কেরানীগঞ্জ কারাগারে আদালত স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত চ্যলেঞ্জ

খালেদা জিয়ার রিটের শুনানি ১০ জুন পর্যন্ত মুলতবি

খালেদা জিয়ার রিটের শুনানি ১০ জুন পর্যন্ত মুলতবি


বিএনপি চেয়ারপাসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিচারে কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতর আদালত স্থানান্তর করার বিষয়ে গত ১২ মে জারি করা প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার চেয়ে করা রিটের শুনানি আগামী১০ জুন পর্যন্ত মুলতবি করেছেন আদালত।

মঙ্গলবার হাইকোর্টের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে আজ বেগম খালেদার পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ ও আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী। তাদের সহায়তা করেন ব্যারিস্টার নওশাদ জমির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এ সময় দুদকের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।

শুনানিতে এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, কেরানীগঞ্জ ঢাকা মহানগরের মধ্যে নয়। এছাড়া আইন অনুসারে পাবলিক ট্রায়ালের বিষয় আছে। এ সময় আদালত বলেন, মামলার চার্জশীট দেয়া উচিত ছিলো। দিলে তাহলে আমাদের বুঝতে সুবিধা হবে। এছাড়া ওই আদালতের বিচারকের অধিক্ষেত্রের গেজেটা দিবেন। এছাড়া এ মামলায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বিচার হয়েছে। সেটাকে চ্যালেঞ্জ করেছেন কিনা। সেটা কি রেসটিক্টেড ছিলো না?

পরে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় ফারুক রহমানের মামলার বিচার জেলখানায় হয়েছে। হুসেইন মহম্মদ এরশাদের মামলা চলেছিলো। ওনারাই সেটা করেছেন। বিডিআর মামলার অনেক আসামি। সেটার বিচার আলীয়া মাদ্রাসার পাশে কারা অধিদপ্তরের মাঠে হয়েছিলো। এ মামলাটাও ওখানে হতো । কিন্তু সেখানে কিছু সমস্যা হয়েছিলো। গাড়ী ভাংচুর হয়েছে। একটা মামলাও হয়েছে। পরে মামলাটি পুরানো কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক কক্ষে স্থানান্তর করা হয়। এর মধ্যে জেল খানা ট্রান্সপার হয়েছে। এখন ওই কোর্টটা জেলখানার ভেতরে নয় সম্মুখে। আমাদের কাছে ল্যাপটপে বিষয়টি আছে। চাইলে দেখতে পারেন। এ সময় আদালত সিডি জমা দিতে বলেন।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এখানে মেট্রো সেশনের কোনো বিষয় না। বিশেষ জজ আদালতের মামলা। সুতরাং এখানে কোনো মেট্রো সেশনের কোনো রিলেভেন্স নেই। এরপর এ জে মোহাম্মদ আলীর সময় আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত শুনানি ১০ জুন পর‌্যন্ত মুলতবি করেন।

আদালতে বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে আইজীবী হিসেবে আরো ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন, মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দীন, আখতারুজ্জামান, জুলফিকার আলী জুনু, সালমা সুলতানা প্রমুখ।

এর আগে রবিবার রিটটি উপস্থাপন করে শুনানির জন্য আবেদন করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। সোমবার উভয় পক্ষই উপস্থিত থাকলেও আদালত এ শুনানিতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) পক্ষভুক্ত করতে বলেন। পরে সর্বসম্মতিতে আগামীকাল শুনানির তারিখ ধার্য করেন আদালত।

রবিবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি দায়ের করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। ওইদিন আদালতে বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে এফিডেভিট দাখিল করে রিটের শুনানির আবেদন করেন প্রবীণ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও এ জে মোহাম্মদ আলী।

রিট আবেদনে সংবিধানের ২৭ ও ৩১ অনুচ্ছেদবহির্ভূত পদক্ষেপ হওয়ায় এবং প্রচলিত ফৌজদারী কার্যবিধির ধারা ৯ এর (১) ও (২) উপধারাবিরোধী হওয়ায় নাইকো দুর্নীতি মামলায় বিচারে পুরান ঢাকার সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বিশেষ জজ আদালত-৯ কেরানীগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারাগারের দুই নং ভবনে স্থানান্তরে গত ১২ মে জারি করা গেজেটকে কেন অবৈধ এবং বেআইনি ঘোষণা করা হবে না- মর্মে রুল চাওয়া হয়েছে রিট আবেদনে। আর রুলের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই গেজেটের কার্যকারিতা স্থগিত চাওয়া হয়েছে আবেদনে। স্বরাষ্ট্র সচিব ও আইন মন্ত্রণালয়ের দুই সচিবকে রিটে বিবাদি করা হয়েছে।

রিট আবেদন দায়ের করার পর ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, বেগম খালেদা জিয়া একজন পাবলিক ফিগার। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর যে কোনো ট্রায়াল পাবলিকলি হওয়া উচিৎ। কেরানীগঞ্জের কারাগারের একটি রুমে কখনো পাবলিক ট্রায়াল হতে পারে না। আমরা মনে করি, মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি ন্যায়বিচার করবেন এবং আদালত স্থানান্তরের যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে, সেটির কার্যকারিতা স্থগিত চেয়েছি, আশা করি আদালত স্থগিতাদেশ দেবেন।

গত ২১ মে ব্যারিস্টার কায়সার কামাল সংশ্লিষ্ট প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার চেয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের সচিবকে একটি আইনি নোটিশ পাঠান। তার জবাব না পাওয়ায় এ রিটটি দায়ের করা হয় বলে তিনি জানান।

ওই আইনী নোটিশের বলা হয়, গত ১২ মে আইন মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। ওই প্রজ্ঞাপন অনুসারে বেগম খালেদা জিয়ার মামলা শুনানির জন্য পুরাতন ঢাকার সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আদালত (বিশেষ জজ আদালত-৯) স্থানান্তর করে কেরানীগঞ্জে নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেই প্রজ্ঞাপনকে বেগম খালেদা জিয়া ও আমরা বেআইনী বলে মনে করি। কারণ সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, যেকোন বিচার হতে হবে উন্মুক্তভাবে। কারাগারের একটি কক্ষে উন্মুক্তভাবে বিচার হতে পারে না।

ফলে এই প্রজ্ঞাপন সংবিধানবিরোধী। একইসঙ্গে কোথায় কোথায় আদালত স্থানান্তরিত হতে পারে তা ফৌজদারী কার্যবিধি আইনে দেয়া আছে। ফৌজদারী কার্যবিধির কোথাও উল্লেখ নেই যে, কারাগারের মধ্যে আদালত স্থাপন হতে পারে। সুতরাং সংবিধান ও ফৌজদারী আইনের বিরুদ্ধে সরকার অবস্থান নিয়েছে।

এমজে/