বগুড়ায় ২০টি মামলায় আসামী ৩৩ শ’

বগুড়ায় ২০টি মামলায় আসামী ৩৩ শ’

বগুড়া, ২৫ ডিসেম্বর (জাস্ট নিউজ) : নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে সারাদেশের মতো বগুড়া জেলাতেও বিরোধী দলের উপর ব্যাপক সহিংসতা শুরু হয়েছে। জেলার ৭টি সংসদীয় আসনের ১২টি উপজেলায় ধানের শীষের প্রার্থী, নির্বাচনী অফিস ও নেতাকর্মীদের উপর হামলা, ভাংচুর, গাড়ীতে অগ্নিংযোগের মতো বেশকিছু ঘটনা ঘটেছে।

অথচ উল্টো ধানের শীষের কর্মী ও সমর্থকদের নামে থানায় মামলা দেয়া হয়েছে। তফসিল ঘোষণার পর ৭টি আসনে কমপক্ষে ২০টি মামলা দায়ের হয়েছে। এসব মামলায় আসামী করা হয়েছে কমপক্ষে ৩ হাজার ৩০০ এবং গ্রেফতার করা হয়েছে দেড়শতাধিক।

গত সোমবার থেকে সেনাবাহিনীর টহল শুরু হওয়ায় জনমনে কিছুটা স্বস্তি এসেচে। কিন্তু অজানা আতংক কাটছে না। বিশেষ করে ভোটের দিনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিয়ে সাধারন মানুষ ও ধানের শীষের কর্মী সমর্থকরা উদ্বিগ্ন।

জানা গেছে, বগুড়া-১ আসনে সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা থানায় তফসিল ঘোষণার পর ধানের শীষের প্রায় ৩ হাজার নেতাকর্মীর নামে ৫টি মামলা দায়ের হয়েছে। ইতোমধ্যে ৩০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সব মামলা সাজানো ঘটনায় গায়েবী মামলা বলে জানা গেছে। এতে জেলা যুবদলের সভাপতি সিপার আল বখতিয়ারসহ প্রায় ৩ হাজার তিনশত নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে আ’লীগ দুটি মামলা দিয়েছে।

সর্বশেষ সোমবার রাতে সারিয়াকান্দি উপজেলার কড়িতলা এলাকায় বিএনপির নির্বাচনী অফিস ভাংচুর ও বিএনপির ৫ জনকে মারপিট করা হয়েছে। সাধারন মানুষসহ নেতাকর্মীরা পুলিশের অভিযানে রাতে বাড়ীতে থাকতে পারেনা। তারা রাত জেগে গ্রাম পাহারা দিচ্ছে। নির্বাচনের কোন পরিবেশ নেই।

বগুড়া -২ আসনে ধানের শীষের মোকামতলা, শিবগন্জ সদরসহ কয়েকটি অফিস ভাংচুর ও পুরো এলাকার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। প্রার্থীর ভাইয়ের পুকুর নিয়ে বিএনপির ৩৪ জনসহ ৪৬ জনের নামে মামলা করেছে জাতীয় পার্টি। এ ছাড়া মোকামতলা বন্দরে ধানের শীষের অফিস ভাংচুর করা হয়েছে এবং বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মামলা দেয়া হয়েছে।

বগুড়া -৪ আসনে কাহালু ও নন্দীগ্রাম উপজেলায় ৪টি নির্বাচনী অফিস ভাংচুর, কর্মীদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। শুক্রবার রাতে মহাজোটের লোকেরা নন্দীগ্রামে একটি ভাংগা মোটরসাইকেল রাত ১১টায় পুড়িয়ে এবং নিজেরা ককটেল ফাটিয়ে সাজানো মামলা দিয়েছে। এ মামলায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডক্টর হাসনাত আলীসহ ৬১ জনের নামে মিথ্যা মামলা করেছে। নির্বাচনী আচরনবিধি মোতাবেক রাত ৮ টার পর কোন প্রচারণা চলতে পারে না। তাহলে রাত ১০টা ৫০ মিনিটে কিভাবে মিছিল হলো এবং সেখানে হামললার ঘটনা ঘটলো? এলাকায় কর্মীরা রাতে বাড়ীতে থাকতে পারেন না।

বগুড়া -৫ আসনে তফসিল ঘোষণার পর ধুনট ও শেরপুর উপজেলায় শতাধিক নেতাকর্মীর নামে ৭টি মামলা করেছে আ’লীগ। তার মধ্যে এ পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে ৭০ জনকে। অথচ দিনের বেলা ধুনট সদরে প্রার্থী সিরাজের গাড়ী বহরে হামলা চালিয়ে ভাংচুর , অগ্নিসংযোগ ও আহত করার ঘটনায় থানায় মামলা দিলেও কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।

সর্বশেষ সোমবার শেরপুর উপজেলার গোসাইবাড়ী বটতলায় সরকার দলীয় ক্যাডার বাহিনী প্রার্থী সিরাজের গণসংযোগে হামলা চালিয়ে গাড়ী ভাংচুর করা হয়েছে। এসময় উল্টো বিএনপি নেতা কারমুরুজ্জামান রাফুসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

এ ছাড়া পুলিশের ধরপাকড়ের কারণে নেতাকর্মী এমনকি সাধারন মানুষও রাতে ঘরে থাকতে পারছে না। নির্বাচনী অফিস ভাংচুর, পোষ্টার ছেঁড়াসহ অন্যান্য ব্যাপারে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও পুলিশকে অভিযোগ দিলেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।

বগুড়া-৬ সদর আসনের প্রার্থী মির্জা ফখরুল ইসলামের পক্ষে ব্যাপক প্রচারণা চলছে। কিন্তু গত ২০ ডিসেম্বর রাতে শহরের কৈপাড়ায় লাঙ্গলের প্রার্থীর সমাবেশের পাশে ককটেল বিস্ফোরনের ঘটনায় জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা, সহ-সভাপতি ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আলী আজগর হেনা, যুগ্ম সম্পাদক পরিমল চন্দ্র দাস ও সহিদ উন নবী সালাম, আবু সালেহ নয়ন, রোস্তম আলীসহ ৪১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো একশত জনকে আসামী করে মামলা করা হয়েছে।

এ মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে জেলা বিএনপি নেতা ডাক্তার মামুনুর রশিদ মিঠু, মাহবুব আলম শাহীন আক্তারুজ্জামান নান্টুসহ বেশ কয়েকজনকে। সেখানে পৌর সভার ২০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রোস্তম আলীর অফিস ভাংচুর করা হয়েছে।

এ ব্যাপরে বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলাম বলেছেন, যতই মামলা, হামলা ও গ্রেফতার করা হোক মাঠ ছেড়ে যাবে না বিএনপি। ভোট কেন্দ্র পাহারা দিয়ে ফলাফল নিয়ে কেন্দ্র ত্যাগ করবে নেতাকর্মী। ভোটাররা ভোট দিতে পারলে ধানের শীষের জয় হবেই। তিনি অবিলম্বে নির্বাচনের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে প্রশাসনের প্রতি আহবান জানান।

এসব ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে জেলা বিএনপি ও ধানের শীষের প্রার্থীরা। সেই সাথে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার সাথে বৈঠকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বগুড়া-১ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী কাজী রফিকুল ইসলাম, বগুড়া-৫ আসনের প্রার্থী গোলাম মোঃ সিরাজ, বগুড়া -৪ আসনের প্রার্থী মোশারফ হোসেন দাবী জানিয়েছেন। তবে এ ব্যাপারে তেমন কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি প্রার্থীরা।

(জাস্ট নিউজ/একে/১৭৩৪ঘ.)