প্রচারণার তৃতীয় দিনেও দেশজুড়ে বিরোধীদের ওপর ব্যাপক হামলা-ভাঙচুর, গ্রেফতার

প্রচারণার তৃতীয় দিনেও দেশজুড়ে বিরোধীদের ওপর ব্যাপক হামলা-ভাঙচুর, গ্রেফতার

ঢাকা, ১৩ ডিসেম্বর (জাস্ট নিউজ) : আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দের পর দেশজুড়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালানো শুরু করেছে প্রার্থীরা। ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীরা বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যে প্রচারণায় অংশ নিলেও নানা প্রতিরোধ, হামলা ও গ্রেপ্তারের মুখে পড়তে হয় তাদের। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আনুষ্ঠানিক প্রচারণার প্রথম দিনে ব্যাপক হামলা, ভাঙচুর ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। দ্বিতীয় দিনেও দেশের ১৮ জেলায় বিরোধী জোটের প্রার্থীদের প্রচারণায় হামলা, ভাঙচুর ও গুলির ঘটনা ঘটেছে। আক্রান্ত হয়েছে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়িবহর।

বুধবার (১২ ডিসেম্বর) তৃতীয় দিনেও সারাদেশের বিভিন্ন জেলায় ধানের শীষের সমর্থক ও প্রার্থীর গাড়িবহরে আ.লীগের নেতা-কর্মীরা হামলা-ভাঙচুর চালিয়েছে। কোন কোন স্থানে ধানের শীষের প্রার্থীর লোকজনদের ওপর পুলিশ হামলা করেছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনে পৃথক পৃথকভাবে ঘটনাগুলো তুলে ধরা হলো-

আফরোজা আব্বাসের প্রচার কার্যক্রমে দফায় দফায় হামলা
ঢাকা-৯ আসনে বিএনপির প্রার্থী আফরোজা আব্বাসের প্রচারে দুই দফা হামলার অভিযোগ করা হয়েছে। বুধবার সকালে রাজধানীর বৌদ্দ মন্দির এলাকায় ও দুপুরে মাদারটেক এলাকায় এসব হামলা চালানো হয়। হামলায় বিএনপির সহ-স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন আহত হন বলে অভিযোগ করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। হামলার সময় ধানের শীষের নারী কর্মী-সমর্থকদেরকেও মারধর ও লাঞ্ছিত করা হয়। পুলিশের আশকারাতেই আওয়ামী সন্ত্রাসীরা এই হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ রিজভী আহমেদের।

ধানের শীষের পথসভায় পুলিশ ও আ’লীগের হামলা, প্রার্থীসহ আহত অর্ধশতাধিক
কিশোরগঞ্জ-৬ আসনে বিএনপির প্রার্থী শরিফুল আলম’র নির্বাচনী পথসভায় পুলিশ হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বুধবার সন্ধ্যায় কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর থানার ওসমাপুর ইউনিয়নের চৌমুরি বাজারে এ হামলা চালায় পুলিশ। হামলায় শরিফুল আলম সহ প্রায় অর্ধশত নেতা-কর্মী আহত হয়েছে বলে জানান বিএনপির প্রার্থী শরিফুল আলম। তিনি বলেন, সন্ধ্যায় ওসমানপুর ইউনিয়নের চৌমুরি বাজারে পথসভার আয়োজন করা হয়। এ সময় পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা পেছন থেকে অতর্কিতভাবে হামলা চালায়। এসময় তিনিসহ প্রায় অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছে বলে জানান তিনি।

আমির খসরুর গণসংযোগে হামলা, নারীসহ আহত ৬
চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর) আসনের বিএনপি প্রার্থী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর গণসংযোগে হামলায় এক নারীসহ ছয়জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বুধবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে মাঝিরঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন আমির খসরুর ব্যক্তিগত সহকারী মো. সেলিম। নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এম রাশেদ খান দাবি করেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ থাকলেও উল্টো বিএনপির এক কর্মীকে গ্রেফতার করেছে।

ফরিদপুরে এক রাতে বিএনপির ২৫টি নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর
ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের ২৫টি নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত গভীর রাতে এসব কার্যালয় ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। এদিকে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতৃত্বে নির্বাচনী অফিসে ভাংচুর চালানো হয়েছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। এছাড়া ধানের শীষের পক্ষে কাজ করার ‘অপরাধে’ বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাদা পোশাকের পুলিশ হয়রানি করছে বলে তারা অভিযোগ করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নৈশপ্রহরী জানান, দুইটি মাইক্রোবাস ও প্রায় ২৫টির মতো মোটরসাইকেলে করে আসা লোকজন মুখোশে মুখ ঢেকে ও হেলমেট পড়া অবস্থায় নির্বাচনী কার্যালয় ভাংচুর করে।

