নির্বাচনে মানুষের ইচ্ছার প্রতিফলন ও সংলাপের বিকল্প নেই : রিজভী

নির্বাচনে মানুষের ইচ্ছার প্রতিফলন ও সংলাপের বিকল্প নেই : রিজভী

ঢাকা, ১১ জানুয়ারি (জাস্ট নিউজ) : রাজনীতিতে যে কোনো সংকট নিরসনের জন্য সংলাপের কোনো বিকল্পও নেই। কিন্তু সরকারি দল বিরোধী দলের সাথে কোনো সংলাপ করতে চাচ্ছে না। এই না চাওয়ার কারণে সংকট আরও তীব্র হবে বলে মনে করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বিবিসি বাংলার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন।

২০০৭ সালের এই দিনে তৎকালীন রাজনৈতিক সংকটের প্রেক্ষাপটে ক্ষমতায় এসেছিল সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তারা ক্ষমতায় ছিল পরবর্তী ২ বছর। শুরুর দিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষের বিরাট সমর্থন থাকলেও ধীরে ধীরে সেটা কমে আসে এবং তাদের কার্যক্রম নিয়ে বির্তক সৃষ্টি হয়। প্রধান দুই দলের শীর্ষ নেতাসহ অনেক নেতা কর্মী গ্রেফতার হয়। দুর্নীতি বিরোধী অভিযান, সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সংস্কারের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলো সংস্কারের চেষ্টা করে তারা।

এক এগারোর কতটা প্রভাব পড়েছে আপনাদের দলে (বিএনপি) এবং এটা আপনারা কীভাবে দেখেন?

এই প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, এটা কিন্তু অনেক সুস্পষ্ট যে ২০০৭ সালের এক এগারো ঘটনার মধ্যে দিয়ে আমাদের গণতন্ত্র এবং সংবিধান, দুইটার উপরই খুবই বড় ধরনের একটি আঘাত হয়েছে এবং এই আঘাতের কারণে সেই ধারাবাহিকতায় এখন যে প্রচন্ডভাবে গণতন্ত্রহীনতা, ভয়, আতঙ্ক, সংশয়, নির্বাচন হবে কিনা এটার সৃষ্টি হয়েছে সেদিন থেকে এবং সংবিধানের উপর কুঠারাঘাত করেছে। সংবিধানের অনেক মৌলিক চিত্র বদলে গেছে। যে আঘাত ধারণ করেছিল সেটিরই চূড়ান্ত রূপ ধারণ করেছে আজ।

বড় দুইটি রাজনৈতিক দলের মত ভিন্নতার কারণে এক এগরোর মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল এবং সেসময় আপনারা ক্ষমতা ছাড়ার পর আপনাদেরই নির্বাচিত ব্যক্তি প্রেসিডেন্ট ছিলেন যিনি তত্ত্ববধায়ক সরকারের প্রধান ছিলেন। এছাড়া আপনাদের এবং আওয়ামী লীগের কারণেই এক এগারোর মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল বলে অনেকে অভিযোগ করে। আপনি কী এটি রাজনৈতিক ব্যর্থতা বলে মেনে নিবেন?

জবাবে তিনি বলেন, আমি এটি মনে করি না। কারণ রাজনীতিতে বিতর্ক, আলোচনা থাববেই। আর এটা বাইরের দেশগুলোতেও দেখেছি। পাশ্ববর্তী দেশগুলোতে মত বিনিময়ের চূড়ান্ত পর্যায়ে জরুরি আইন পর্যন্ত হয়েছে। জরুরি আইন ছিল সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার মতই একটা অংশ। কিন্তু সংবিধানকে বাইপাস করে বা সংবিধানকে আঘাত করে একটা সরকার ক্ষমতা নিবে এই ধরণের পরিস্থিতি গণতান্ত্রিক অন্যান্য দেশে হয়নি। এটা আমি মনে করি একটি অভ্যন্তরীণ এবং বহিরাগত ষড়যন্ত্রের অংশ। আর একটি বিষয় হচ্ছে নানাভাবে নানা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে কোনো একটি বিশেষ রানৈতিক শক্তিকে ক্ষমতায় নিয়ে আসার জন্য এটা একটি জাতীয় আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র। আজীবন ক্ষমতায় থাকর জন্য তারা এটা করেছে।

এক এগারোর সরকারের যারা দায়িত্ব পালন করেছিলেন তারাতো দেশের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক দলগুলোরও নানা গুণগত পরিবর্তন করার চেষ্টা করেছিলন। আপনার কী মনে হয় আপনাদের দলে কোনো গুণগত পরিবর্তন এসেছে?

জবাবে রিজভি বলেন, গুণগত পরিবর্তন যদি তারা করতে চাইতেন তাহলে এইভাবে তারা ক্ষমতা নিতেন না। কারণ অবৈধ পন্থায় এসে ভালো কিছু করা যায় না। তাদের এই হস্তক্ষেপের কারণে , অসাংবিধানিক কার্যক্রমের জন্য এবং টেকওভারের কারণে দেশ আজ অচল খাতে চলে গেছে। একদলীয় দু:শাসন তৈরি হয়েছে।

বাংলাদেশের প্রধান দুইটি দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি তাদের মধ্যে এখনোতো প্রবল মত পার্থক্য আছে বিশেষ করে সামনে নির্বাচন কিভাবে হবে সেটা নিয়েও মতের পার্থক্য রয়েছে। এইজন্য আবারও যাতে এক এগারোর সৃষ্টি না হয় সে বিষয়ে আপনারা কতটা সচেতন?

জবাবে তিনি বলেন, এমন একটি পরিস্থিতি বিরাজ করছে যেখানে মানুষ তার ইচ্ছার প্রতিফলনের যে পদ্ধতি থাকা দরকার সেই পদ্ধতিটি নেই। সুতারাং সরকারি দলের মধ্যে যদি অবিলম্বে সুবুদ্ধি উদয় হয়, তাহলে সুষ্ঠ নির্বাচনের জন্য সংলাপে বসে একটি পথ বের করা প্রয়োজন। যেখানে ভোট দিতে গেলে ভোটাররা মনে করবে আমাদের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটবে এবং ভোটটা কারচুপি হবে না। সেখানে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপের কোনো বিকল্প নেই।

(জাস্ট নিউজ/জেআর/১৪৩৫ঘ.)