তথাকথিত বিজয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মহাভোজ উৎসব চলছে: বিএনপি

তথাকথিত বিজয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মহাভোজ উৎসব চলছে: বিএনপি

৩০ ডিসেম্বর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাজানো ডিজাইনে ভোট লোপাটের মহাভোজ উৎসব মহা ধুমধামে চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ।

শনিবার বেলা ১১টার দিকে নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

রিজভী আহমেদ বলেন, এ মহাভোজ উৎসবের মহাসমারোহ চলছে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে থানার পুলিশ স্টেশনগুলোতে। এভাবে অন্যান্য বাহিনীর ইউনিটেও চলছে ভোজের মচ্ছব।

তিনি বলেন, যে দল ভোটে বিজয়ী হয়, সাধারণত: তাদের কর্মীরাই উৎসব, ভোজ ইত্যাদিতে মেতে থাকে। কিন্তু আইন শৃঙ্খলা বাহিনী একটি রাজনৈতিক দলের তথাকথিত বিজয়ে উৎসব উদযাপন করে, এটা শুধু নজীরবিহীন ও হাস্যকরই নয়, হতবাক করা বিস্ময়করও বটে। এটি গণতন্ত্র ও নির্বাচন নিয়ে তামাশার বিকৃত প্রকাশ।

‘এটা আরো সুষ্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো- ২৯ ডিসেম্বর রাত ও ৩০ ডিসেম্বর ভোট ডাকাতিতে বিস্ময়কর সাফল্য অর্জন করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, এখন গণতন্ত্রের লাশের ওপর মহাভোজের আয়োজন করেছে তারা।’

তিনি বলেন, এই সমস্ত ঘটনায় আবারো প্রমাণিত হয়-দেশ চলবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী দ্বারা একতরফা নির্বাচনের সংস্কৃতিতে এবং শেখ হাসিনা আইন শৃঙ্খলা বাহিনী দিয়েই দেশের নিয়ন্ত্রণ রাখবেন।

‘সরকার তথাকথিত হিংসা ও মহাজালিয়াতির নির্বাচনের বিনিময়ে দেশের মানুষের নাগরিক স্বাধীনতা খর্ব করেছে। এখন সরকার দমননীতির উত্থান প্রবল থেকে প্রবলতর করছে। সারাদেশে বিএনপি’র অনেক নেতা-কর্মীর বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে, নেতা-কর্মীদেরকে নিজ বাড়িতে যাওয়ার পথে শারীরিকভাবে আক্রমণ করা হচ্ছে, তাদের দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি কেড়ে নেয়া হচ্ছে।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ৩০ ডিসেম্বরের আগের দিন অন্ধকার রাতে ভোট ডাকাতি ও ভোট হরিলুট সরকারের জন্য শুভবার্তা নয়। বরং এই অপকর্মটির জন্য অচিরেই বিশাল রাজনৈতিক ধাক্কা খেতে হবে বর্তমান ভোটারবিহীন সরকারকে। জোর করে ক্ষমতায় থাকাটা এই ম্যান্ডেটহীন সরকারের জন্য হবে বিবিধ অমঙ্গলের উৎস।

রিজভী আহমেদ বলেন, গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সংলাপ ও পূণ:নির্বাচন প্রশ্নে ঐক্যফ্রন্টের দাবি হাস্যকর। তাহলে আমি বলতে চাই-শেখ হাসিনার অধীনে অনুষ্ঠিত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনটা কি খুবই সম্মানজনক হয়েছে? রাষ্ট্রের সব শক্তি প্রয়োগ প্রয়োগের মাধ্যমে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের দমন করে এরকম ভোট সন্ত্রাসের একতরফা নির্বাচনের পরেও কি এটা প্রমাণ করে যে, আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার?

তিনি বলেন, এতো বড় নজীরবিহীন ভুয়া ভোটের নির্বাচনের পরেও আত্মমর্যাদাহীন আওয়ামী নেতারা নির্বাচন নিয়ে নির্লজ্জ গলাবাজি করছেন। দেশব্যাপী নারী-পুরুষ ভোটার’রা ধিক্কার জানাচ্ছে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনকে, কারণ তারা কেন্দ্রে গিয়ে দেখেছেন তাদের ভোট দেয়া হয়ে গেছে। আগের রাতে যেখানে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ ভোট দিয়ে দেয়া হয়েছে তাকে কি ভোট বলে?

রিজভী আহমেদ বলেন, মহাভোট ডাকাতির যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ সবার কাছে আছে। দেশ-বিদেশের গণমাধ্যম ও দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোও ইতোমধ্যে ভোট ডাকাতির তথ্য প্রমাণ তুলে ধরছে। ভোটের আগের দিন রাত ও ভোটের দিনেই ভোট লুটের দৃশ্য দেখাতে পারতেন, কিন্তু গণমাধ্যম ছিল প্রচন্ড হুমকির মুখে। তারপরেও দেশ-বিদেশের বেশ কিছু গণমাধ্যমে ভোট ডাকাতির দৃশ্য দেখিয়েছে। ভোট ডাকাতির কিছু দৃশ্য দেখাতে গেলে তাৎক্ষণিকভাবে যমুনা টিভির প্রচার ক্যাবল অপারেটর দিয়ে বন্ধ করা হয়েছিল। সুতরাং কেউই এই নির্বাচন মেনে নেয়নি। এজন্য ওবায়দুল কাদের সাহেব’রা কোন সদুত্তর দিতে পারবেন না বলেই সংলাপে রাজী নয়। মহা ডাকাতির ভোটের জবাব তাদের কাছে নেই।

বিএনপির এ নেতা বলেন, বিশ্বের দেশগুলোর গণতন্ত্রের তালিকায় নেই বাংলাদেশ। এ নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইকোনমিষ্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ)। বর্তমানে বাংলাদেশ পূর্ণ গণতন্ত্র বা ত্রু টিপূর্ণ গণতন্ত্রের অবস্থানেও নেই। বাংলাদেশের অবস্থান স্বৈরতান্ত্রিক দেশগুলোর সমপর্যায়ে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে-বাংলাদেশে নির্বাচনে বেশ অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে, যা নির্বাচনে সুষ্ঠতা ও নিরপেক্ষতায় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে, বিরোধী দল ও প্রার্থীর ওপর সরকারী চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে, বাংলাদেশে বর্তমান রাজনৈতিক সংস্কৃতি ত্রু টিপূর্ণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা থেকেও বেশী খারাপ, বাংলাদেশে বর্তমানে দুর্নীতি ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করেছে, আইনের শাসন খুবই দুর্বল, সিভিল সোসাইটি দুর্বল, সাংবাদিকরা সবসময় হয়রানী ও চাপের মুখে থাকে এবং বিচার ব্যবস্থাও স্বাধীন নয়।

রিজভী আহমেদ বলেন, ইআইইউ রিপোর্ট প্রকাশের পর সরকারের কিছু আজ্ঞাবাহী বুদ্ধিজীবী অবান্তর কথাবার্তা বলছেন। তারা বলেছে- গণতান্ত্রিক ধাপে বাংলাদেশ এগিয়েছে। কিন্তু বাস্তবে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অবস্থান তলানীরও নীচে অতলে নিমজ্জিত।

এমআই