অরফানেজ মামলায় যুক্তিতর্ক

জনপ্রিয়তাই কাল হয়েছে খালেদা জিয়ার

জনপ্রিয়তাই কাল হয়েছে খালেদা জিয়ার

ঢাকা, ১১ জানুয়ারি (জাস্ট নিউজ) : বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তার জনপ্রিয়তায় ক্ষমতাসনিরা সব সময়ই ঈর্শান্বিত। যে আইনের অধীনে তার বিরুদ্ধে এই মামলা হয়েছে তা ওই আইনের আওতায় পড়ে না। জনপ্রিয়তাই তার কাল হয়ে দাঁড়নোয় এই রাজনৈতিক মামলা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর বকশীবাজারে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামানের আদালতে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ এভাবে যুক্তি উপস্থাপন করেন।

এর আগে এদিন বেলা ১১টা ৫ মিনিটে ঢাকার বকশীবাজারে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালতে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী আদালতে হাজির হন। বেলা ১১টা ১০ মিনিটে বিচারক ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ ড. মো. আখতারুজ্জামান এজলাসে ওঠার পর সাবেক স্পিকার জমিরউদ্দিন সরকার ৯ম দিনের যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেন।

জমির উদ্দিন সরকার বেগম খালেদা জিয়ার আত্মপক্ষ সমর্থণের বক্তব্য বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপন করেন। তিনি সাক্ষীর ওপর ভিত্তি করে নয় তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আদালত রায় দিবেন বলে আশা প্রকাশ করে বেলা ১২টা ৩৩ মিনিট যুক্তি উপস্থাপন করে শেষ করেন। এরপর আদালত বিরতি দেন। বিরতি শেষে দুপুর ১টা ১২ মিনিটের দিকে বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ। দুপুর ২টা ২৪ মিনিট পর্যন্ত যুক্তি তুলে ধরেন তিনি। এরপর তা অব্যাহত থাকা অবস্থায় আগামী ১৬, ১৭ ও ১৮ জানুয়ারি পরবর্তী যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য দিন ধার্য করা হয়।

যুক্তিতর্কে জমির উদ্দির সরকার বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলার সমস্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ পর্যালোচনা করে তিনি দেখেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগই দুর্নীতি দমন কমিশন প্রমাণ করতে পারেনি। ফৌজদারি মামলায় অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে না পারলে এর সুবিধা পাবেন আসামি। তিনি আদালতকে উদ্দেশ করে বলেন, বেগম খালেদা জিয়া ন্যায়বিচার চান ন্যায়বিচার করুন।

জমির উদ্দিন সরকার আদালতে বিএনপির চেয়ারপারসনের আত্মপক্ষ সমর্থন করে দেওয়া বক্তব্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ পড়ে শোনান। বিশেষ করে বেগম খালেদা জিয়া এতিমের টাকা চুরি করে খেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের অন্য নেতাদের এমন বক্তব্য আদালতের কাজে হস্তক্ষেপ কি না, সে বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন তিনি। তিনি তার বক্তব্যে বারবারই আইনের শাসন, গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের কথা আদালতকে স্মরণ করিয়ে দেন। তিনি এক এগারোকে ‘কালো দিবস’ আখ্যা দিয়ে বলেন, ওই সময় সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে ও বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবন বাধাগ্রস্থ করতে মামলা দেওয়া হয়েছে। এখন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৬টি মামলা আছে।

যুক্তি উপস্থপনের শুরুতে মওদুদ আহমেদ বলেন, আমাদের সংবিধানে ৩৫(৩) এ আছে একজন আসামির মৌলিক অধিকার হলো পাবলিক ট্রায়াল। কিন্তু এটা পাবলিক ট্রায়াল হচ্ছে না। ক্যামেরা ট্রায়ালে মামলা চলছে। এটা সংবিধান সম্মত হচ্ছে না। সুতরাং সংবিধান লংঘন করা হয়েছে। কারণ এখানে কাউকে আসতে দেয়া হয় না। এমনকি অনেক আইনজীবীদেরও আসতে দেয়া হয় না। একানে কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই। আইনজীবী বা পাবলিক আসার কোনো সুযোগ নেই, এসব বন্ধ। এটা ক্যামেরা ট্রায়াল। বলতে গেলে শেরে বাংলা নগরে মঈন উদ্দিন- ফখরুদ্দিন সময়ে যে ধরনের ট্রায়াল হতো এ রকমই একটা ট্রায়াল হচ্ছে। এটাকে কোনো মতেই পাবলিক ট্রায়াল বলা যায় না।

