উপজেলা নির্বাচনও আগের দিন রাতে হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই: রিজভী আহমেদ

উপজেলা নির্বাচনও আগের দিন রাতে হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই: রিজভী আহমেদ

দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, দেশব্যাপী সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, আগামী উপজেলা নির্বাচনে দলের কোনো নেতা-কর্মী অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। যদি কেউ দলের সিদ্ধান্ত বরখেলাপ করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তাহলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

রবিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি দলের কেন্দ্রের এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।

উপজেলা নির্বাচনসহ নির্বাচনগুলোতে রাজনৈতিক দলগুলো অংশগ্রহণ না করা হতাশাজনক-প্রধান নির্বাচন কমিশনারের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রিজভী আহমেদ বলেন, এদেশে মিড নাইট নির্বাচনের প্রধান কারিগর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা। তিনি মিড নাইট নির্বাচনের যে নজীর সৃষ্টি করেছেন। তারপরেও অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো আগামী নির্বাচনগুলোতে অংশগ্রহণ করবে তা তিনি কি করে আশা করতে পারেন!

তিনি বলেন, সিইসি পরিচালিত নির্বাচনে একমাত্র শেখ হাসিনা ও তার পরিষদই উল্লসিত হয়েছেন। দেশ-বিদেশের সবাই ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে শুধু হতবাকই হয়নি, বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে তারা ঐ নির্বাচনের বিরুদ্ধে সমালোচনা ঝড় তুলেছেন। এই সিইসি ভোটারদের প্রতারিত করে অভিনব মিড নাইট নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ববাদী একদলীয় রাষ্ট্র কায়েমে সহায়তা করেছেন। যে সিইসি ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পরে বলেন যে, ‘৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ ছিল, উপজেলা নির্বাচনও একইভাবে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হবে।’ তাহলে স্পষ্টত বোঝা যাচ্ছে উপজেলা নির্বাচনের ভবিষ্যৎ।

রিজভী আহমেদ বলেন, উপজেলা নির্বাচনও যে আগের দিন রাতেই অনুষ্ঠিত হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সমস্ত নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে, ভোটাধিকার কবরস্থ করে সিইসি নিজের বিশ্বাসযোগ্যতা ধ্বংসের পরেও আত্মপীড়নবোধ না করে অবলীলায় ৩০ ডিসেম্বর মহাভোট ডাকাতিরই নির্বাচনের পূনরাবৃত্তির ঘোষণা দিলেন উপজেলা নির্বাচনের। কারণ এই সিইসি সরকারকে ভোটারহীনভাবে বিজয়ী করতে সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর নির্বাচন চান না।

বিএনপির এই নেতা বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পরিবেশ। কোথাও কোন সাড়া-শব্দ নেই, মানুষ নীরব ও উৎসাহহীন। সিইসি গণতন্ত্রের কবর দিয়েছেন ২৯ ডিসেম্বরের রাতেই। তাই আইন-কানুন, নিয়ম-নীতি, লজ্জা শরমের ধার ধারছেন না তিনি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার সঠিক হেদায়েত ও শুভবুদ্ধি থেকে বঞ্চিত একজন ব্যক্তি।

রিজভী আহমেদ আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন-‘বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চেয়েছিল’। মিড নাইট ভোটের সরকারের প্রধানমন্ত্রী সম্পূর্ণরূপে গণবিচ্ছিন্ন হওয়ার পর এখন আতঙ্কে ভুগছেন। ভোট ডাকাতি নিয়ে মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ যাতে না ঘটে সেটিকে বন্ধ করার জন্য সরকারি যন্ত্রকে যথেচ্ছ ব্যবহার করছেন।

তিনি বলেন, প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন বলেই সরকার বিরোধী দলকে কোন সভা-সমাবেশ করতে নানাভাবে বাধা দিচ্ছে। ২৯ ডিসেম্বরের মধ্যরাতের ভোটের খবর যতই সরকার রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে বাধা দিক না কেন সেই খবর চাপা পড়ে থাকবে না। দেশবাসীসহ বিশ্ববাসী সেই ভোটের খবর জেনে গেছে।

তিনি দাবি করেন, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পত্রিকা ইকোনমিষ্ট মন্তব্য করেছে-বাংলাদেশের নির্বাচন ছিল স্বচ্ছ জালিয়াতি ও খোলামেলা কারচুপি। তাহলে প্রধানমন্ত্রী আপনি কিভাবে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনকে প্রশ্নহীন রাখবেন? ইকোনমিষ্ট কি কারো কথায় কোন সংবাদ-প্রতিবেদন তৈরি করে? আপনি দেশের মানুষ ও গণমাধ্যমকে আতঙ্ক সৃষ্টি ও ভয় দেখাতে পারেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক স্বাধীন গণমাধ্যমগুলোর মুখ কি বন্ধ রাখতে পারবেন?

তিনি বলেন, আপনাকে কেউ কেউ জননী হিসেবে বিভিন্ন খেতাবে ভূষিত করেছে। তবে আপনি যে অপরাজনীতি ও অপনির্বাচনেরও জননী সেটি জনগণ আরো তীব্রভাবে এবার আরো বেশি করে টের পেয়েছে। ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত জনগণের ক্ষোভ যে কত তীব্র আকার ধারণ করেছে তা আপনি টের পাচ্ছেন না। ক্ষমতার মোহমায়ায় আপনি কোনো কিছুই উপলব্ধি করতে পারছেন না।

এমআই