সরকার উন্নয়নের ঢোল বাজাচ্ছে : মির্জা আলমগীর

সরকার উন্নয়নের ঢোল বাজাচ্ছে : মির্জা আলমগীর

সরকার উন্নয়নের ঢোল বাজাচ্ছে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, গতকালও প্রধানমন্ত্রীর চীন থেকে ফেরত এসে যে সংবাদ সম্মেলন করেছেন সেখানে তিনি বলেছেন, ‘উন্নয়ন পেতে হলে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধিকে মেনে নিতে হবে, মূল্য দিতে হবে।’ অবশ্যই আমরা জানি, উন্নয়ন পেতে হলে মূল্য দিতে হয় কিন্তু সেটা কার জন্য! সেটা হতে হবে সাধারণ মানুষের জন্য।

কিন্তু আজকে উন্নয়নের কথা বলে জনগণের পকেট থেকে যে টাকা বের করে নেওয়া হচ্ছে, যেই অর্থ বের করে নেওয়া হচ্ছে সেই অর্থ ব্যবহার করা হচ্ছে শুধুমাত্র ক্ষমতাসীন দলের নেতৃবৃন্দের সুবিধার জন্য।

তিনি বলেন, আমরা খুব ভালো করেই জানি এই যে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে কেন? এলএনজি আমদানি করে এর ভর্তুকি দেওয়ার জন্য। এই এলএনজি কারা আমদানি করছেন? যারা ক্ষমতাসীনদের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত যারা মন্ত্রী উপদেষ্টা বা তাদের শুভাকাঙ্ক্ষী। তাদের জন্য আজকে বাড়তি যে খরচ, বাড়তি যে ব্যয় তা জনগণকে করতে হচ্ছে।

মঙ্গলবার রাজধানীর লেডিস ক্লাবে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (ড্যাব) এর কেন্দ্রীয় সম্মেলন ২০১৯ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ড্যাব এর আহ্বায়ক অধ্যাপক ডাঃ ফরহাদ হালিম ডোনার এর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব ডাঃ মোঃ ওবায়দুল কবির খান এর সঞ্চালনায় আরো উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নজরুল ইসলাম খান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডাঃ এ জেড এম জাহিদ হোসেন প্রমুখ।

মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে কঠিন দুঃসময় ও সংকটময় মুহুর্ত চলছে এবং আমরা যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী, আমরা যারা মনে করি গণতন্ত্রের মাধ্যমেই একটি দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হতে পারে তারা আজকে সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষার মধ্যে রয়েছি।

তিনি বলেন, আমাদের অধিকারগুলোকে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে, চলার পথে বাধা দেওয়া হচ্ছে। আমরা যারা গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করছি, লড়াই করছি তাদেরকে নির্যাতন করা হচ্ছে, নিপীড়ন করা হচ্ছে করা হচ্ছে, গুম ও খুন করে ফেলা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে কোনো রাজনৈতিক দলের গণতান্ত্রিকভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করা খুবই কঠিন ব্যাপার।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, বর্তমান সরকার নির্বাচিত সরকার নয়। তাদের কোন জবাবদিহিতা নেই। এই পার্লামেন্ট নির্বাচিত হতে পারেনি কারণ তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়নি। রাষ্ট্রের সকল যন্ত্রগুলোকে ব্যবহার করে জোর করে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে। তাই এদের জনগণের কাছে কোন দায়বদ্ধতা নেই। তাই গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পেলে কি! ভ্যাটের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলেই বা কি! তাদের একটি মাত্র লক্ষ্য একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করা। প্রকৃতপক্ষে তারা এক ব্যক্তির শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তাই গত এক যুগ ধরে তারা সকল আয়োজন গুলোকে সেভাবে সম্পন্ন করেছেন।

