রাতের বেলা ভোটকেন্দ্রগুলোতে সিল মারার উৎসব চলছে : রিজভী আহমেদ

রাতের বেলা ভোটকেন্দ্রগুলোতে সিল মারার উৎসব চলছে : রিজভী আহমেদ

ঢাকা, ৩০ ডিসেম্বর (জাস্ট নিউজ) : নিশ্চিত পরাজয় জেনে আওয়ামী লীগের ক্যাডার’রা দেশব্যাপী ভোট কেন্দ্রগুলোতে নৌকায় সিল মারছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ২৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যা রাত থেকেই শুরু হয়েছে নৌকা প্রতীকে সিল মারা। এ অবস্থায় নীরব না থেকে ভোট কেন্দ্রগুলোতে দ্রুত জনসমাগম বাড়িয়ে ভোট চুরি ঠেকানোর জন্য ধানের শীষের নেতাকর্মী, সমর্থক ও সাধারণ ভোটারদের আহবান জানান রিজভী আহমেদ।

শনিবার রাত ১০টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব অভিযোগ করেন।

রিজভী আহমেদ বলেন, আমরা বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই আশঙ্কার কথা আপনাদেরকে ব্যক্ত করেছিলাম যে, প্রশাসনের সহযোগিতায় আওয়ামী লীগ ভোটের আগের রাতেই ব্যালট পেপারে সিল মেরে রাখবে। আমাদের সেই আশঙ্কাই সত্যে পরিণত হলো। শোনা যাচ্ছে তারা রাতেই ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ভোট ব্যালট পেপারে নৌকা প্রতীকে সিল মেরে বাক্সে রাখবে। ধানের শীষের অনেক প্রার্থীকে তাদের নিজ বাড়িতে অবরুদ্ধ করে রেখেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী ক্যাডার’রা।

তিনি বলেন, কোন ভাবেই আওয়ামীলীগ তার বিজয়ের অঙ্ক মেলাতে পারছে না। তাই রাতের অন্ধকারে ব্যালটে সীল মেরে ভোট ডাকাতি শুরু করেছে । এদের কাপুরুষোচিত কাজে ভয় পাবেন না। মনে রাখবেন "ভয় পেলেই শেষ, আর ভয়কে জয় করলে আমরাই বাংলাদেশ"। জেগে উঠুন। গ্রামবাসীকে জাগান। ভোট চুরি ঠেকান। বিজয় আমাদের সুনিশ্চিত। প্রয়োজনে হারিকেন ও টর্চ লাইট নিয়ে ভোটকেন্দ্রের আশেপাশে অবস্থান করুন ভোট চুরি ঠেকাতে। জয় আমাদের হবেই ইনশাআল্লাহ।
বিএনপি প্রার্থীদের অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে অভিযোগ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ঢাকা-৮ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী মির্জা আব্বাসের বাসা একরকম অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। তাঁর বাসার ভিতর থেকে কোন নেতাকর্মী বের হতে পারছে না। বের হলেই তাদেরকে গ্রেফতার করা হচ্ছে।

চট্টগ্রাম মহানগরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বাসা ঘিরে রেখেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় দুইজন বিএনপি নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

কুমিল্লা-১০ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী কারাবন্দী মনিরুল হক চৌধুরীর নির্বাচন সমন্বয়কারী ৭/৮ জন নেতাকর্মীকে প্রার্থীর বাড়ী থেকে ধরে নিয়ে গেছে পুলিশ। তার মেয়ের গাড়ী থেকে প্রয়োজনীয় কাগজ ও স্টিকার নিয়ে গেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। নির্বাচনী এলাকায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তান্ডব অব্যাহত রেখেছে। এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা হয়েছে। সেখানে ভীতিকর অবস্থা বিরাজ করছে।

কুমিল্লা-৩ আসনে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী কে এম মজিবুল হক এর বাসার সামনে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী অবস্থান নিয়েছে। বাসায় ঢোকা ও বেরুবার সময় নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট আনিসুর রহমান, স্বাধীন সোহেল ও আলামীনকে প্রার্থীর বাসায় ঢোকার সময় গ্রেফতার করেছে পুলিশ। নির্বাচনী এলাকায় প্রত্যেক নেতাকর্মীর বাসায় বাসায় অভিযান চালিয়ে গণহারে বিএনপি নেতাকর্মী ও ধানের শীষের সমর্থকদের গ্রেফতার করছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।
যশোর-৩ আসনে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত ধানের শীষের প্রার্থী। তার বাড়ি পুলিশ র‌্যাব ঘিরে রেখেছে। বাড়িতে হানা দিয়ে দলের বেশ কিছু নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। অমিতের নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী ক্যাডারদের দ্বারা অনেক কেন্দ্রে ব্যালট পেপারে সিল মারা শুরু হয়েছে।

দেশের বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় রাতে সিল মারার তথ্য তুলে ধরে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ঠাকুরগাঁ-১ (সদর) আসনে গিলাবাড়ী সরকারী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র, রুহিয়া সালেহিয়া আলিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্র ও সবুজ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে নৌকা প্রতীকে সিল মারছে আওয়ামী ক্যাডার’রা। পঞ্চগড়-২ এই আসনের দুটি উপজেলা দেবিগঞ্জ ও বোদার দু’জন ইউএনও প্রিজাইডিং অফিসারদের বলছে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ ভোট ব্যালট পেপারে নৌকা প্রতীকে সিল মেরে বাক্সে ভর্তি করতে হবে।

