সিইসির পদত্যাগের দাবি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের

সিইসির পদত্যাগের দাবি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের

ঢাকা, ২৫ ডিসেম্বর (জাস্ট নিউজ) : আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পক্ষপাতের অভিযোগ এনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার পদত্যাগ দাবি করেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। জোটটির দাবি অবিলম্বে সিইসির পদত্যাগ না হলে ন্যূনতম সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হবে না। এ সময় তারা দ্রুত পক্ষপাতমুক্ত সিইসি নিয়োগ দেয়ার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে দাবিও জানান।

মঙ্গলবার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ঐক্যফ্রন্টের জরুরি বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ দাবি জানান জোটের নেতারা।

সন্ধ্যা ৬টার পর বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে এই বৈঠকটি শুরু হয়। বৈঠকে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতা, গণফোরামের সভাপতি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আ স ম আব্দুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্না, ২০ দলের প্রধান এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এটা কোনো নির্বাচন হচ্ছে না, রক্তের হলি খেলা হচ্ছে। সব জায়গায় আমাদের প্রার্থিদের ওপর হামলা করা হচ্ছে। মহিলারাও বাদ যাচ্ছে না। সংবাদ সম্মেলনের আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে দেখিয়ে বলেন, এটি হলো ২০১৮ সালের নির্বাচন। রক্তাক্ত সাবেক মন্ত্রী গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। গণফোরামের সুব্রত চৌধুরীও আক্রান্ত হয়েছে। কাউকে বাদ দিচ্ছে না। দেখে মনে হচ্ছে এটা কোনো নির্বাচন নয়।

তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন ব্যর্থ ও অকার্যকর। এটা আজ জাতির সামনে প্রমাণ হয়েছে। আমরা এ মুহুর্তে সিইসির পদত্যাগ চাই। এখনই চাই, তিনি পদত্যাগ করুন। এরপর ঐক্যফ্রন্টের বিবৃতি পড়েন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। লিখিত বক্তব্য বলা হয়, সারাদেশে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের ওপর হামলা মামলা, নির্যাতনের বিষয়ে অবহিত করতে নির্বাচন কমিশনে ড. কামাল হোসেন ও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরোর নেতৃত্বে সিনিয়র নেতারা গিয়েছিলেন। কিন্তু আমাদের অভিযোগ শুনে সিইসি নুরুল হুদা সরকার দলীয় নেতার মত আচরণ করেছে।

এতে আরো বলা হয়, সিইসি ড. কামাল হোসেনসহ ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের সাথে যে আচরণ করেছেন, তা ছিলো অত্যন্ত অশোভন ঐক্যফ্রন্ট নেতারা তাৎক্ষণিক বৈঠক বর্জন করেন।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ দাবী করছি। রাষ্ট্রপতির কাছে আহ্বান করছি, যাতে একজন নিরপেক্ষ সিইসি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। কারণ এমন মেরুদণ্ডহীন কমিশনের কাছ থেকে সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করা যায় না। তিনি বলেন, আমরা জনগণকে আহ্বান জানাবো জনগণের ঐক্য গড়ে তুলে জনগণের দাবী আদায় করার।

পরে আজ প্রচারণার সময় হামলার শিকার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, নির্বাচন কমিশনের আচরণ দেখে মনে হচ্ছে ইসি ১৯৭১ সালের আল বদর, আল শামস বাহিনীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে ক্ষমতাসীনদের বিজয়ী করতে।

তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে জনগণ যেভাবে পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাজিত করেছে ঠিক একইভাবে আগামী ৩০ তারিখের নির্বাচনে বর্তমান ক্ষমতাসীনদের পরাজিত করবে। আমরা বলতে চাই রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেব।

এর আগে বিকালে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সভা বর্জনের পর জরুরি বৈঠক ডাকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।

মঙ্গলবার দুপুরে নির্বাচন কমিশনের আচরণে অসন্তুষ্ট হয়ে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বেরিয়ে আসেন ঐক্যফ্রন্ট নেতারা। ওই দুপুরে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকে তুমুল উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে। উত্ত্যপ্ত বাক্যবিনিময় হয় দুপক্ষে। একপর্যায়ে সভাশেষ না করেই সংক্ষুব্ধ হয়ে বেরিয়ে যান ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনসহ অন্যরা। ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের অভিযোগ, নির্বাচনী প্রচারে হামলা-বাধা ও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে অভিযোগ শুনতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অনীহা প্রকাশ করেন। তিনি পুলিশের পক্ষে অবস্থান নিয়ে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতার সঙ্গে ‘অশোভন আচরণ’ করেন। এ কারণে তারা সভা থেকে উঠে আসেন।

(জাস্ট নিউজ/একে/২১১৯ঘ.)