দুই মেয়রের পদত্যাগ ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে বরখাস্তের দাবি আলালের

দুই মেয়রের পদত্যাগ ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে বরখাস্তের দাবি আলালের

মহামারি ডেঙ্গু নিয়ে বিএনপি’র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেছেন, ‘৯১ এর ঘূর্ণিঝড় বেগম খালেদা জিয়া বিদেশ সফর সংক্ষিপ্ত করে তিন দিনের মাথায় বাংলাদেশে চলে এসেছিলেন। চলমান মহামারি দুর্যোগের পরেও বর্তমান সরকার কোথায়? সরকারের সমালোচনা মানে সরকারের শত্রুতা নয়। সরকারের সমালোচনার অর্থ হলো, সরকারের ভুল ধরিয়ে দেয়া। সরকারের সমালোচনা করার মানে দায়িত্বশীলরা যেনো ভালোভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারে সেই কাজে সহায়তা করা।’

শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ডেঙ্গু আক্রান্তদের ফ্রি টেস্ট ও চিকিৎসা এবং বনার্ত এলাকার সকল ঋণ মওকুফ ও সুদবিহীন নতুন ঋণ প্রদানের দাবিতে বাংলাদেশ মানবাধিকার পরিষদ কর্তৃক আয়োজিত মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশ মানবাধিকার পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান শামসুল আলমের সভাপতিত্বে এবং সংগঠনের মহাসচিব আ স ম মোস্তফা কামালের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মোহাম্মাদ রহমাতুল্লাহ, অ্যাডভোকেট আবেদ রেজা, তাঁতী দলের যুগ্ম-আহ্বায়ক ড.কাজী মনিরুজ্জামান মনির, কৃষকদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এম জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ বক্তব্য দেন।

মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, আমাদের রাজনীতির মূল বিষয় হচ্ছে আত্ব মানুষের পাশে থাকা, অসহায় মানুষের পাশে থাকা এবং নির্যাতিত মানুষকে সহায়তা করা। আপনারা দেখেছেন প্রথম থেকেই অর্থমন্ত্রী শুরুতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় জাতীয় বাজেট পেশ করতে পারেননি। অর্থমন্ত্রী পরবর্তীতে অনেকবার বলেছেন, আমি অফিসে যাই না ডেঙ্গু মশার ভয়ে। নাসিম সাহেব বলেছেন দুই মেয়র ব্যর্থ। মোহাম্মদ নাসিম গত কালও আবার বলেছেন, আওয়ামী লীগের নেতারা ফিল্মি স্টাইলে রাজধানীর প্রধান সড়কে ঔষধ ছড়ালে তাতে কাজ হবেনা। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় যেতে হবে। একইসাথে তাদের ব্যর্থতা এবং এই নকল মশার ওষুধ এক মেয়র স্বীকার করেন আরেক মেয়র স্বীকার করেন না। এই সমন্বয়হীনতার মধ্য দিয়ে দেশে আবার নতুন করে একটি মহামারী আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। অবশেষে এটার মধ্যে আরো চিনি ঘি ইত্যাদি দিয়ে ভালো করে পাকিয়ে দিয়েছেন এইচটি ইমাম সাহেব। তিনি গতকাল বলেছেন যে, ঈদের সময় যারা বাড়িতে যাবেন যাবার আগে ঢাকায় রক্ত পরীক্ষা করিয়ে নিয়েন। নাহলে কিন্তু এই জীবানু কিন্তু গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত ছড়িয়ে যাবে। তিনি চমৎকার একটি কাজ করেছেন। যে আতঙ্কটা মূলত রাজধানীতে বেশি ছিলো সেই আতঙ্কটাকে এইচটি ইমাম সাহেব প্রধানমন্ত্রীর রেফারেন্সে সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দিলেন। এটাই দায়িত্বহীনতার নমুনা।