ঢাকা-১৩ আসনে মোহাম্মদপুর বাঁশবাড়ীতে আওয়ামী লীগ নেতা রাজিব এর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয় ভোট কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকে সিল মারা হচ্ছে।

কক্সবাজার চকোরিয়া থেকে দুরবর্তী চরণদ্বীপ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র, পালাকাটা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নৌকা প্রতীকে সিল মারা চলছে। ঢাকা-৮ আসনে ইতোমধ্যে ফকিরাপুল কেন্দ্রে, শিক্ষাশিবির স্কুল কেন্দ্রে এবং দ্বীপ শিখা ভোটকেন্দ্রে ইতোমধ্যে নৌকা প্রতীকে সিল মারা শেষ হয়েছে।

ঢাকা-৯ আসনে নবীয়াবাদ মাদ্রাসা কেন্দ্র, কম্বাইন্ড কিন্ডারগার্টেন কেন্দ্র, মাদারটেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র, এস আর এ মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রগুলোতে ইতোমধ্যে নৌকা প্রতীকে সিল মারা সম্পন্ন হয়েছে। ঢাকা বৌদ্ধরাজি ভোটকেন্দ্রে নৌকা প্রতীকে ইতোমধ্যে সিল মারা শেষ হয়েছে।

নরসিংদীর মনোহরদী বেলাবো ভোটকেন্দ্র দখল করে আওয়ামী ক্যাডারদের দ্বারা নৌকা প্রতীকে সিল মারা হিড়িক চলছে। প্রায় ৪০ শতাংশ ব্যালট পেপারে সিল মারা হয়ে গেছে। সিরাজগঞ্জ-২ আসনে সয়দাবাদ ইউপি সারুটিয়া ও খোকসাবাড়ি, চন্দ্রকোনা, বানিয়াগাতি ভোটকেন্দ্রে ব্যালট পেপারে নৌকা প্রতীকে সিল মারছে আওয়ামী ক্যাডার’রা।

হবিগঞ্জ-১ আসনে কাজীরগাঁও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে স্থানীয় ইউপি মেম্বার ও আওয়ামী লীগ নেতা খালিদ মোশাররফ প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসারকে বলে যে, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তো আমরা জিততে পারবো না, সুতরাং আমাদের ছেলেরা আসবে, তাদেরকে নৌকা প্রতীকে সিল মারার সুযোগ করে দিবেন।

কুমিল্লা-১ আসনে পৌর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনির আহম্মদের বাড়িতে ঢুকে হামলা চালিয়ে সব কিছু ভাংচুর করে এবং তার ঘরে ঢুকে তার একমাত্র মেয়ে সাবরিনা মনির অন্তরার সাথে দুর্ব্যবহার করে আওয়ামী হায়েনার দল।

ঢাকা-১৬ পুলিং এজেন্টদের কেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য তাদের বাসায় বাসায় পুলিশ ও আওয়ামী যৌথ ভাবে হুমকি দিচ্ছে যে, পুলিং এজেন্টদের না পেয়ে পরিবারের অন্য সদস্যদের বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার করা হবে। আর যে এজেন্ট হবে তার রক্ষা নাই। দারুস সালাম থানার ওসি সেলিমুজ্জামান দিয়েছে রাতেই ৩০ শতাংশ ভোট দিয়ে ব্যালট বাক্স ভরে রাখার জন্য প্রিজাইডিং অফিসারদের চাপ দিচ্ছে। চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জে ও মতলবেও রাতেই আওয়ামী ক্যাডার’রা ব্যালট পেপারে সিল মেরে বাক্স ভর্তি করছে।

মুন্সিগঞ্জ সদরে ধানের শীষের এজেন্টদেরকে গ্রেফতার করা হচ্ছে, ব্যাপক মারধর করা হচ্ছে এবং বিভিন্ন কেন্দ্রে স্থানীয় ওসি’র সহযোগিতায় ব্যালট পেপারে নৌকা প্রতীকে সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভর্তি করা হচ্ছে। কিছুক্ষণ আগে ঢাকা-৫ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী জানিয়েছেন-থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নেতৃত্বে যুবলীগ-ছাত্রলীগের একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে সীল মারছে। রাতেই নাকি ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভর্তি করা হবে।

কুষ্টিয়া-৪ আসনে বিভিন্ন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও ক্যাডাদের ব্যালট পেপারে সিল মারার ধুম পড়েছে। কুমারখালী থানাধীন মনোহরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে সিল মারা চলছে। কুমারখালীর কয়া ইউনিয়নের কয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সিল মারা চলছে। খলিসা দহ ভোটকেন্দ্রেও সিল মারা হচ্ছে। বানিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে এখন ব্যালট পেপারে নৌকা প্রার্থীর পক্ষে সিল মারার উৎসব চলছে। চারিদিকে ব্যালট পেপারে সিল মারার জন্য আওয়ামী লীগে টিম বেরিয়েছে।

চাঁদপুর সদরে ৬০/৭০টি ভোটকেন্দ্রে ব্যালট পেপারে সিল মারা চলছে। থানার চর ইউনিয়ন বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মুক্তার গাজির বাড়ি ঘিরে রেখেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। নরসিংদী সদরে বিভিন্ন কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকে সিল মারছে আওয়ামী লীগ ক্যাডার’রা

ঢাকা-৫, জামালপুর-৩, কিশোরগঞ্জ-৪, নেত্রকোণা-৩, ফরিদপুর-৩, ফরিদপুর-১ ও জয়পুরহাটের বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে নৌকা প্রতীকে সিল মারছে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা।

(জাস্ট নিউজ/একে/০০৩১ঘ.)