তিনি বলেন, এখানে বেগম খালেদা জিয়া আরো ১৪ টা মামলা স্থানান্তর করা হচ্ছে। এগুলো কোনো পাবলিক ট্রায়াল হবে না। সেখানে যারা অভিযুক্ত তারা নিজেদের ডিফেন্ড করার সুযোগ পাবে না। আদালতের যে আনুসঙ্গিকতা বা পরিবেশ থাকে সেটা এখানে নেই। আইনজীবীদের ১০০ ফুট দূরে দাঁড়িয়ে আর্গুমেন্ট করতে হয়। যেটা প্রধান বিচারপতির কোর্টেও হয় না। সেখানে আমরা কত কাছে থেকে আর্গুমেন্ট করি আর এখানে কত দূরে দাঁড়িয়ে আর্গুমেন্ট করতে হয়। আদালতের স্বাভাবিক পরিবেশ এখানে নেই।

প্রবীন এ আইনজীবী বলেন, এখানে আমরা একটি মাত্র কারণে এসেছি। একজন দেশ বরেণ্য নেত্রীকে রাজনৈতিক কারণে আজ আপনার (বিচারক) সামনে এসে ন্যায় বিচারের জন্য দাঁড়াতে হচ্ছে। মামলাটা শুরুতেই খারিজ করে দেয়া উচিত ছিলো। যদি রাজনৈতিক প্রভাব বা রাজনৈতিক কারণ না থাকতো তাহলে অবশ্যই প্রথমে এটা খারিজ করে দেয়া হত। কারণ এখানে কোনো সাক্ষ্য নাই, স্বাক্ষী নাই। কোনো কাগজ নাই যেখানে বেগম খালেদা জিয়া স্বাক্ষর করেছেন। তিনি এ ব্যাপারে একবারেই জড়িত ছিলেন না। শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণে তাকে এ মামলায় জড়ানো হয়েছে। কিছু ভূয়া দলিল, কাগজপত্র সৃজন করে মামলাটা দাঁড় করানো হয়েছে। যার মূল নথি পাওয়া যায়নি। সে অযুহাতে তারা নিজেরা কিছু কাগজপত্র তৈরি করেছে। কোনো মামলায় জাল-জালিয়াতি থাকলে সেই মামলা তখনই অবসান হয়ে যাবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে সেটা এই মামলার মাধ্যমে। আর সেটা করতে হলে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে নিচিহ্ন করতে হবে। তারই অপচেষ্টা করা হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়া তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তার জনপ্রিয়তায় ক্ষমতাসনিরা সব সময়ই ঈর্শান্বিত। যে আইনের অধীনে তার বিরুদ্ধে এই মামলা হয়েছে তা ওই আইনের আওতায় পড়ে না। জনপ্রিয়তাই তার কাল হয়ে দাঁড়নোয় এই রাজনৈতিক মামলা করা হয়েছে বলে দাবি করেন মওদুদ আহমেদ।

মামলায় বলা হয়, এতিমদের জন্য বিদেশী থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে জিয়া অরফানেজ মামলাটি দায়ের করে দুদক। ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় এই মামলাটি দায়ের করা হয়।

২০০৯ সালের ৫ আগস্ট দুদক আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। মামলাটিতে ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে আদালত। অন্যদিকে ২০১১ সালের ৮ আগস্ট জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলাটি দায়ের করে দুদক। এ মামলায় ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি আদালতে চার্জশিট দাখিল করে দুদক। এ মামলায় ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়।

(জাস্ট নিউজ/একে/২৩১০ঘ.)