বিএনপি’র এই যুগ্ম মহাসচিব বলেন, কিছু দিন আগে আমাদের জাতীয় দুর্যোগ ফনি যখন এসেছিলো তখন আওয়ামী লীগের নেতা মোহাম্মদ হানিফ বলেছেন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের অগ্রীম সতর্কবার্তা পাওয়ার কারণে ফনি মোকাবেলা করতে পেরেছি। ওয়েদার স্যাটেলাইট কোনটা আর মূল স্যাটেলাইট কোনটা এইটা বুঝে না। এই হলো আওয়ামী লীগ নেতাদের বৈশিষ্ট্য। তখন একটি টেলিভিশন প্রচার করলো যে ছাত্রলীগ প্রস্তুত থাকার কারণে ঘূর্ণিঝড় ফনি শক্তিশালী হতে পারেনি। এই হলো হবুচন্দ্র রাজার গবুচন্দ্র তোষামোদকারীদের দেশে আমরা বসবাস করছি।

মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, আমরা এই ডেঙ্গু মশার প্রকোপ থেকে বাঁচার জন্য গণ সচেতনতা কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। সারাদেশে বিতরনের জন্য লক্ষ লক্ষ লিফলেট আমরা ছাপিয়েছি। ড্যাবের নেতৃত্বে মেডিকেল টিম হয়েছে। আপনারা দেখছেন গতকালও প্রশাসন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সচেতনতা মূলক র্যালীর অনুমোদন দেয়নি। আমরা বলবো অনতিবিলম্বে বাংলাদেশের দল মত নির্বিশেষে সমস্ত চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ এবং জনগণের কল্যাণে যারা কাজ করছে সে সকল মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে একটি ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার করা হোক। যেখান থেকে ডেঙ্গু রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেয়া হবে। বিনামূল্যে চিকিৎসা দিতে হবে।

সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ৬ লক্ষ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। যে টাকা দিয়ে ১৮ টি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা যায়। ডেঙ্গু আক্রান্ত গরিব মানুষদের চিকিৎসা কেন বিনামূল্যে করতে দিবেন না? ঋণখেলাপিদের শেয়ার মার্কেট ছেড়ে দিয়েছেন, ঋণখেলাপিদের ব্যাংক ছেড়ে দিয়েছেন, লুটপাটের স্বর্গ রাজ্য করে দিয়েছেন। তাহলে কেনো কৃষকের ঋণ মওকুফ করবেন না?

বিএনপির এই যুগ্ম মহাসচিব আরো বলেন, আমাদের মূল কথা হচ্ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত গরিব মানুষদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দিতে হবে। দুই মেয়রকে অনতিবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে, স্বাস্থ্য মন্ত্রীকে বরখাস্ত করতে হবে এবং সাধারণ মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো যেভাবে এগিয়ে এসেছে তাদেরকে শত্রু মনে করে দমন না করে তাদেরকে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। এনজিওগুলো যে গ্রামে কৃষকদের ঋণ দিয়েছে সেই ঋণগুলো মওকুফ করে এগুলোকে সরকারের পক্ষ থেকে সহয়তা দেয়া হোক। যেন মরার উপর খাড়ার ঘা এর মত বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ মারা না যায়। তারা যেনো ফসল ফলাতে পারে, বীজতলা তৈরি করতে পারে এ দিকে লক্ষ্য রাখা সরকারের দায়িত্ব। আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করার জন্য প্রস্তুত রয়েছি।

তিনি বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে রয়েছেন। নিজের অসুস্থতা উপেক্ষা করে তিনি আমাদেরকে বারংবার বলছেন, এই কাজে সারাক্ষণ নিজেদের মেধা এবং শ্রম দেয়ার জন্য। জনাব তারেক রহমান লন্ডন থেকে নির্দেশ দিচ্ছেন সেই অনুযায়ী আমরা আত্ম মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে আছি আমরা কোন অন্যায় করেনি।

এমআই