মোড়েলগঞ্জে ধানের শীষের প্রার্থীর ওপর হামলা
বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জে নির্বাচনী গণসংযোগকালে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছেন বাগেরহাট-৪ সংসদীয় আসনের ধানের র্শীষের প্রার্থী জামায়াত নেতা অধ্যক্ষ আব্দুল আলীম। এ হামলায় অধ্যক্ষ আব্দুল আলীমসহ ৪ জন আহত হয়েছেন। বুধবার (১২ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মোড়েলগঞ্জ উপজেলা সদরের কাপুড়িয়াপট্টি এলাকায় নির্বাচনী গণসংযোগকালে এই হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় আহত অপর ৩ জন হলেন, আল-আমীন (২৫), রাকিব (২৩) ও রাহাত (২৩)। আহতদের স্থানীয় ক্লিনিকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এই হামলার জন্য আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডা. মোজ্জাম্মেল হেসেন এমপি’র কর্মী-সমর্থকদের দায়ী করেছেন বাগেরহাট-৪ আসনে ধানের র্শীষের প্রার্থী ও জামায়াত নেতা আব্দুল আলীম।

যশোরে ধানের শীষের নির্বাচনী প্রচারে বাধা দিচ্ছে বিরোধীপক্ষ
নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে যশোর-৩ (সদর) আসনের বিএনপি প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত গণসংযোগ চালাচ্ছেন। আজ বুধবার সকাল ৮টায় তিনি নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে যশোর শহরের বেজপাড়া বিহারী কলোনী এলাকায় গণসংযোগ শুরু করেন। গণসংযোগকালে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, বিরোধীপক্ষ নৌকার কর্মী ও সমর্থকরা তার প্রচারণা কাজে বাধা সৃষ্টি করছেন। বিশেষ করে গত দুইদিনে শহরের বিভিন্ন স্থানে সাটানো ধানের শীষের প্রায় ১০ হাজার পোস্টার ছিড়ে ফেলা ও পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এমনকি প্রচার মাইক ভাংচুর করা হচ্ছে। অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার মিলছে না।

ঢাকায় বিএনপি প্রার্থী সালাহউদ্দিনের বাসায় ককটেল নিক্ষেপ
ঢাকা-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী ও সাবেক এমপি সালাহউদ্দিন আহমেদের শ্যামপুরের বাসা লক্ষ্য করে দুর্বৃত্তরা ককটেল নিক্ষেপ করেছে। মঙ্গলবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। সালাহউদ্দিন আহমেদের ছেলে ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক তানভীর আহমেদ রবিন গণমাধ্যমকে বলেন, রাত ৯টার দিকে বাসার গেটের সামনে বিকট শব্দে পরপর দু’টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। এ সময় তারা বাসার ভেতরে মহিলা দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা মিটিং করছিলেন। রবিন বলেন, ঢাকা-৪ আসনে ভীতিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। নেতাকর্মীরা আতঙ্কে রয়েছেন। কেউ বাসায় থাকতে পারছেন না।

ঝিনাইদহ -১ আসনে বিএনপি প্রার্থীর গাড়ি ভাংচুর
ঝিনাইদহ-১ (শৈলকুপা) আসনের বিএনপি প্রার্থী এ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামানের গাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে শৈলকুপা উপজেলার শেখপাড়া বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। প্রার্থীর অভিযোগ, শেখপাড়া বাজারে জনসংযোগ করার এক পর্যায়ে সেখানে প্রতিপক্ষ প্রার্থীর লোকজন জোটবদ্ধ হয়ে হামলা চালায়। এসময় হামলাকারীরা তার জীপসহ অন্তত ২০টি মটরসাইকেল ভাংচুর করে। হামলাকারীরা তার ওপর চড়াও হওয়ার চেষ্টা করলে উপস্থিত বিএনপি কর্মীরা তা প্রতিহত করেন।

