নির্বাচনে খালেদা জিয়ার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ চাপ দিন

নির্বাচনে খালেদা জিয়ার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ চাপ দিন

ঢাকা, ২ ডিসেম্বর (জাস্ট নিউজ) : ইউরোপভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংগঠন সেন্ট্রিস্ট ডেমোক্র্যাট ইন্টারন্যাশনাল (সিডিআই) বাংলাদেশে নির্বাচন পরিচালনা প্রতিষ্ঠানকে রাজনীতিকরণের নিন্দা জানিয়ে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইসিকে পক্ষপাতমূলক হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকা এবং নিরপেক্ষ ও ন্যায্য গণতান্ত্রিক নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নকে বাংলাদেশ সরকারের ওপর সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছে।

সিডিআই নির্বাচনের সময় বাংলাদেশ সরকার এবং নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষতা বজায় রাখার জন্য বলতে ইইউর পররাষ্ট্রবিষয়ক উচ্চ প্রতিনিধির প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছে, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অংশগ্রহণের অনুমতি দিতে হবে। এতে বাংলাদেশের জনগণ তাদের পছন্দমতো প্রার্থীকে বেছে নেয়ার ক্ষেত্রে নিজেদের গণতান্ত্রিক ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে।

একই সাথে নির্বাচনের আগে কারাগারে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাথে সিডিআই প্রতিনিধিদল দেখা করার জন্য প্রয়োজনীয় কূটনৈতিক সহায়তা প্রদানে পররাষ্ট্রবিষয়ক ইইউ উচ্চপদস্থ প্রতিনিধির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনসহ নির্বাচন পরিচালনা প্রতিষ্ঠানগুলোর আব্যাহত রাজনীতিকীকরণ বন্ধ করা এবং বর্তমান সংসদ ভেঙে দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ১৯৬১ সালে খ্রিষ্টান ডেমোক্র্যাটস ওয়ার্ল্ড ইউনিয়ন (ডব্লিউইউসিডি) নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি নিউ ইন্টারন্যাশনাল টিমস, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটস (ইইউসিডি), খ্রিষ্টান ডেমোক্র্যাট অর্গানাইজেশন অব আমেরিকা (সিডিওএ) এবং খ্রিষ্টান ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়ন অব সেন্ট্রাল ইউরোপের (সিডিসিই) উত্তরসূরি হিসেবে তৈরি করা হয়। ১৯৯৯ সালে এটি বর্তমান নাম সেন্ট্রিস্ট ডেমোক্র্যাট ইন্টারন্যাশনাল গ্রহণ করে।

১৯৮৯ সাল থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিবর্তনের পথ ধরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে মানবজাতির জন্য হুমকি সৃষ্টিকারী পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে সংঘর্ষের সমাপ্তির পর নতুন স্বাধীন রাষ্ট্রগুলোর সৃষ্টি, গণতন্ত্রের সংগ্রাম এবং বিশ্বায়ন শুরু হয়। শান্তি, স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার ও সংহতিতে বসবাসের জন্য এই নতুন সহস্রাব্দটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় সম্প্রদায়ের সামনে নতুন সুযোগের পাশাপাশি চ্যালেঞ্জও সৃষ্টি করে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সিডিআই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সিডিআই নির্বাহী কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন কলম্বিয়ার আন্দ্রেস পাসস্ট্রা, সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে কাজ করছেন স্পেনের অ্যান্টোনিও লোপেজে-ইস্তাররিজ।

সংগঠনটির ভাইস প্রেসিডেন্টের মধ্যে রয়েছেন পাবলো ক্যাসাদো (স্পেন), ভিক্টর ওরবান (হাঙ্গেরি), প্যাট্রিস ট্রোভোডা (সাও টোমে অ্যান্ড প্রিন্সিপে), আমিন জামায়েল (লেবানন), জেনেস জাঞ্জা (স্লোভেনিয়া), এলমার ব্রক (জার্মানি), সিজার এমএআইএ (ব্রাজিল), হুয়ারি বেনারবা (আলজেরিয়া), ইরা সুস (কম্বোডিয়া), মারিও ডেভিড (পর্তুগাল), লরডেস ফ্লোরেস (পেরু), ইসাইয়া সামাকুভা (অ্যাঙ্গোলা), মার্কো আন্তোনিও অ্যাডাম কাস্টিলো (মেক্সিকো), মিলটন হেনরিকস (পানামা) ও আন্ডারস হেরান্দেজ (কিউবা)।

