা সারাদেশে ভয়ের সংস্কৃতি চালু করেছে। বিএনপির পক্ষ থেকে আমি দেশবাসীকে কথা দিচ্ছি বিএনপি তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সরকার গঠন করলে দেশ থেকে এই ভয়ের সংস্কৃতি অবশ্যই দূর করা হবে। মানুষ নির্ভয়ে কথা বলবে, নিরাপদে স্বাধীন ও দেশের সম্মানিত নাগরিক হিসেবে দেশের ভেতর বুক ফুলিয়ে চলাফেরা করবে। আগামী নির্বাচনটি গণতন্ত্র প্রিয় মানুষের জন্য, বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতায় বিশ্বাসী মানুষের জন্য, একটি সুযোগ এবং অধিকারও বটে। যে কোনো মূল্যে আপনার এই অধিকার প্রয়োগের প্রস্তুতি নিন।

তারেক রহমান দলের জন্য নেতা-কর্মীদের ত্যাগ এবং বলিষ্ঠ নেতৃত্বের প্রতি অকৃত্রিম শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, গত এক দশকে সারাদেশে আপনারা বিএনপির নেতাকর্মীরা ছিলেন বর্তমান অবৈধ সরকারের প্রতিহিংসার প্রধান টার্গেট। এই ব্যাংক ডাকাত সরকার ২০০৮ সালে ক্ষমতা দখল করেই বিএনপির বিরুদ্ধে সর্বগ্রাসী ষড়যন্ত্র শুরু করে। গুম খুন অপহরণ হামলা মামলা ও হয়রানির পাশাপাশি চলেছে অপপ্রচার।

কিন্তু আজ আমি অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে বলতে চাই, এতো অত্যাচার নিপীড়ন নির্যাতন করেও শহিদ জিয়ার আদর্শের একজন নেতাকর্মীকেও বিপথগামী করা যায়নি। এর প্রধান কারণ, বিএনপির রাজনৈতিক শক্তির উৎস দেশের জনগণ। বিএনপির রাজনৈতিক চেতনা মহান মুক্তিযুদ্ধের মূলনীতি সাম্য মানবিক মর্যাদা ও ন্যায় বিচার। বিএনপির সম্পর্ক বাংলাদেশে মাটি ও মানুষের সঙ্গে। আগামী ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। জনগণের কাছে আমরা স্পষ্ট করেই বলেছি, এই নির্বাচনটি আমাদের জন্য আন্দোলনের একটি কৌশল। এই নির্বাচনে দলের চার হাজারের বেশি যোগ্য নেতা ও প্রার্থী দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেতে ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন। যারা মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টা করেছেন, আপনাদের অনেকেই হয়তো একজন কর্মী হিসেবে নিজের রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছিলেন, এরপর ধীরে ধীরে নিজের যোগ্যতা বলে নিজেকে বিএনপির একজন নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি বলেন, চলতি মাসের ১৮ নভেম্বর থেকে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত ধানের শীষের মনোনয়ন প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা ছিলেন। আমিও সেখানে সকল প্রার্থীদের সাথে কথা বলেছি।

মনোনয়ন বোর্ডে উপস্থিত প্রায় সকল প্রার্থীই কেন্দ্রীয়ভাবে এবং নিজ নিজ এলাকায় গত একদশকে বিএনপির বিরুদ্ধে সীমাহীন অপপ্রচার এবং নির্যাতনের পরও 'ধানের শীষে'র এই দলকে দেশে জনগণের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয়, গ্রহণযোগ্য ও নির্ভরযোগ্য করে গড়ে তুলেছেন। তারেক রহমান বলেন, গত একদশক ধরে আপনারা যে অমানষিক অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করেছেন। দেশের মানুষ যে অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করেছে। তা তখনি বৃথা যাবে না যদি আমরা দলের প্রতিটি নেতাকর্মী সব কিছু ভুলে সকল শক্তিকে একত্রিত করে একটি প্রতীকের পেছনে এসে দাঁড়াই এবং কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তকে যে কোনো মূল্যে সকল কিছুর বিনিময়ে বাস্তবায়িত করি। আমরা যদি এখনো নিজেদের মধ্যে একে ওপরের সমালোচনা নিয়ে ব্যস্ত থাকি তাহলে এই বর্তমান স্বৈরাচার আগামীদিন যখনি সুযোগ পাবে তখন আমাদের উপর নির্যাতনের মাত্রা আরো বহুগুন বাড়িয়ে দেবে। যে সহকর্মীর কাছে আজ আপনি আলোচনা করার সুযোগ পাচ্ছেন আগামীকাল হয়তো তাও পাবেন না। তাই, আগামীদিন যদি আপনি হাসিমুখে আপনার মতামতটি ব্যক্ত করতে চান, তাহলে আজ থেকেই ঐক্যবদ্ধ হওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। বাস্তবতা হলো, দেশের তিনশো'টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা জন্য দলের হাজার হাজার নেতাকর্মী মনোনয়ন চাইলেও সঙ্গত কারণেই সবাইকে মনোয়ন দেয়া সম্ভব নয়। আমাদের দলের শত যোগ্য নেতা থাকার পরও চলমান বাস্তবতায় তিনশো আসনের প্রতিটিতে আমরা বিএনপি থেকে ধানের শীষের মনোনয়ন দিতে পারবো না। কারণ এবার 'ধানের শীষ' প্রতীক নিয়ে বিএনপি, জোট এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতারাও অংশ গ্রহণ করবেন। তাই আমাদেরকে ত্যাগ স্বীকার করে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

তারেক রহমান বলেন, আপনারা অনেকেই এই দলে কর্মী হিসেবে এই দলের রাজনীতি শুরু করেছিলেন। দলকে ভালোবেসে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছেন সামনের দিকে। দেশনেত্রী এখন মিথ্যা রো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় কারাবন্দি। আমার দলের লক্ষ্য লক্ষ্য নেতাকর্মী সমর্থক আজ দেশনেত্রীকে শুধু নেত্রীর আসনেই নয় বরং তাকে মা'য়ের আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন। শুধু আমার দলের নেতা কর্মীই নয়, দেশের কোটি কোটি গণতন্ত্রকামী মানুষের কাছেও দেশনেত্রী এখন মা'য়ের মর্যাদায়। সেই 'মা' জনগণের ভোটে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য বছরের পর বছর ধরে আপনাদের সঙ্গে রাজপথের সংগ্রামে ছিলেন। অন্যায়ের সঙ্গে আপোষ করেননি বলেই, এই বয়সে শারীরিক অসুস্থতা নিয়েও তাকে জেল জুলুম সহ্য করতে হচ্ছে। সেই কারাবন্দি মা'য়ের কথা মনে রেখে সবরকম দ্বিধা- দ্বন্দ্ব ভুলে অন্তত আগামী ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিজেদের ঐক্যকে হিমালয়ের মতো সুদৃঢ় এবং ইস্পাতের মতো কঠিন রূপে গড়ে তুলতে হবে। একমাত্র আপনাদের ঐক্য এবং দৃঢ় প্রত্যয়ই পারে আপনার নেত্রীকে, কারাবন্দি মা'কে মুক্ত করতে।

(জাস্ট নিউজ/প্রতিনিধি/একে/২০৪৫ঘ.)