সিংড়ায় হামলার প্রতিবাদে বিএনপির সংবাদ সম্মেলন
নাটোর-০৩ (সিংড়া) নির্বাচনী এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর আওয়ামী লীগ কর্মীদের অব্যাহত হামলা, মারপিট এবং নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা দেয়ার অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেছেন সিংড়া উপজেলা বিএনপি। আজ সকালে উপজেলা বিএনপি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করা হয়। সিংড়া আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী দাউদার মাহমুদ লিখিত বক্তব্য বলেন, গত ৯ নভেম্বর থেকে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ৭ জন বিএনপি নেতাকর্মীকে মারপিট করে গুরুতর আহত করে। এছাড়াও অর্ধশত বিএনপি নেতাকর্মীকে আহত করা হয়েছে। বিভিন্নস্থানে ধানের শীষের প্রচারণার মাইক ভাঙচুরসহ পোস্টারে অগ্নিসংযোগ করে। সংবাদ সম্মেলনে সিংড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি মজিবর রহমান মন্টু, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শামিম হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সাতক্ষীরায় বিএনপি সমর্থকদের বাড়িঘর ও দোকান ভাংচুর
সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় বিএনপি সমর্থকদের কয়েকটি বাড়িতে হামলা, দোকান ভাংচুর ও ধানের শীষ প্রতীকের পোস্টার আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে সদরের বৈকারি এলাকায় এ হামলা ও দোকান ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। সাতক্ষীরা সদর উপজেলা কৃষকদলের সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য গোলাম সরোয়ার জানান, মঙ্গলবার রাতে ধানের শীষের কর্মী-সমর্থকরা বৈকারি ইউনিয়নের বিভিন্নস্থানে পোস্টার টাঙাতে গেলে একদল যুবক স্থানীয় কাথন্ডা বাজার ও নাপিতঘাটা এলাকায় ধানের শীষের পোস্টারে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় তারা নুরুল মুন্সি, সাবেক ইউপি সদস্য জালাল ও খালেক হাজরার বাড়িতে হামলা চালিয়ে মারপিট ও নাপিতঘাটায় একটি সারের দোকান ভাংচুর করে। স্থানীয় যুবলীগ নেতা ইনজামামুল ইসলাম ইঞ্জার নেতৃত্বে এ হামলা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

‘আ’লীগের হাতুড়ীবাহিনী বিএনপির কর্মীদের বাড়িতে গিয়ে হামলা চালাচ্ছে’
বাগেরহাট-২ (সদর ও কচুয়া) আসনে নির্বাচনী পরিবেশ না থাকার অভিযোগ করেছেন বিএনপির প্রার্থী এম এ সালাম। বুধবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে বাগেরহাট প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে এম এ সালাম বলেন, শাসক দলের সীমাহীন অত্যাচার, নির্যাতন ও হামলায় ইতোমধ্যে দু’শত নেতা-কর্মী বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। আওয়ামী লীগের হাতুড়ী ও রড বাহিনীর সদস্যরা বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের তালিকা করে প্রকাশ্যে পিটিয়ে রক্তাক্ত করে চলেছে। নির্বাচন যতো এগিয়ে আসছে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতনের মাত্রা বেড়েই চলেছে।

তিনি আরো বলেন, ১০ ডিসেম্বর কচুয়ার গজালিয়া ছাত্রদল নেতা মো. এখলাছুর রহমানকে নৌকার সমর্থকরা পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। একইভাবে মঘিয়া ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শেখ আব্দুর রবকেও পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে। এই দুই নেতা এখন খুলনা ও বাগেরহাট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন নেতা-কর্মীদের হুমকী-ধমকি, মারধর অব্যাহত রয়েছে। বাগেরহাট সদর আসনের সর্বত্র আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। এমনকি বিএনপিকে প্রচারের জন্য মাইক ভাড়া না দিতেও দোকানদের নিদের্শ দিয়েছেন শাসক দলের নেতারা। বিএনপিকে প্রচার-প্রচারণা চালাতে পদে-পদে বাধা দেয়া হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

ওসির নেতৃত্বে পুলিশ প্রটোকলে আইনমন্ত্রীর নির্বাচনী প্রচারণা
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আখাউড়া থানার ওসির নেতৃত্বে পুলিশ প্রটোকল নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক। তিনি মঙ্গলবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে তার নির্বাচনী এলাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় প্রচারণা শুরু করেন। এ সময় আইনমন্ত্রীর গাড়ির পাশে আখাউড়া থানার ওসি মোশাররফ হোসেন তালুকদারসহ অসংখ্য পুলিশ সদস্যদের প্রটোকল দিতে দেখা যায়। এ নিয়ে এলাকায় রাজনীতির মাঠে বিতর্ক শুরু হয়েছে।

