যে দুই মামলায় আটকে আছে খালেদা জিয়ার মুক্তি

যে দুই মামলায় আটকে আছে খালেদা জিয়ার মুক্তি

নতুন করে আইনি কোনো বাধা তৈরি না হলে আর দুটি মামলায় জামিন পেলেই মুক্তি পাবেন ১৬ মাস ধরে কারান্তরীণ বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। এমন আশার কথা জানিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বলেছেন, চলতি মাসের শেষে জিয়া চ্যারিটেবল ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট সংক্রান্ত ওই দুইটি মামলায় পর্যায়ক্রমে জামিন শুনানি হবে। আইনি প্রক্রিয়া যথানিয়মে চললে দুই মাসের মধ্যেই জামিনে মুক্তি পেয়ে বেরিয়ে আসবেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া।

বেগম খালেদা জিয়ার সিনিয়র আইনজীবী ও বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, জিয়া চ্যারিটেবল মামলাটি হাইকোর্ট ডিভিশনে রয়েছে। ৩০ জুনের পরে এই মামলার শুনানি হবে। আদালত সময় বেঁধে দিয়ে এই মামলার নথি তলব করেছিলেন আর ১২ দিন পরেই সেই সময় শেষ হয়ে যাবে। তিনি বলেন, এর মধ্যে নথি আসুক আর না-ই আসুক, তারা জামিন শুনানি করবেন।

মওদুদ আহমদ জানান গতকালই তারা জিয়া চ্যারিটেবল মামলায় জামিন শুনানির জন্য পিটিশন দিয়েছিলেন কিন্তু আদালত তাদের বলেছেন, নথি চেয়ে যে আদেশ আদালত দিয়েছেন তার সময় প্রায় শেষ হয়ে আসছে। এরপরই শুনানি হবে। একাদশ সংসদ নির্বাচনের বছর ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় পাঁচ বছরের সাজা পেয়ে কারাগারে যান খালেদা জিয়া। কারাগারে যাওয়ার মাসখানেকের মাথায় এই মামলায় তিনি হাইকোর্ট থেকে জামিন পেলেও তার বিরুদ্ধে থাকা অন্যান্য মামলা মুক্তির পথে বাধ সাধে। একটি মামলায় জামিন পেলে আরেকটি মামলা সামনে এসে দাঁড়ায়। এভাবেই কেটে গেছে কারাবন্দীর ১৬ মাস।

আইনজীবীরী জানান, বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৬টি মামলা রয়েছে। দুইটি মামলা ছাড়া এখন সব মামলায়ই তিনি জামিনে রয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার সর্বশেষ মানহানি ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে দায়ের করা পৃথক দুই মামলায় বেগম খালেদা জিয়াকে ছয় মাসের জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট।

মওদুদ আহমদ আরো জানিয়েছেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলাটি আপিল বিভাগে রয়েছে। এই মামলায় তিনি জামিন পেয়েছিলেন কিন্তু আদালত তার সাজা পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করেছেন। ৩০ জুনের পর জিয়া চ্যারিটেবল মামলায় তার জামিন শুনানি হবে। এটি শেষ হলে অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় জামিন চাওয়া হবে। তিনি বলেন, সরকারের তরফ থেকে কোনো জটিলতা সৃষ্টি করা না হলে আগামী দুই-আড়াই মাসের মধ্যেই আইনি প্রক্রিয়ায় মুক্তি পাবেন বেগম খালেদা জিয়া।

বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, খালেদা জিয়া সরকারের রাজনৈতিক রোষানলের শিকার। যে মামলায় তিনি কারাবন্দী রয়েছেন, সেই মামলায় তিনি এক মাসের মাথায়ই জামিন পেয়েছিলেন। অর্থাৎ তখনই তার মুক্তি পাওয়ার কথা, কিন্তু সরকারই তাকে একটির পর একটি মামলায় জড়িয়ে মুক্তির পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, সরকার যদি হস্তক্ষেপ না করে তাহলে বেগম জিয়া শিগগিরই মুক্তি পাবেন।

বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে বিএনপির প্রত্যেক নেতাকর্মী। দলীয় প্রধানের মুক্তির দাবিতে বড় কোনো আন্দোলন গড়ে না উঠলেও নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি চলছে থেমে থেমে। বিএনপির হাইকমান্ড নতুন করে কর্মসূচি দেয়ার কথা ভাবছে। গতকাল দুইটি মামলায় জামিন হওয়ায় নেতাকর্মীরা তাদের নেত্রী শিগগিরই মুক্তি পাবেন, এমন আশায় বুক বেঁধেছেন।

বেগম খালেদা জিয়া বর্তমানে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার শারীরিক অবস্থা উন্নতির দিকে- সরকার গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যরা এমন দাবি করলেও বিএনপি বারবার বলে আসছে, বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা মোটেও ভালো নয়। বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার দাবি তাদের।

গতকাল মানহানি ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে দায়ের করা পৃথক দুই মামলায় খালেদা জিয়াকে ছয় মাসের জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মুহাম্মদ আবদুল হাফিজ ও বিচারপতি আহমেদ সোহেল সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ উভয় মামলায় তাকে ছয় মাস করে জামিন দেন।

এমজে/