বিরোধী দলকে নির্মূলের অশনী সংকেত স্পষ্ট হয়ে উঠেছে : রিজভী

বিরোধী দলকে নির্মূলের অশনী সংকেত স্পষ্ট হয়ে উঠেছে : রিজভী

বিরোধী দলকে নির্মূল-নিশ্চিহ্ন করতে আদালতকে নগ্নভাবে ব্যবহার করার মাধ্যমে এক অশনী সংকেত স্পষ্ট হয়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। পাবনার ঈশ্বরদীতে বিএনপির নয়জনের ফাঁসি ২৬ জনের যাবজ্জীবন ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই রায়ের মাধ্যমে সরকারের যে অসহিষ্ণুতা ফুটে উঠেছে তাতে ভিন্নমতকে দেশদ্রোহী হিসেবে দেখা হচ্ছে। সুতরাং বিএনপিসহ সরকারবিরোধী দলগুলোকে যেন অপরাধী ও দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকের মর্যাদায় নামিয়ে আনা হয়েছে।

রবিবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, তারা মানুষের বুকের উপর চেপে বসে জোর করে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সম্পূর্ণ উন্মার্গগামী হয়ে পড়েছে। যেকোন ভাবেই হোক জবরদস্তি করে এরা টিকে থাকতে চায়।

তিনি বলেন, সর্বশেষ ঈশ্বরদীর এ হাস্যকর মামলার রায় জনগণের কাছে স্পষ্ট করেছে যে কি পরিমাণ অপশাসন কুশাসন আর জুলুম চলছে। এই মামলা যাদের ফাঁসির রায় দেয়া হয়েছে তাদের অধিকাংশের এফআইআরে নাম পর্যন্ত ছিল না। মামলাটির সময় পুলিশ কোনো সাক্ষী না পেয়ে আদালতে চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করে। পরে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর শেখ হাসিনার নির্দেশে আজ্ঞাবহ পুলিশকে দিয়ে মামলাটি পূর্ণ তদন্ত করে নতুনভাবে ঈশ্বরদীর শীর্ষস্থানীয় ৫২ জন বিএনপি-যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীকে এ মামলায় আসামি বানানো হয়। তাদের অপরাধ তারা বিএনপি করে। এ কারণে বিচারের নামে আওয়ামী প্রহসনের নির্মম শিকার হলেন তারা।

রিজভী বলেন, দেশের সচেতন মানুষ আজ প্রশ্ন করছেন, যে ঘটনায় কেউ আহত হলো না নিহত হলো না সেই মামলায় ফাঁসি কি করা হয়? বিনা মেঘে কিভাবে বজ্রপাত সম্ভব? সম্ভব এজন্য যে দেশের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো জবরদখল করা এখন ষোলকলা পূর্ণ হয়েছে

তিনি বলেন, বর্তমান কর্তৃত্ববাদী মধ্যরাতের নির্বাচনের সরকার সব প্রতিষ্ঠানকে তার অধীন করেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে এই অগণতান্ত্রিক কাজগুলোকে বৈধতা দেয়া হয়েছে। ফলে গণতন্ত্র এখন আইসিইউতে মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছে, নির্বাচনগুলোতে জনগণের রায় প্রতিফলিত না হয় নিয়মরক্ষার আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত হয়েছে ।

বিএনপির এই সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ট্রেনের বহরে গুলির কারণে যদি ফাঁসি আর যাবজ্জীবন হয় তাহলে শত শত, হাজার হাজার খুনের শাস্তি কেমন হতে পারে?

তিনি বলেন, রাতের সিলমারা সরকারকে বলব, বিএনপিকে ধ্বংস করার কোনো মাস্টার প্ল্যান কাজ লাগবে না। দেশে মানুষ জেগেছে। ক্ষমতার প্রতি মোহাবিষ্ট প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই প্রতিহিংসার রাজনীতি থেকে সরে আসুন। বিএনপিকে কোনোকিছুতে ভয় দেখিয়ে লাভ হবে না।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, দেশব্যাপী আদিম সহিংসতা, নারী ও শিশু নির্যাতন ও তাদের আগুনে নিক্ষেপ, স্ত্রীর সামনে স্বামীকে প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে হত্যা, কিশোরকে নির্যাতনের পর আগুনে পুড়িয়ে হত্যা ইত্যাদির মতো হত্যা ও ধর্ষণের গুরুতর অপরাধের ঘটনাগুলো সমাজে, সংবাদমাধ্যমে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি হলেও সরকারের তাতে টনক নড়ে না। কারণ সরকার নতুন করে আইয়ামে জাহিলিয়াত চালু করেছে। দেশ পরিণত হয়েছে এক বর্বর রাষ্ট্রে।

তিনি বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে জনগণের মাঝে ফিরিয়ে দিন। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিন। অন্যথায় জনগণের অকল্পনীয় আন্দোলনে আপনাদের করুন পরিনীতি ঘনিয়ে আসছে।

রিজভী বলেন, গণতান্ত্রিক দেশে মিটিং মিছিল করা রাজনৈতিক দলগুলোর সংবিধান স্বীকৃত অধিকার। অথচ মিছিল করার অপরাধে আমিসহ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, সাংগঠনিক সম্পাদক মো: ইয়াছিন আলী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি এস এম জিলানী, উত্তর সভাপতি খায়রুল ইসলাম রবিন, দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এছাড়া মিছিল থেকে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সিনিয়র সহ-সভাপতি রফিক হাওলাদার, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আবু সালেহ, মোহাম্মদ রকিবুল, সাইফুল ইসলাম ও সাগরকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এছাড়া গতকাল বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম, এর আগে হবিগঞ্জ জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক জালাল আহমেদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল নেতা জাহিদুল ইসলাম মাসুম, ঢাকা মহানগর থানা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মান্নানকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

তিনি বলেন, নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের ও নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানাচ্ছি।

এমজে/