প্রচারণা চলাকালে বিএনপির প্রার্থী আশফাক আটক
নির্বাচনী গণসংযোগের সময় ঢাকা-১ আসনের (দোহার-নবাবগঞ্জ) বিএনপির প্রার্থী খন্দকার আবু আশফাককে আটক করেছে পুলিশ। আজ বুধবার বিকেল পাঁচটার দিকে তাঁকে আটক করে দোহার থানা পুলিশ। তবে পুলিশের বক্তব্য, ব্যক্তিগত নিরাপত্তার স্বার্থে তাঁকে থানায় নেয়া হয়েছে। বিএনপির নেতা-কর্মীদের সূত্রে জানা গেছে, আজ বেলা দুইটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত দোহারের বাঁশতলা মোড় থেকে করম আলী মোড় হয়ে জয়পাড়া পর্যন্ত তাদের প্রার্থীর নির্বাচনী গণসংযোগ ছিল। কিন্তু বিকেল পাঁচটার দিকে এই প্রচারণা থেকে পুলিশ তাঁকে আটক করে নিয়ে যায়।

ইসিতে অভিযোগ জানিয়ে ফেরার পথে বিএনপি নেতা আটক
নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানিয়ে ফিরে যাওয়ার সময় ঢাকা-১৩ আসনে বিএনপি প্রার্থী আবদুস সালামের সঙ্গে থাকা বিএনপি নেতা ওসমান গণি শাজাহানকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বুধবার দুপুরে আগারগাঁওয়ের আইডিবি ভবনের সামনে থেকে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ জানিয়েছে, তারা এমন কাউকে আটক করেনি। নিজ নির্বাচনী এলাকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধরপাকড়, অপতৎপরতাসহ বেশ কিছু অভিযোগ নিয়ে দুপুরে নির্বাচন কমিশনে যান আবদুস সালাম। কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। দুপুর দেড়টার দিকে ইসি থেকে বেরিয়ে গুলশান এলাকায় ফেরার পথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে আইডিবি ভবনের সামনে থেকে ওসমান গণিকে আটক করে নিয়ে যায়। এমন ঘটনার পর আবদুস সালাম আবার ইসি সচিবের কাছে আটকের বিষয়ে অভিযোগ জানান। আবদুস সালাম সাংবাদিকদের বলেন, বিষয়টি মর্মান্তিক ও দুঃখজনক।

বিএনপি নেতা দুলু আটক
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুকে গুলশানের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয। পুলিশ জানিয়েছে, শেরেবাংলা থানায় নাশকতার মামলায় দুলুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুলুর স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন ছবি নাটোর-২ আসনের বিএনপির প্রার্থী।

কুষ্টিয়ায় বিএনপির কার্যালয়ে হামলা, যুবলীগের কথায় বিএনপির ১৫ কর্মীকে আটক করলো পুলিশ
কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের বিএনপির প্রার্থী জাকির হোসেন সরকারের নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা এই হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন জাকির হোসেন। মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের কোর্টপাড়া এলাকার বিএনপির নির্বাচনী কার্যালয়ে এই হামলার ঘটনা ঘটে। এদিকে যুবলীগের কথায় রাতে পুলিশ বিএনপি প্রার্থী জাকির হোসেন সরকারের নির্বাচনী কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে বিএনপিসহ অঙ্গ সংগঠনের ১৫ জন নেতা-কর্মীকে আটক করে।

কুষ্টিয়ায় বিএনপির নির্বাচনী অফিসে হামলা
কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দেয়া এক বিবৃতিতে বলেন, কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের বিএনপির নির্বাচনী অফিসে দুষ্কৃতিকারীদের হামলা ও গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত নেতা-কর্মীদের মুক্তি দিতে হবে এবং এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

শামীম সাঈদীর প্রস্তাবক ও সমর্থকসহ আটক ৪
জাতীয় সংসদের ১২৭ পিরোজপুর-১ আসনে (নেছারাবাদ, নাজিরপুর, পিরোজপুর সদর) ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী শামীম সাঈদীর মনোনয়ন পত্রের প্রস্তাবক মোঃ সোহরাব হোসেন, সমর্থক মাওলানা শওকত, মাদরাসা শিক্ষক মোঃ নূরুল ইসলাম ও মাইক্রোচালক মোস্তফাকে ডিবি পুলিশ আটক করেছে। ডিবি পুলিশের ওসি মোঃ মিজানুল হক আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন তারা একটি মিটিং করছিল। এ জন্য তাদের এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