মির্জা ফখরুল বলেছেন, আপনারা দেখেছেন ২০০৮ সালের নির্বাচনের পরে সুপরিকল্পিতভাবে তারা সংবিধান পরিবর্তন করেছেন। খায়রুল হকের জাজমেন্ট এর পর থেকে তারা সংবিধানকে কাটাছেঁড়া করে এমন একটি জায়গায় নিয়ে এসেছেন যেখানে গণতন্ত্র মুখের বলি প্রকৃতপক্ষে আসলে কোন গণতন্ত্র নেই। গণতন্ত্রের সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভেঙে ফেলা হয়েছে। বিচার বিভাগকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে, এই বিচার বিভাগ কেমন একটি স্থানে নিয়ে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে, এখানে সরকারের আইন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বিচারকদের আদেশ দিতে হয়।

তিনি বলেন, আপনার দেখেছেন পাবনাতে সেই ১৯৯৪ সালে বিরোধীদলীয় নেত্রীর উপরে যে হামলা হয়েছে, সেখানে কোনো হতাহত হয়নি। যেকোনো হামলা যেকোনো সন্ত্রাস এর আমরা প্রতিবাদ করি। কিন্তু যেখানে কোনো হতাহত হয়নি এবং তিন বছর পরে একটি চার্জশিট দেওয়া হয়েছে আজকে ২৫ বছর পরে সেই মামলার রায় দিতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে ৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। যেখানে কোন মৃত্যুই হয়নি সেখানে ৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ২৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১৩ জনকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এই হল বিচার বিভাগের অবস্থা।

তিনি বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মামলাগুলোর দিকে তাকালে আপনারা দেখতে পাবেন, বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা সম্পূর্ণ সাজানো মিথ্যা মামলা এখানে কোন করাপশন হয়নি। সেখানে তাকে অন্যায়ভাবে শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তাকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে এবং ৫ বছর থেকে ১০ বছর সাজা বাড়ানো হয়েছে। এই মামলায় তিনি জামিন পাওয়ার যোগ্য কিন্তু তিনি জামিন পাচ্ছেন না। আজকে একই ধরনের মামলায় অন্যরা জামিন পাচ্ছেন, দেশনেত্রী জামিন হচ্ছে না। তার বিরুদ্ধে ৩৬টি মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে এর মধ্যে এমন মামলা রয়েছে তিনি একই সময় তিন স্থানে নাকি বোমা মেরেছেন। এর দ্বারা একটি জিনিসই প্রমাণিত হয় তারা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ভয় পান।

তারা জানেন, বেগম খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের প্রতীক। তিনি গণতন্ত্রের জন্য যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন তা এই দেশের মধ্যে না এই উপমহাদেশের মধ্যে খুব কম ব্যক্তি আছে যিনি গণতন্ত্রের জন্য এত ত্যাগ স্বীকার করেছেন। কাজেই তিনি যদি বেরিয়ে আসেন, জনগণের সামনে দাঁড়ান তবে কোন ভাবেই তাকে প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে না, তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবেন না। তাই দেশনেত্রী বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে বেআইনিভাবে আজকে কারাগারে আটকে রেখেছেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকের খুব পরিকল্পিতভাবে সরকার এ দেশকে একটি পরনির্ভরশীল দেশে পরিণত করতে যাচ্ছে। আজ শিক্ষিত যুবকরা চাকরি পায় না, কর্মসংস্থান নিজের নিচের দিকে নামছে। আজকে উন্নয়নের কথা বলে কোন দিকে আমাদের ছেলেদের চাকরি নাই। একই সময় আজকে ভারত থেকে কর্মী দেশে বিভিন্ন স্থানে কাজ করে প্রায় ১০ মিলিয়ন ডলার নিয়ে যাচ্ছে। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় বাংলাদেশের এই সরকার যারা জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছে তারা প্রকৃতপক্ষে জনগণের সরকার নয়।

তিনি বলেন, আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার মাধ্যমে গণতন্ত্রকে পুনঃ প্রতিষ্ঠা করি।

এমজে/