ইলিয়াস আলী ‘না থাকার’ ৭ বছর

ইলিয়াস আলী ‘না থাকার’ ৭ বছর

মধ্যরাত। দুই নম্বর রোড, সাউথ পয়েন্ট স্কুল এন্ড কলেজের সামনে, বনানী, ঢাকা। সময়টা ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল। সড়কে পড়ে আছে একটি প্রাইভেটকার। নেই চালক, নেই যাত্রী। বিষয়টি ‘ব্রেকিং নিউজে’ স্থান পেতে সময় লাগলো না মোটেও। প্রাইভেটকারটি যে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা এম. ইলিয়াস আলীর!

নিজের ওই প্রাইভেটকারযোগেই বাসাতেই ফিরছিলেন ইলিয়াস আলী। পথিমধ্যে ‘নিখোঁজ’ হয়ে যান তিনি। একই ভাগ্য মেনে নিতে হয় তার গাড়িচালক আনসার আলীকেও।

তারপর সময় শুধু টিক টিক করে এগিয়েই গেছে। যেতে যেতে পেরিয়ে গেছে অর্ধযুগেরও বেশি সময়। আগামীকাল বুধবার, আরেকটি ১৭ এপ্রিল। এ দিনেই ইলিয়াস আলী ‘নিখোঁজের’ পুরো সাত বছর পূর্ণ হচ্ছে।

ইলিয়াস আলী কোথায় ‘হারালেন’? গাড়িচালক আনসার আলী বা কোথায়? তারা কি বেঁচে আছেন? এরকম অনেক প্রশ্নই শুধু আছে, উত্তর নেই কোথাও! ইলিয়াসকে ‘খোঁজে পেতে’ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো তৎপরতাও এখন আর দৃশ্যমান নয়।

ওই সময় ইলিয়াস আলী ছিলেন সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি। ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক। সামনের দিকেই ছিল পথচলা। দলে আরও গুরুত্বপূর্ণ পদের দাবিদার হয়ে ওঠছিলেন তিনি। কিন্তু নিয়তির অদৃশ্য লিখনে প্রভাবশালী ইলিয়াস এখন ইনভার্টেড কমার ভেতর নিখোঁজ নামক শব্দে আটকে থাকা একটি নাম!

ইলিয়াস কি ‘ফিরবেন’? এই প্রশ্নে এখন আর খুব আশাবাদী প্রতি উত্তর ভেসে আসে না বিএনপি নেতাকর্মীদের কণ্ঠ থেকে। তবে দলটির অগুনতি নেতাকর্মী এখনও বিশ্বাসে অটল, তাদের ইলিয়াস ‘ফিরে আসবেন’।

মা সূর্যবান বিবি, স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা, তিন ছেলে-মেয়ে, পরিবারের অন্য সবাই ইলিয়াস আলীর জন্য এখনও অন্তহীন অপেক্ষায়।

ইলিয়াস আলীর ‘নিখোঁজ’র পেছনে সরকারকেই দায়ী করে বিএনপি। এখনও সরকারের কাছেই তাকে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি দলটির নেতাদের।

সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ বলছিলেন, ইলিয়াস আলী জনপ্রিয় নেতা ছিলেন। দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তিনি ছিলেন সোচ্চার। এ কারণেই তাকে গুম করা হয়। আমরা সব সময়ই বলে আসছি, সরকারের সদিচ্ছা থাকলে ইলিয়াসকে ফেরত পাওয়া যাবে।

ইলিয়াস আলী ‘নিখোঁজ’র সাত বছর পূর্ণ হওয়ার প্রেক্ষিতে তিন দিনের কর্মসূচি নিয়েছে সিলেট জেলা বিএনপি। কর্মসূচির মধ্যে আছে আগামীকাল বুধবার হযরত শাহজালাল (রহ.) দরগাহ মসজিদে মিলাদ ও দোয়া, বৃহস্পতিবার দুপুরে ‘নিখোঁজ’ নেতাকর্মীদের ফিরিয়ে দেয়ার দাবিতে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি এবং আগামী ২৯ এপ্রিল ‘গুমের রাজনীতি ও বর্তমান বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভা।

প্রসঙ্গত, ইলিয়াস আলী ‘নিখোঁজ’র পর সারাদেশ ছিল উত্তাল। বিএনপি নেমেছিল কঠোর আন্দোলনে। কয়েক দফায় হয় হরতাল। অগ্নিগর্ভ ছিল সিলেট। ওই সময় আন্দোলনে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে নিহত হন আটজন।

এমজে/