খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে তামাশা করছে সরকার : রিজভী

খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে তামাশা করছে সরকার : রিজভী

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ন মহাসচিব এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সরকারের মন্ত্রীরা গুরুতর অসুস্থ দেশনেত্রীর শারীরিক অবস্থা নিয়ে উপহাস করছেন, অবজ্ঞা আর মিথ্যাচার করছেন। অথচ কয়েক মাস আগেও সেতুমন্ত্রী জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ছিলেন। রাষ্ট্রের বিপুল অর্থ ব্যয়ে সিঙ্গাপুর থেকে তার চিকিৎসার জন্য এয়ার এম্বুলেন্স, বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আনা হয়েছিল। তিনি ফলোআপ চিকিৎসার জন্য নিয়ম করে সিঙ্গাপুর যাচ্ছেন। আমরা কোনদিন তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে উপহাস তো করিনি!

রিজভী বলেন, অসুস্থতা নিয়ে নাট্যতামাশা করা আমাদের সংস্কৃতি নয়। আমরা তো সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রীকে তার পছন্দমতো হাসপাতালে সুচিকিৎসা চেয়েছি। অথচ আওয়ামী নেতারা সেটি নিয়ে করছেন উপহাস-তামাশা!

রবিবার দুপুরে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার আশঙ্কাজনক অবনতি ঘটেছে উল্লেখ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার শারিরীক অবস্থার আশঙ্কাজনক অবনতি ঘটেছে। বিএনপির পক্ষ থেকে তার জীবনের ঝুঁকিপূর্ণ গুরুতর অসুস্থতার কথা জাতির সামনে বারবার তুলে ধরা হয়েছে, অথচ বেগম জিয়ার চিকিৎসা হয়েছে তার ইচ্ছার বাইরে নামকাওয়াস্তে।

তিনি বলেন, গতকালও সেতুমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে কটাক্ষ করেছেন; কিন্তু গতকালই গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তীব্র ব্যথা নিয়ে দাঁতের চিকিৎসা নিতে হয়েছে। সেখানে ২০ মিনিট বসিয়ে রেখে কী চিকিৎসা করা হয়েছে আমরা জানিনা; কিন্তু গণমাধ্যমে আমরা বেগম জিয়ার যে ছবি দেখেছি সেটি ছিল তীব্র ব্যথায় যন্ত্রণাক্লিষ্ট মানুষকে হুইল চেয়ারে বসিয়ে নিয়ে যাওয়ার ছবি। চার দেয়ালের মধ্যে কারারুদ্ধ অবস্থায় বিনা চিকিৎসায় তার ডায়াবেটিস সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে, এখন তার অবস্থা জীবন-মৃত্যুর লড়াইয়ের মধ্যে। ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে তার নিয়ন্ত্রণহীন ব্লাডসুগার। জিহ্বার আলসারের কারণে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে, যা দিনকে দিন আরও গুরুতর হচ্ছে। ফলে তিনি কিছুই খেতে পারছেন না।

রিজভী আরো বলেন, আর্থ্রাইটিস ও ফ্রোজেন শোল্ডার সমস্যার কারণে স্বাস্থ্যের আরও গুরুতর অবনতি ঘটছে বেগম জিয়ার। ঘাড়-মাথা সোজা রাখতে পারছেন না। কয়েক বছর আগে অপারেশন করা চোখ এবং হাঁটুর ব্যাথা ক্রমশ বৃদ্ধির ফলে কষ্টে কাতরাচ্ছেন ‘গণতন্ত্রের মা’।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, শনিবার দেশনেত্রীকে যখন পিজি হাসপাতালের কেবিন ব্লক থেকে হুইল চেয়ার থেকে নামিয়ে গাড়িতে তোলা হচ্ছিল তখন দুইজনে ধরেও তাকে দাঁড় করাতে পারেনি। হুইল চেয়ারেও বসতে পারছিলেন না, কাত হয়ে পড়ে যাচ্ছিলেন।

লিভিশনের পর্দায় দেশনেত্রীর এই ভয়ংকার অসুস্থতার দৃশ্য দেখার পর অশ্রুশিক্ত হয়েছেন অগনিত মানুষ। আর দেশনেত্রীর এহেন অসুস্থতায় আওয়ামী নেতাদের বক্তব্যে আনন্দ ঝরে পড়ছে। বিএসএমএমইউর পক্ষ থেকে সরকারি বার্তাই জনগণের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। বাস্তবে বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ, তার উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন, কিন্তু সরকার সেটি অগ্রাহ্য করছে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল বলেছেন- ‘খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে বিএনপি অপপ্রচার করছে। গল্পের রাখাল বালকের মতো খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবনতি আর অবনতি। ডাক্তাররা বলেন তিনি ভালো আছেন’। তার বক্তৃতাই তিন ঘন্টা পরে হুবহু শোনা গেল বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষের মুখে।

এই বিএনপি নেতা বলেন, আমি বিএনপি ও গোটা দেশবাসীর পক্ষ থেকে জোর দাবী জানাচ্ছি, বেগম খালেদা জিয়াকে দ্রুত মুক্তি দিয়ে তার পছন্দ অনুযায়ী বিশেষায়িত কোন হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ দেয়া হোক। তার শারিরীক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটছে। তাকে বাঁচতে দিন। দেড় বছর তো বিনা অপরাধে সাজা খাটালেন। এবার প্রতিহংসা-ঈর্ষা বন্ধ করুন। তাকে মুক্তি দিয়ে বন্যা-ডেঙ্গু মোকাবেলার চেষ্টা করুন।

এমজে/