ঠান্ডা মাথায় আন্দোলন করতে হবে : মঈন খান

ঠান্ডা মাথায় আন্দোলন করতে হবে : মঈন খান

সরকারের বিরুদ্ধে ‘ঠান্ডা মাথায় বাস্তবধর্মী আন্দোলন’ করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান।

বুধবার সকালে এক আলোচনা সভায় বেশ কয়েকজন দলীয় নেতার আন্দোলনের কর্মসূচি দেওয়ার দাবি জানালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য এমন মন্তব্য করেন।

রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি ভবনের স্বাধীনতা মিলনায়তনে নাগরিক অধিকার আন্দোলন ফোরামের উদ্যোগে ‘৩০ ডিসেম্বর এবং অত:পর’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।

মঈন খান বলেন, ‘আজকে শোষক-শাসক সমাজ বাংলাদেশে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে সেখানে কারো জীবন নিরাপদ না। কারো জীবনের কোনো স্বাধীনতা নাই, এখানে কথা বলার স্বাধীনতা নাই। কেউ সরকারের বিরুদ্ধে কথা বললে তাদের (সরকার) মেজাজ খারাপ হয়। হুমকি-ধমকি দেয়। মামলা-হামলার কথা না-ই বা বললাম। এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রানের একটি মাত্র উপায় শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এই সরকারকে বিদায় দিতে হবে। এই সরকারকে বিদায় দিতে হলে যে আন্দোলনের কথা এখানে আলোচনা হয়েছে, সেই আন্দোলন আমাদের করতে হবে ঠান্ডা মাথায়। বাস্তবধর্মী পরিকল্পনার মাধ্যমে।’

বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা বলেন, ‘বিগত ১০ বছরে বর্তমান স্বৈরাচারী শাসনামলে কত হাজার মানুষ জীবন দিয়েছে। কেন জীবন দিয়েছে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে? আজকে আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা রাজনৈতিক মামলায় কারাগারে রাখা হয়েছে। তার কী অপরাধ? তার একটি মাত্র অপরাধ তিনি এদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন।’

মঈন খান বলেন, ‘আজকের সরকারের সঙ্গে পূর্ববর্তী স্বৈর শাসকদের সঙ্গে গুনগত ব্যবধান আছে। আজকের আন্দোলনের সঙ্গে ’৫২,’৬৯, ’৯০‘র আন্দোলনের সঙ্গে গুনগত ফারাক থাকতে হবে। যদি সেই ফারাক না থাকে তাহলে কিন্তু এই আন্দোলন সফল হবে না। আমি হুট করে রাস্তায় নেমে দুইটা শ্লোগান দিলাম,গুলিতে প্রাণ হারালাম। এই সরকার কিন্তু আপনাকে ছাড়বে না। ওই সরকারকে কাবু করতে হলে একটি ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করতে হবে। যে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের সূচনা আমরা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট করেছি।’

কারান্তরীণ বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি করেই সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করতে হবে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির এই সদস্য। তিনি বলেন, ‘বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের প্রত্যেকটি নেতা-কর্মীকে অনুরোধ করব, আপনারা ধৈর্য ধারণ করুন, আপনারা ঠান্ডা মাথায় থাকুন। আপনারা গণতন্ত্রের পথে থাকুন, আপনারা শান্তির পথে থাকুন। নিশ্চয়ই আমরা বিজয় ছিনিয়ে আনব।’

আলোচনা সভায় নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হলে লড়াই করতে হবে। তার কোনো বিকল্প নেই। আমরা লড়াই কী করতে পেরেছি, সেই লড়াই কী বেগম জিয়ার মুক্তির লড়াই, সেই লড়াই বাংলাদেশের মুক্তির লড়াই, সেই লড়াই এখন পর্যন্ত হাজার হাজার নেতাকর্মী যারা জেলে আছেন তাদের মুক্তির লড়াই। আমরা জানি যারা এখন ক্ষমতায় আছেন তারা নিষ্ঠুর ও হৃদয়হীন।’

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক বলেন, ‘খুব স্পষ্ট যে, এই সরকারের কাছে করুণা ভিক্ষা করি না আমরা, এই সরকারের কাছে কোনো সতব্যবহার প্রত্যাশা করি না। আমরা মনে করি, আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করি যা পাবো আদায় করে নিতে হবে, করুণা করে কিছু পাওয়া যাবে না। আন্দোলন করতেই হবে।’

তিনি বলেন, ‘একাদশ নির্বাচন করেছে পুলিশ। আওয়ামী লীগ নাই। আওয়ামী লীগ নামের একটা সংগঠন এদেশে স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছে, আওয়ামী লীগ নামের একটা সংগঠন এতগুলো বছর ধরে ৫০ বছর পার করবার পরে সারা দেশে পরপর দুইবার- তিনবার করে ক্ষমতায় থাকতে সেই রাজনৈতিক দলের কোনো অস্তিত্ব আছে এখন।’

মান্না বলেন, ‘আজকে একটি পত্রিকায় দুই মন্ত্রীর ছবি দিয়েছে। তারা নিজেদের অপরাধ স্বীকার করে তর্কবির্তক করছেন। যেটা চকবাজার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে। আমির হোসেন আমুকে দোষারোপ করেছেন দিলীপ বড়ুয়া আবার আমির হোসেন আমু দিলীপ বড়ুয়াকে পাল্টা দোষারোপ করেছেন। দুই শিল্পমন্ত্রীর এই দশা এবং বতর্মান শিল্প মন্ত্রী আর কথা বলেননি। কারণ বর্তমান শিল্পমন্ত্রী একবার একটা কথা বলেছেন যেটা (অগ্নিকাণ্ড) সিলিন্ডার বিস্ফোরণে হয়েছে। কেউ প্রমাণ করতে পারেনি, কেউ পক্ষে বলেনি। তার মানে মন্ত্রীগুলো হয় মিথ্যা কথা বলে, টাকায় খায় না, অন্য কাজ করেন।’

সংগঠনের উপদেষ্টা সাঈদ আহমেদ আসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের পরিচালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন- বিএনপির মোশাররফ হোসেন, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, শাহ নেসারুল হক, শাহরিয়া ইসলাম শায়লা, ফরিদউদ্দিন, শাহজাহান মিয়া সম্রাট, ভিপি ইব্রাহিম প্রমুখ।

এমআই