মৃত্যুশয্যায় এরশাদ: রওশনের কুরআন তেলাওয়াত, বুক কেঁপে উঠছে বিদিশার

মৃত্যুশয্যায় এরশাদ: রওশনের কুরআন তেলাওয়াত, বুক কেঁপে উঠছে বিদিশার

ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) আইসিইউতে চিকিৎসাধীন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় শঙ্কামুক্ত নন বলে জানিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিএম কাদের। উন্নত চিকিৎসার জন্য এই মুহূর্তে তাকে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার অবস্থা নেই বলেও জানান তিনি।

সোমবার রাজধানীর বনানীতে জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে এরশাদের শারীরিক অবস্থা তুলে ধরেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘ওনার (এরশাদ) শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। ডাক্তারদের ভাষ্য অনুযায়ী, স্থিতিশীল মানে হলো শুভ লক্ষণ। ডাক্তাররা শঙ্কা করেছিলেন যে, ওনার অবস্থার অবনতি হতে পারে। যেহেতু হয়নি, তাহলে মনে করতে হবে যে উন্নতির দিকে।’

তিনি আরো বলেন, ‘গতকাল ওনার লান্সের যে ইনফেকশন দেখা গিয়েছিল, আজকে দেখা গেছে যে, সেটি একটু কমের দিকে। এবং গতকাল যে ওনার শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল, ওনাকে অক্সিজেন আন্ডারপ্রেসার দিতে হতো, এখন ওনারা (চিকিৎসকেরা) দু’ঘন্টা আন্টারপ্রেসার অক্সিজেন দিচ্ছেন এবং দু ঘন্টার নরমাল অক্সিজেন দিচ্ছেন। ওনারা বলেছেন যে, এই ধরণের ট্রেন্ড চালু থাকলে, দু’ঘন্টা পর ওনাকে স্বাভাবিক অক্সিজেন দেওয়া হবে।’

চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে জিএম কাদের আরো বলেন, ‘এরশাদের কিডনিতে আবার একটু বেশি সমস্যা দেখা দিয়েছে। চিকিৎসকরা এখন সেদিকে দৃষ্টি রাখছেন। তবে, সবমিলিয়ে তিনি শঙ্কামুক্ত নন।’

এইচএম এরশাদের শারীরিক অবস্থা নিয়ে বিভ্রান্তি না ছড়ানোর আহ্বান জানিয়ে জিএম কাদের বলেন, ‘তার বয়স, শারীরিক জটিলতা এবং সমস্যাগুলো চিকিৎসকরা নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছেন।’

এদিকে এরশাদের শয্যাপাশে কোরআন তিলাওয়াত করলেন তার স্ত্রী ও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা রওশন এরশাদ। সোমবার দুপুরে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন এরশাদের শয্যাপাশে বসে প্রায় ঘণ্টাখানেক কোরআন তিলাওয়াত করেন তিনি।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি খন্দকার দেলোয়ার জালালী।

জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ বলেন, পল্লীবন্ধুর শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত আছে। তার অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। এ সময় এরশাদের রোগমুক্তি ও সুস্থতার জন্য দেশবাসীর দোয়া কামনা করেন রওশন এরশাদ।

অপরদিকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে দেখতে না পারার আক্ষেপ ঝাড়লেন সাবেক স্ত্রী বিদিশা।

রবিবার রাতে নিজ ফেসবুকে দেয়া এক স্ট্যাটাসে আক্ষেপ করে তিনি লিখেছেন, ‘এ নির্মমতার শেষ কোথায়? স্ত্রী দেখতে পারছে না তার স্বামীকে, সন্তান দেখতে পাচ্ছে না তার পিতাকে। এ রকম এক নির্মমতার মধ্যে দিয়ে অতিবাহিত করতে হচ্ছে আমার দিনগুলো। সবসময়ই বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠছে এই বুঝি কোনো দুঃসংবাদ শুনি, আর কারও কথা বলছি না, আমি সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সাহেবের কথা বলছি।

তিনি এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আছেন। অথচ তাকে নিয়ে চলছে রাজনীতি, কেউ বা চায় তার পদ দখল করতে কেউ বা তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি। কি নির্দয় এ সমাজের মানুষগুলো? যাদের জন্য জীবনে এত কিছু করে গেলেন তিনি, তারাই আজ তার মৃত্যু কামনা করছেন। বাবার মৃত্যুক্ষণে ছেলেকে সুকৌশলে দূরে রাখা হচ্ছে, কেউ কেউ তাকে নিয়ে নতুন স্বপ্ন দেখাও শুরু করেছেন।

আমি অতো সাত, পাঁচ বুঝি না, আর এগুলো বুঝতে চাইও না, আমি চাই আমার ছেলেটা সুন্দরভাবে বেড়ে উঠুক, বাবার স্বপ্ন পূরণে সেও এক সময় দেশ ও জাতির জন্য কাজ করবে, কিন্তু আমার ভয় হচ্ছে আমার ছেলেকে নিয়ে, ও যেন আমার মতো কোনো ষড়যন্ত্রের শিকার না হয়। তাই আমি এরশাদের গড়া জাতীয় পার্টির সব নেতাকর্মীকে অনুরোধ করব, আপনাদের নেতার এ দুঃসময়ে তার পরিবারের পাশে এসে দাঁড়ান সত্য উদঘাটন করুন, ষড়যন্ত্রের হাত থেকে এরিককে বাঁচান।

জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে কি এরিক তার বাবাকে দেখতেও পারবে না? পারবে না কি শেষবারের মতো একবার বাবা বলে ডাকতে? এই প্রশ্ন জাতীয় পার্টির প্রতিটি নেতাকর্মীর কাছে আমার রইল, পাশাপাশি উনার সুস্থতার জন্য সকলকে দোয়া করার অনুরোধ রইলো, বিদিশা।’

প্রসঙ্গত গত ২৬ জুন সকালে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্ক থেকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নেয়া হয়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে সিসিইউতে রাখা হয়েছে।

এমআই