আওয়ামী লীগের হুমকি নিয়ে মুখ খুললেন ডাকসু ভিপি

‘সরকার ইচ্ছা করে খালেদা জিয়াকে জেলে রেখেছে, বিরোধিতা করলে একি পরিণতি’

‘সরকার ইচ্ছা করে খালেদা জিয়াকে জেলে রেখেছে, বিরোধিতা করলে একি পরিণতি’

সরকার ইচ্ছে করেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে জেলে আটক রেখেছে। ক্ষমতাসীন সরকারের বিরোধিতা করলে খালেদা জিয়ার মতোই পরিণতি ভোগ করতে হবে-আওয়ামী লীগ ও সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে এমন হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহসভাপতি (ভিপি) নুরুল হক।

তিনি বলেন, “সরকারের বিরোধিতা না করার জন্য আমাদের বারবার হুমকি দিচ্ছে। তারা এমনকি প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দিচ্ছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে তুলনা করেও বলা হয়েছে যে সরকার ইচ্ছা করে তাঁকে জেলে রেখেছে। আমরাও যদি সরকারের বিরুদ্ধাচরণ করি, আমাদের পরিণতিও সে রকম হতে পারে—এ রকম হীন হুমকিও তারা দিচ্ছে।”

সোমবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ভিপি নুরুল হক এসব কথা বলেন। গত বুধবার পটুয়াখালীর গলাচিপা থেকে দশমিনা এলাকায় যাওয়ার পথে উলানিয়া বাজারে হামলার শিকার হন তিনি। এ বিষয়ে নিজের বক্তব্য জানাতেই সংবাদ সম্মেলন ডাকেন নুরুল।

নুরুল হক বলেন, অন্যায়-অনিয়মের প্রতিবাদ করায় তিনি ও তাঁর সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতা-কর্মীরা ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের রোষানলের শিকার হচ্ছেন।

তিনি অভিযোগ করেন, “আমি কোনো অন্যায় বা অপরাধ করিনি। শুধু অন্যায়-অনিয়মের প্রতিবাদ করার কারণেই আমি ও আমার সংগঠনের নেতা-কর্মীরা বারবার ক্ষমতাসীন দলের রোষানলের শিকার হয়েছি। ক্ষমতাসীন দলের নেতা ছাড়াও সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার লোকদের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত হুমকির সম্মুখীন হচ্ছি। তারা সরকারের বিরোধিতা না করার জন্য আমাদের বারবার হুমকি দিচ্ছে। তারা এমনকি প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দিচ্ছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে তুলনা করেও বলা হয়েছে যে সরকার ইচ্ছা করে তাঁকে জেলে রেখেছে। আমরাও যদি সরকারের বিরুদ্ধাচরণ করি, আমাদের পরিণতিও সে রকম হতে পারে—এ রকম হীন হুমকিও তারা দিচ্ছে।”

পটুয়াখালীতে হওয়া হামলার বিষয়ে নুরুল অভিযোগ করে আরও বলেন, “স্থানীয় সংসদ সদস্য এস এম শাহজাদা সাজু এবং চাঁদাবাজ ও মাদক ব্যবসায়ী গলাচিপা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীন শাহের নেতৃত্বে তাঁর ভাই নূরে আলমসহ লিটু পেয়াদা, আব্বাস পেয়াদা, পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাইনুল ইসলাম রনো, উপজেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক, উলানিয়া যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাকিল, যুবলীগ নেতা ইদ্রিস, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক ফরিদ আহসান কচিন ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহমেদ আসিফ, ছাত্রলীগ নেতা জাহিদসহ আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের শতাধিক নেতা-কর্মী আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে রড, স্টিলের চেইন ও চাপাতি নিয়ে আমার ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। হামলায় আমিসহ ২০ থেকে ২৫ জন আহত হন, যাঁদের মধ্যে চার-পাঁচজনের অবস্থা গুরুতর ছিল। সন্ত্রাসীরা শুধু হামলা করেই ক্ষান্ত হয়নি, চিকিৎসার মতো মৌলিক সেবা থেকেও আমাদের বঞ্চিত করেছে। কোনো মিডিয়াকে ফুটেজ নেওয়ার জন্য হাসপাতালে যেতে দেয়নি। কোনো রকম চিকিৎসা না দিয়ে জোর করে তাঁরা আমাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। গলাচিপা হাসপাতালে অবস্থানকালেও তাঁরা আমার পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও সমর্থকদের গ্রেপ্তারের হুমকি দেখিয়েছে।”

