এ সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে যাবে না ঐক্যফ্রন্ট-বামজোট

এ সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে যাবে না ঐক্যফ্রন্ট-বামজোট

এ সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। একই সাথে বাম গণতান্ত্রিক জোটও একই পথে এগুচ্ছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও এ সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান শরিক বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জনগণের ভোট ছিনতাইয়ের মাধ্যমে গত ৩০ ডিসেম্বর যে ন্যক্করজনক নির্বাচন হয়েছে তারপর এ সরকারের অধীনে বা এ নির্বাচন কমিশনের অধীনে আর কোনো নির্বাচন অবাধ বা সুষ্ঠু হতে পারে না।

নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে বিএনপি এবং ঐক্যফ্রন্টের একাধিক নেতা বলেন, গত ৩০ ডিসেম্বর যে দুর্ধর্ষ ভোট ডাকাতির নির্বাচন হয়েছে সেই অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যায় আগামী নির্বাচনগুলোও এ সরকারের দখলদারিত্বের মধ্যে হবে। পুরো প্রশাসন এবং নির্বাচন কমিশন সরকারের একেবারে অনুগত। তাদের কাছ থেকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো সম্ভাবনাই আশা করা যায় না।

এ ছাড়া নির্বাচনে অংশ নিলেই দলের নেতাকর্মীদের ঘর ছাড়া, এলাকা ছাড়া করতে তাদের নামে গায়েবি মামলা দিয়ে হয়রানি শুরু হয়। এ ছাড়া স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বিজয়ী হয়েও তো কোনো লাভ নেই।

বিরোধী দলের বিজয়ী মেয়রদের নামেও একাধিক মামলা দিয়ে তাদেরকে দায়িত্বভার গ্রহণেও নানাভাবে বাধার সৃষ্টি করে। এ অবস্থায় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে দলের নেতাকর্মীদের হয়রানি বা তাদের বিপদ বাড়িয়ে লাভ কি?

গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা উত্তর সিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া আগামী মার্চে অনুষ্ঠিত হবে উপজেলা নির্বাচন।

নির্বাচন কমিশন ৮ অথবা ৯ মার্চ থেকে ধাপে ধাপে এ নির্বাচন শুরু করবে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা ইতোমধ্যে মাঠে নেমে পড়েছে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর প্রার্থীরাও নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। তবে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা নীরব।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দুই মাস পর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছে ইলেকশন কমিশন (ইসি)। এবার ভোট হবে পাঁচটি ধাপে। এই প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে ভোট হবে। ৩ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার কথা রয়েছে।

দেশে বর্তমানে ৪৯২টি উপজেলা পরিষদ রয়েছে। সর্বশেষ ২০১৪ সালের মার্চ-মে মাসে ছয় ধাপে এর অধিকাংশগুলোতে ভোট হয়েছিল। আইনে মেয়াদ শেষের পূর্ববর্তী ১৮০ দিনের মধ্যে ভোট করার বাধ্যবাধকতা থাকায় মার্চে এ নির্বাচন করতে যাচ্ছে ইসি।

১৯৮৫ সালে উপজেলা পরিষদ চালু হওয়ার পর ১৯৯০ ও ২০০৯ সালে সারাদেশে একসাথে সব উপজেলায় ভোট হয়েছিল। ২০১৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত ছয় ধাপে ভোট করেছিল তৎকালীন নির্বাচন কমিশন।

বিএনপি-গণফোরামসহ কয়েকটি দলের এ জোট গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কারচুপি ও ভোট ডাকাতির অভিযোগ এনে এর ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছে। সেই সাথে অবিলম্বে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

এর মধ্যে আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি ঐক্যফ্রন্ট ‘জাতীয় সংলাপের’ আহ্বান করেছে। ঐক্যফ্রন্ট ছাড়া বাম গণতান্ত্রিক জোটও এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার কথাই ভাবছে। তারাও গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনকে ‘দুর্ধর্ষ ভোট ডাকাতির নির্বাচন’ বলে আখ্যায়িত করেছে।

সেই সাথে এ নির্বাচন বাতিল করে দলনিরপেক্ষ তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এ কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, ২৮ জানুয়ারি গোলটেবিল বৈঠক এবং ৩০ জানুয়ারি দেশব্যাপী কালো পতাকা হাতে বিক্ষোভ মিছিল।

এ বিষয়ে ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের নামে যে ভোট ডাকাতি হয়েছে এরপর আর এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ হবে না; হতে পারে না।

তাই এ অবস্থায় উপজেলা বা অন্যান্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ইচ্ছা বা আগ্রহ কারো নেই। আমরা চাই এই ভোট ডাকাতির সরকার অবিলম্বে পদত্যাগ করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে একটি অবাধ সুষ্ঠু নতুন নির্বাচন।

এ বিষয়ে বাম গণতান্ত্রিক জোটের অন্যতম নেতা বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, গত ৩০ ডিসেম্বর যে দুর্ধর্ষ ভোট ডাকাতির নির্বাচন হয়েছে তারপর আর এ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করা যায় না।

পুরো প্রশাসন এবং নির্বাচন কমিশনও সরকারের আজ্ঞাবহ। সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে এমন কোনো আচরণ বা নমুনা তাদের কাছ থেকেও এখনো পাচ্ছি না। তাই এসরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়ার বিষয়টি ভাবতে হচ্ছে। আমরা বাম গণতান্ত্রিক জোট এ বিষয়ে দু’একদিনের মধ্যে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবো।

এ জোটের আরেক নেতা গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী বলেন, জোটের মধ্যে আলোচনা করে নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

একে/