সংগঠনটির কোষাধ্যক্ষ হলেন, হুয়ারি বেনারবা (আলজেরিয়া) কয়েক দিন আগে বাংলাদেশ সম্পর্কে নেয়া সিডিআইর প্রস্তাবে বলা হয়েছে, আগামী ৩০ ডিসেম্বরে সংসদীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের কয়েক সপ্তাহ আগ পর্যন্ত, বিরোধী দল বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ হাজার হাজার বিরোধীদলীয় নেতা-নেত্রী ও কর্মীকে কারাগারে বন্দী করে রাখা হয়েছে। নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে তাদের অযোগ্য ঘোষণা করার জন্য রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত মামলায় তাকে বন্দী রাখা হয়েছে বলে ব্যাপকভাবে মনে করা হয়।

প্রস্তাবে বলা হয়, বিরোধী দলের নেতাদের কারাগারে পাঠানোর পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দল ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নামে নতুন একটি আইন পাস করেছে, যা সরকারের জন্য তার সমালোচনাকারীদের জেলে দেয়ার সুযোগ সৃষ্টি করছে। সরকার এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) নজরদারির মধ্যে আনতে চায়। র্যাব নৃশংসতার জন্য খ্যাত একটি আধা সামরিক সংস্থা। আর নির্বাচনের সময়কালীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য এটাকেই ব্যবহার করা হতে পারে।

সিডিআইর মতে, সাম্প্রতিক এসব পরিস্থিতি আইন ও মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন আর বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনে অংশগ্রহণের পরিবেশ সৃষ্টির পথে গুরুতর বাধা সৃষ্টি করছে। এই বাস্তবতায় বাংলাদেশের পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য সিডিআই ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানিয়েছে।

ইইউর পররাষ্ট্র বিষয়ক উচ্চ প্রতিনিধির প্রতি বাংলাদেশের নির্বাচন সম্পর্কে অবিলম্বে বিবৃতি দিয়ে বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক কর্মীদের মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং সহিংসতা বন্ধ করার জন্যও আহ্বান জানিয়েছে সিডিআই।

সংস্থা উল্লেখ করেছে, নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণার পর বিরোধীদলীয় প্রার্থী হত্যার মতো ঘটনা এবং বিরোধীদলীয় কর্মীদের ব্যাপক হারে গ্রেফতার চলছে। অবিলম্বে এসব বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।

সিডিআই বাংলাদেশ সরকারের প্রতি অবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন স্থগিত এবং বিশ্বাসযোগ্য, স্বচ্ছ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের শর্ত পূরণ করার জন্যও আহ্বান জানিয়েছে। সিডিআই আফগানিস্তানের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম উন্নয়ন সহায়তা গ্রহণকারী বাংলাদেশে নির্বাচনের আগে পূর্ণ পর্যবেক্ষক দল পাঠানোর জন্য ইইউর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। ইইউ যে ৬০ কোটি ইউরো সহায়তা বাংলাদেশকে দিচ্ছে এর মধ্যে গণতান্ত্রিক শাসনের জন্য সাহায্যও রয়েছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। বিরোধী দলের কর্মীদের বিরুদ্ধে সহিংসতায় জড়িত আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা ও সরকারি মন্ত্রী এবং ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার জন্য সিডিআই ইউরোপীয় ইউনিয়নকে আহ্বান জানিয়েছে।

সিডিআই বাংলাদেশের নির্বাচনের সময় ইইউ মিশন প্রতিনিধিদের উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের উচ্চ প্রতিনিধির প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেছে যে, সিডিআই গভীরভাবে উদ্বিগ্ন এবং হতাশ হয়েছে এ জন্য যে বাংলাদেশ সরকার পর্যাপ্ত সময় নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষককে আসার আমন্ত্রণ জানায়নি। এর পরও দেশটিকে ইইউ আর্থিক সহায়তা দিলে তা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। যারা বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি বিশেষভাবে দেখার জন্য ইইউকে আহ্বান জানিয়েছে সিডিআই।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/১১২৫ঘ.)