এ পর্যন্ত মোট আটবার ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের দ্বারা হামলার শিকার হয়েছেন—এমন অভিযোগ করে নুরুল হক বলেন, “একটি ঘটনাতেও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পুলিশের নীরব ভূমিকা ছিল সন্ত্রাসীদের সহায়ক। সর্বশেষ ১৪ আগস্টের ঘটনার আগে হামলার আশঙ্কায় গলাচিপা পুলিশের সহযোগিতা চাইলেও ওসি কোনো ধরনের সহযোগিতা করেননি। এমনকি পুলিশের উপস্থিতিতে সন্ত্রাসীরা আমার ওপর হামলা চালায় এবং আমার স্বজন ও সমর্থকদের গ্রেপ্তারের হুমকি দেয়। এমতাবস্থায় আমি নিজের প্রাণনাশের শঙ্কা বোধ করছি। হামলাকারীদের একটিই উদ্দেশ্য। সেটি হচ্ছে আমাকে হত্যা করা এবং আমার সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মনোবল দুর্বল করে দেওয়া। তাই আমি ছাত্রসমাজ তথা দেশবাসীর কাছে অনুরোধ করব, আপনারা আমার তথা অন্যায়ের প্রতিবাদী মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সন্ত্রাসীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার হোন।”

“এমতাবস্থায় আমি আমার প্রাণনাশের শঙ্কাবোধ করছি। ছাত্রসমাজ তথা দেশবাসীর কাছে অনুরোধ, আপনারা আমার তথা অন্যায়-অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে সন্ত্রাসীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার হোন। আমি কোন অন্যায়-অপরাধ করিনি। শুধুমাত্র অন্যায়-অনিয়মের প্রতিবাদ করার কারণেই আমি ও ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতা-কর্মীরা বার বার ক্ষমতাসীন দলের রোষানলের শিকার হয়েছি। ক্ষমতাসীন দলের নেতা ছাড়াও সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার লোকদের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত হুমকির সম্মুখীন হচ্ছি।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে নিজের ওপর হওয়া হামলার বিচার দাবি করেন নুরুল হক।

তিনি বলেন, “কিছুদিন আগেও আপনি বলেছেন যে সরকারের সমালোচনা করতে কোনো বাধা নেই, ভিন্নমত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে। আপনার কাছে জোরালো অনুরোধ, ভিন্নমতের মানুষের ওপর দমন-পীড়ন বন্ধ করে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখতে আপনার দলের নেতা-কর্মী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দিন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দলীয় প্রভাবমুক্ত করে কার্যকর করুন। আমার সংগঠনের নেতা-কর্মীদের অযথা হয়রানি বন্ধ করুন। আমাদের ওপর যারা বারবার হামলা করছে, তাদের দ্রুত গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়ে আপনি দেশে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচারের দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন বলে আমরা আশা করছি।”

“ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতা-কর্মীদের অযথা হয়রানি বন্ধ করুন এবং যারা হামলার সঙ্গে জড়িত তাদেরকে অতিদ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার নির্দেশ দেন। কারণ অন্যায়ভাবে কাউকে হয়রানি করে তার মুখ বন্ধ রাখা যায় না।”

সংবাদ সম্মেলনে কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া নুরুল হকের সংগঠন সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতা–কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।