‘মন্ত্রী-মেয়ররা প্রলাপ বকছেন’

ডেঙ্গু নিয়ে সরকারের লেজেগোবরে অবস্থা : রিজভী

ডেঙ্গু নিয়ে সরকারের লেজেগোবরে অবস্থা : রিজভী

ডেঙ্গু নিয়ে সরকারের নীরবতা ও ঢাকা সিটির দুই মেয়রের কড়া সমালোচনা করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। ডেঙ্গুর মতো মহামারিতে দেশের মানুষের মৃত্যু যেন তাদের কাছে খেলা। ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিন বাড়লেও এখনো কার্যকর ওষুধ কেনার কোনো উদ্যোগ নিতে পারেনি বর্তমান গণবিদ্বেষী অবৈধ সরকার। ন্যূনতম লজ্জা-শরম থাকলে এই ব্যর্থতার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী-মেয়ররা পদত্যাগ করতেন।

শনিবার নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ডেঙ্গু নিয়ে সরকারের লেজেগোবরে অবস্থা।

তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রের মা’, বাংলাদেশের আপামর জনতার প্রাণপ্রিয় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ঝুঁকিপূর্ণ শারীরিক অবস্থা নিয়ে আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। তার জীবন আজ অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার রোষানলে বিপন্ন। আপনারা দেখেছেন, গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারী তিনি মিথ্যা মামলার সাজানো প্রহসনের রায়ে কারাগারে যাওয়ার সময় সুস্থ সবল অবস্থায় পায়ে হেঁটে গেছেন। এখন তিনি হুইলচেয়ার ছাড়া চলাফেরা করতে পারছেন না। ইনসুলিন নেওয়ার পরও তার ‘ব্লাড সুগার’ নামছে না। ডায়াবেটিস কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না। এটা অব্যাহত থাকলে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তিনি এখন একদমই হাঁটতে পারছেন না। তার চরম অবনতি হওয়া স্বাস্থ্য পরিস্থিতি নিয়ে তার পরিবার, আমরা, দেশবাসী সবাই সীমাহীন উদ্বিগ্ন। প্রধানমন্ত্রী নিজেই লন্ডনে বলেছেন, ‘তারেক রহমান বাড়াবাড়ি করলে সারাজীবন তাঁর মা জেলে থাকবেন’।

সুতরাং বেগম খালেদা জিয়া জেলে আছেন শেখ হাসিনার কারণে, অন্য কোনো কারণই নেই। জেলে রেখে দেশনেত্রীকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়াই মনে হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর মূল লক্ষ্য। পথের কাঁটা সরাতে শেখ হাসিনা নির্বিবেক।

রিজভী বলেন, বিএনপি এবং সারাদেশের মানুষের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে জোরালোভাবে দাবি জানাচ্ছি- মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্রের জন্য আজীবন লড়াই করা একজন গুরুতর অসুস্থ বয়স্ক মহিয়সী নারীকে নিয়ে এবার প্রতিহিংসাপরায়ণতার রাজনীতি বন্ধ করুন। অনেক হয়েছে, এবার থামুন। অবিলম্বে নয়, আজই বেগম খালেদা জিয়াকে নি:শর্ত মুক্তি দিয়ে তাঁর সুচিকিৎসার সুযোগ দিন। প্রতিদিন তার শারিরীক অবস্থার গুরুতর অবনতি ঘটছে। তিনি যেখানে চিকিৎসা নিতে চান সেখানে তাঁকে চিকিৎসা গ্রহণের সুযোগ দিন। অন্যথায় কোনো ধরণের অঘটন ঘটলে তার জন্য সরকারকেই সম্পূর্ণ দায়ী থাকতে হবে।

তিনি বলেন, মরণঘাতী ডেঙ্গু জ্বর মহামারি আকারে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা এরই মধ্যে সাড়ে তিন লাখ ছাড়িয়ে গেছে। অথচ স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে-সারাদেশে কমপক্ষে ৯ হাজার ৬৫৭ জন মানুষ মশাবাহিত রোগে অসুস্থ হয়েছে। সরকার ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ ধামাচাপা দিতে সরকারী যন্ত্রকে ব্যবহার করছে যথেচ্ছভাবে। রাজধানী ঢাকার হাসপাতালগুলো ডেঙ্গু রোগীর ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে বলতে গেলে ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হয়েছে। কারণ কোনো জায়গাতেই বেড খালি নেই। কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতাল ডেঙ্গু রোগী ভর্তি বন্ধ করে দিয়েছে। হাসপাতাল থেকে অনেক রোগীকে ফেরত দেয়া হচ্ছে। এডিস মশাবাহিত এ রোগে এপর্যন্ত অন্তত: ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে বিভিন্ন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হিসাবানুযায়ী মৃত্যুর সংখ্যা হবে আরো বেশী। অথচ স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে এই ডেঙ্গু জ্বরে মাত্র ৮ জন রোগী মারা গেছে। এই ভয়াবহ ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবে আতংকে দিনযাপন করছেন নগরবাসী।

বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, ডেঙ্গু নিয়ে মানুষের যখন ত্রাহি অবস্থা তখন মধ্যরাতের ভোট চুরির সরকার এনিয়ে অস্বাভাবিক আচরণ করছে। মশা নিধনের কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি)-এর গবেষণায় যে ওষুধ অকার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে, সেগুলো দিয়েই চলছে ঢাকার দুই সিটির মশক নিধন কার্যক্রম। আর চরম ব্যর্থ মন্ত্রী-মেয়ররা হবুচন্দ্র রাজার গবুচন্দ্রের মতো প্রলাপ বকছেন। ওষুধ কেনায় ভয়াবহ দুর্নীতি আর অদক্ষতা ঢাকতেই ডেঙ্গুর মহামারিকে ঢাকার ভোটারবিহীন মেয়র’রা ‘গুজব’ বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন। এছাড়াও ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে তারা রসিকতা করছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘ডেঙ্গু মশার প্রজনন রোহিঙ্গাদের মতো, তাই এটি প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না।’

একজন মেয়র বলেছেন-দক্ষিণে ঔষুধ দিলে এডিস মশা উত্তরে চলে যায়, আর উত্তরে দিলে দক্ষিণে চলে আসে। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত মানুষকে নিয়ে ক্ষমতাসীনদের এই সকল নিষ্ঠুর তামাশায় ফরাসী বিপ্লবের সময় ফ্রান্সের কান্ডজ্ঞানহীন রানীর কথাই মনে পড়ে। যখন এক টুকরো রুটির জন্য সারা প্যারিস শহরের মানুষ হাহাকার করছে তখন ফ্রান্সের রানী সেই কথা শুনে বলেন-রুটি না থাকলে কেক খাবে। সুতরাং যুগেই যুগেই রোগে-শোকে-ক্ষুধায় অসহায় নিপীড়িত মানুষদেরকে তাচ্ছিল্য ও অবজ্ঞা করতে বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও ঢাকার মেয়রদের মতো লোকের অভাব ছিল না। স্থানীয় সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী মশার ওষুধের কার্যকারিতা নিয়ে সাফাই গেয়েছেন।

রিজভী আরো বলেন, তথ্যমন্ত্রী বলেছেন, গলাকাটার গুজবে জড়িত সন্দেহে যাদেরকে আটক করা হয়েছে তার ৭০ ভাগ লোক বিএনপির নেতাকর্মী। পুলিশ বলছে এই গুজবটি দুবাই থেকে ছড়ানো হচ্ছে, তারা বেশকিছু ফেসবুক আইডি বন্ধ করে দিয়েছে। তাহলে বিএনপি নেতাকর্মীরা কিভাবে জড়িত হলো? আসলে আওয়ামী লীগ পেশাদার মিথ্যাবাদী দল। এরা যে কতবড় জলজ্যান্ত মিথ্যা কথা বলার দল তার একটি নমূনা উল্লেখ করতে চাই। আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে-২০০৮ এর নির্বাচনের সময় শেখ হাসিনা বলেছিলেন-১০ টাকা কেজি চাল খাওয়াবেন, কিন্তু ২০১০-১১ সালে চালের দাম যখন ৪৫-৫০ টাকা তখন ১০ টাকা কেজি দরে চাল খাওয়ানোর অঙ্গীকারের কথা বিরোধী দলসহ গণমাধ্যমের কলামিষ্ট-সাংবাদিকরা বক্তব্য-বিবৃতি ও লেখানির মাধ্যমে তা প্রচার করলে সেই অঙ্গীকারের কথা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সরাসরি অস্বীকার করেন।

তিনি বলেন আমি ১০ টাকা কেজি দরে চাল খাওয়ানোর কথা বলিনি। কিন্তু ২০১১ সালে ঢাকায় বিএনপির একটি জনসভায় শেখ হাসিনার ১০ টাকা কেজি দরে চাল খাওয়ানোর বক্তব্যে ভিডিও জনসম্মুখে প্রচার করা হয়। সুতরাং মিথ্যা বলাকে আওয়ামী লীগ অনৈতিক কাজ বলে মনে করে না।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ‘টপ টু বটম’ মিথ্যার সংস্কৃতিতে অভিষিক্ত। উন্মাদ একদলীয় শাসন জারি রাখতে গিয়ে তারা সারাদেশে রক্ত ঝরাচ্ছে। পাঁচটি কারণে এখন সমাজে অরাজকতা চলছে-একটি হলো গণতন্ত্রহীনতা, আইনের শাসনের অনুপস্থিতি, ন্যায় বিচার না পাওয়া, সরকারী দলের নেতাকর্মীদের অনাচারে লিপ্ত হওয়া এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি মানুষের আস্থাহীনতা। দেশে নৈরাজ্যের বিভিষিকা মানুষকে ভয়ের রাজ্যে ঠেলে দিয়েছে। দেশের সাবেক প্রধান বিচারপতিকেও অন্য দেশে শরণার্থী হতে হচ্ছে। সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা বলেছেন-আমি সরকারের কথা শুনিনি বলেই আমাকে দেশ থেকে বের করে দেয়া হয়েছে এবং আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে।

সুতরাং এই ঘটনাতেই বোঝা যায়-দেশে আইনের শাসন নয়, সন্ত্রাসীদের শাসন চলছে। ক্ষমতাসীনরা জনমতের তোয়াক্কা না করে যেভাবে যক্ষের ধনের মতো ক্ষমতাকে আগলে রেখেছে তাতে যেকোনো মূহুর্তে তাদের ‘প্যারাডাইস লষ্ট’ হতে পারে। স্বর্গ থেকে বিদায় হতে বেশী সময় লাগে না।

এমজে/