ফেনীতে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ধরপাকড় ও তল্লাশি অভিযান
ফেনী জেলা বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন পাটোয়ারি, যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক নঈম উল্লাহ চৌধুরী বরাত ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক এসএম কায়সার এলিনের বাসায় তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। শহরের বিএনপি অধ্যুষিত রামপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান অব্যাহত রয়েছে। পুলিশের অভিযানে সরকারদলীয় নেতাকর্মীরাও রয়েছে বলে বিএনপি নেতাকর্মীদের অভিযোগ। পৌর বিএনপির সভাপতি আলাল উদ্দিন আলাল জানান, মঙ্গলবার বিএনপি প্রার্থীর গণসংযোগে সাধারণ মানুষের ব্যাপক সাড়ায় সরকার দলীয়রা ভীতসন্ত্রস্ত্র হয়ে পড়ে। এরপর দুপুর থেকে দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেফতারে মহড়া দিচ্ছে পুলিশ।

‘কেন্দ্র দখলে বিএনপি বাধা দিলে চোখ উপড়ে ফেলা হবে’
সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) আসনের নির্বাচনী এক সমাবেশে দিরাই পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মোশাররফ মিয়া হুমকি দিয়ে বলেন, নৌকার পক্ষে আসনের সবগুলো ভোটকেন্দ্র দখল করা হবে এবং এতে বিএনপি নেতাকর্মীরা বাধা দিলে তাদের চোখ উপড়ে ফেলা হবে। মঙ্গলবার (১১ ডিসেম্বর) উপজেলা সদরে সুনামগঞ্জ-২ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জয় সেন গুপ্তার সমর্থনে আয়োজিত এক নির্বাচনী সমাবেশে তিনি প্রকাশ্যে এ হুমকি দেন। তিনি ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘বিএনপিকে কোনো সেন্টারে আধিপত্য বিস্তার করতে দেয়া যাবে না, ওদের প্রত্যেকটি সেন্টার আমাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে হবে। সুতরাং যারা ছাত্রলীগ আছ, তোমাদের পড়াশুনা করেই এবার নির্বাচন করতে হবে। কোনো সেন্টার বিএনপিকে দেয়া যাবে না । এতে বিএনপির কোনো কর্মী, কোনো নেতা যদি চোখ রাঙায় তাহলে তার চোখ তুলে দেবে। বিএনপির কোনো নেতা কোনো কর্মীকে একটা কথা বললে তার চোখ উপড়ে ফেলা হবে। সুতরাং নির্বাচনে সবকটি সেন্টার আমাদের দখলে থাকবে।’

‘লোকজনকে থানায় ডেকে নিয়ে নৌকায় ভোট চাইছেন ওসি’
লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোতা মিয়াকে প্রত্যাহারের দাবি করেছেন লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী শাহাদাত হোসেন সেলিম। ওসির বিরুদ্ধে লোকজনকে থানায় ডেকে নিয়ে নৌকায় ভোট চাওয়া ও দলীয় নেতাকর্মীদের হয়রানি করার অভিযোগ করেছেন তিনি। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে প্রত্যাহার করা না হলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন সেলিম। বুধবার (১২ ডিসেম্বর) বিকেলে লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাহাবুদ্দিন সাবুর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। শাহাদাত হোসেন সেলিম লেভারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব।

‘রেজা কিবরিয়াকে নির্বাচনের স্বাদ দেখাইয়া দিব’
হবিগঞ্জ-২ (আজমিরীগঞ্জ ও বানিয়াচং) আসনের জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী রেজা কিবরিয়াকে ‘নির্বাচন করার স্বাদ দেখাইয়া দিব’ বলে হুমকী দিয়েছেন নৌকার প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মজিদ খান। বুধবার (১২ ডিসেম্বর) হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আবদুল মজিদ খান এ হুমকী দেন। তিনি বলেন, ‘রেজা কিবরিয়া কী করে পাস করে, তা দেখে নেব। ওকে নির্বাচন করার স্বাদ দেখাইয়া দিব।’

(জাস্ট নিউজ/এমআই/০১০০.ঘ)