নেতাকর্মীদের ভালোবাসায় সিক্ত এরশাদ

নেতাকর্মীদের ভালোবাসায় সিক্ত এরশাদ

দুপুর ১২টার দিকে জাতীয় পার্টির কাকরাইল কার্যালয়ে আসেন দলটির চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। দুর্দান্ত প্রতাপশালী এই সামরিক শাসক নিজ দলের কার্যালয়ে এলেও ঢুকতে পারেননি ভেতরে। ঢুকবেন কি করে কাকরাইলে যে এরশাদ এসেছিলেন তার শরীরে যে প্রাণ নেই।

তাই তো সাবেক এই রাষ্ট্রপতির নিথর দেহটির গন্তব্য থেমে গেল কার্যালয়ের গেটের সামনের রাস্তায়। যেখানে একটি লাশবাহী ফ্রিজার ভ্যানের মধ্যে আটকে থাকলো তার দেহটি। সেখানে শত শত নেতাকর্মী ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানান আশির দশকের প্রতাপশালী এই সামরিক শাসককে। প্রিয় নেতার নিথর দেহটি দেখে কেউ কাঁদলেন, কেউ শোকে স্তব্ধ।

তিন ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে দলের চেয়ারম্যানকে একে একে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা ও বিদায় জানান ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা নেতাকর্মীরা।

এরশাদকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে খুলনা থেকে আসেন মো. সবুর মিয়া। তিনি বলেন, এরশাদকে অনেকে স্বৈরশাসক বলেন, তার বিভিন্ন সমালোচনা করেন। কিন্তু আমি বলি দেশের জন্য এরশাদ যা করেছেন, তা আর কেউ করেননি। তিনি স্বৈরশাসক হোক আর যাই হোক দেশের উন্নয়নের জন্য এমন নেতাই দরকার।

তিনি বলেন, আজ আমরা শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি কাটাচ্ছি। এটা এরশাদেরই অবদান। বিশ্বের অন্যান্য দেশে রোববার, সোমবার সাপ্তাহিক ছুটি। এরশাদ স্যার, অনেক লড়াই করে শুক্রবার আমাদের সাপ্তাহিক ছুটির রীতি চালু করেছেন। বায়তুল মোকাররম মসজিদকে জাতীয় মসজিদও করেছেন এই এরশাদ। তার পুরো কাজই ছিল দেশের ভালোর জন্য।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে আসা কাজী আলম বলেন, এরশাদ দেশের জন্য যে উন্নয়ন করেছেন তা আর কোনো সরকার করেনি। তার উন্নয়নের কারণেই তিনি পল্লীবন্ধুর উপাধি পেয়েছেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শত শত সেতু, রাস্তা করে দিয়েছেন তিনি। এমন নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ছুটে এসেছি।

পুরান ঢাকা থেকে আসা ফারুক বলেন, স্যারের মৃত্যুর সংবাদ শুনে গতকাল দুপুরে বনানীর কার্যালয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে স্যারের মরদেহ নেয়া হয়নি। পরে জানতে পারি আজ এখানে নিয়ে আসা হবে। স্যারকে শ্রদ্ধা জানাতে দুপুর ১২টার আগেই এখানে ছুটে আসি। কাফনের কাপড়ে মোড়ানো স্যারের নিথর দেহটি দেখে হৃদয়টা দুমড়ে-মুচড়ে যাচ্ছিল।

দুপুর ১২টার দিকে লাশবাহী ফ্রিজার ভ্যানে এরশাদের মরদেহ কাকরাইলে আনা হলে তাকে শেষ দেখা দেখতে অসংখ্য ভক্ত, নেতাকর্মী ও রাজনৈতিক ব্যক্তি ভিড় করেন।

লাশবাহী ফ্রিজার ভ্যানের সঙ্গে দলীয় কার্যালয়ে আসেন জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জি এম কাদের, মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা, প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার প্রমুখ।

শ্রদ্ধা শেষে তার মরদেহ জাতীয় বায়তুল মোকাররম মসজিদে নেয়া হচ্ছে। সেখানে বাদ আসর তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে আজ সকাল সোয়া ১০টার দিকে এরশাদের মরদেহ দ্বিতীয় জানাজার জন্য জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় নেয়া হয়। সেখানে তার দ্বিতীয় জানাজা সম্পন্ন হয়।

রবিবার ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন টানা আট বছর (১৯৮৩ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত) স্বাধীন বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতির ভূমিকায় থাকা এরশাদ।। তার বয়স হয়েছিল ৯০ বছর।

৯০ বছর বয়সী এরশাদ রক্তে সংক্রমণসহ লিভার জটিলতায় ভুগছিলেন। গত ২২ জুন সিএমএইচে ভর্তি করা হয় তাকে। এর আগেও তিনি একাধিকবার দেশ-বিদেশে চিকিৎসা নেন। রবিবার মৃত্যুর পর সেনা কেন্দ্রীয় মসজিদে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

এমজে/