ডা. জাফরুল্লাহসহ ৭৬ জনের বিরুদ্ধে আ’লীগ নেতার মামলা

ডা. জাফরুল্লাহসহ ৭৬ জনের বিরুদ্ধে আ’লীগ নেতার মামলা

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে প্রধান করে ৭৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। আশুলিয়ায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র পিএইচএ ভবণের প্রবেশ গেট সংলগ্ন দু’পাশের স্থাপনা ভাংচুর ও মারধরের অভিযোগে সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক নাসির উদ্দিন বাদি হয়ে বৃহস্পতিবার সকালে আশুলিয়া থানায় এ মামলা (নং-৪৭) দায়ের করেন।

মামলায় জাফরুল্লাহ চৌধুরী ছাড়াও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আসামী করা হয়েছে।

মামলায় উল্লেখযোগ্য আসামী হলেন-গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণস্বাস্থ্যের নির্বাহী পরিচালক সাইফুল ইসলাম শিশির, ড. আঃ কাদের, প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্দুস সালাম, গোলাম মোস্তফা বাবু, আলমগীর হোসেন, মোঃ সোহেল, আওলাদ হোসেন, রাসেল, গণবিশ্ব বিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মীর মুরতজা আলী বাবু, ডাঃ রেজাউল হক, ইশরাফিল, জুয়েল রানা, লুৎফর রহমান, আবুল কালাম, আব্দুস সামাদ, মুজাহিদ, সেন্টু, ইকরাম, আরিফ, অন্তু এবং আরো অজ্ঞাত নামা ৭৬ জন।

এ ব্যাপারে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দেলোয়ার হোসেন বলেন, গণস্বাস্থ্যের আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র পিএইচএ ভবন প্রবেশ গেটের দু’পাশের পাথালিয়া মৌজার জমি দীর্ঘদিন যাবৎ গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ভোগ দখল করে আসছে এবং প্রতিষ্ঠানের নামে দলিল, খাজনা খারিজ হালনাগাদ করা রয়েছে। এমতাবস্থায় স্থানীয় আওয়ামীলীগ পরিচয়ধারী নাসির উদ্দিন উল্লেখিত জমি তার ক্রয়কৃত সম্পত্তি দাবি করে গত বছর জোরপূর্বক ভাংচুর চালিয়ে জবর দখল করে। এসময় পিএইচএ ভবনের নির্মিত নান্দনিক গেটটি এবং গেট সংলগ্ন নিরাপত্তা ভবনও ভাংচুর চালিয়ে জবর দখল করে সেখানে স্থাপনা তৈরি করে। যা দলীয় শক্তির অপব্যবহার করে অবৈধ পন্থায় সম্পত্তি হাতিয়ে নেয়ার প্রয়াস।

সেখানে ফুড প্যালেস এন্ড পার্টি সেন্টার নামে সাইনবোর্ড টানিয়ে রাখা হয়। এ ঘটনায় গণস্বাস্থ্যের পক্ষে প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্দুস সালাম বাদি হয়ে আদালতে জমি সংক্রান্ত একটি মামলা দায়ের করেন। যা বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে। ওই মামলায় হেরে যাওয়ার ভয়ে নাসির উদ্দিন এর নেতৃত্বে তার সাঙ্গ-পাঙ্গরা অপরাধ সংঘটিত করে হয়রানির উদ্দেশ্যে বয়োবৃদ্ধ ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরীসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তা, শিক্ষক, চিকিৎসক, সেবাদানকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ এজাহার নামীয় ২১ জন এবং অজ্ঞাতনামা ৫০/৬০ জনকে একটি সাজানো মামলায় আসামী করেছে। নাসির উদ্দিন গংদের এহেন মামলার তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানান গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার।

তিনি আরো বলেন, ২১ আগস্ট বুধবার ভোর ৫টায় প্রতিদিনের মতো গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গাড়ি (ঢাকা মেট্রো স-১১-০০১৭) ঢাকা থেকে শিক্ষকদের বহন করার জন্য সাভার আশুলিয়ার নলাম ক্যাম্পাস থেকে বের হয়। গাড়িতে চালক জয়নাল হোসেন ও সুপারভাইজার ইউসুফ আলী উপস্থিত ছিলেন। গাড়িটি ক্যাম্পাস সংলগ্ন ঘোড়াপীর মাজার এর কাছে এসে পৌঁছলে ৩ জন অপরিচিত লোক লাঠি সোটা, লোহার রড হাতে গাড়ির পথ রোধ করে দাড়ায় এবং গাড়ি থামাতে বলে। চালক গাড়ির গতি কমালে পার্শ্ববর্তি স্থান থেকে আরো ২০/২৫ জন লাঠি সোটা নিয়ে এগিয়ে এসে গাড়িটি ভাংচুর করে এবং গাড়িতে ওঠার চেষ্টা করে। এসময় জীবন বাঁচাতে এবং গাড়ির নিরাপত্তার বিষয় বিবেচনা করে চালক গাড়ির স্পীড বাড়িয়ে দিয়ে ওই স্থান ত্যাগ করে ঢাকায় চলে আসে। কোন রকম উস্কানি ছাড়াই এ সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়েছে। শিক্ষকদের বহনকারি গাড়িতে হামলা করায় তাদের নিরাপত্তাহীনতায় ছাত্রদের মধ্যে প্রতিবাদি মনোভাব লক্ষ্য করা গেছে বলেও তিনি জানান। গাড়ি ভাংচুরের ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের করলেও পুলিশ কোন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। অথচ বয়োবৃদ্ধ ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী সহ ৭৬ জনের বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানা পুলিশ মামলা গ্রহণ করেছে। পুলিশের পক্ষপাত মূলক আচরণে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, এ ঘটনার মধ্য দিয়ে আশুলিয়া থানা পুলিশের প্রতি সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীদের মাঝে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হবে বলেও জানান। অবিলম্বে মামলাটি প্রত্যাহারের জন্য তিনি আহ্বান জানান।

জানতে চাইলে আশুলিয়া থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) জাভেদ মাসুদ বলেন, নাসির উদ্দিনের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে এবং পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সত্যতা প্রমাণ পাওয়ায় মামলা গ্রহণ করা হয়েছে। তবে গণ স্বাস্থ্যের পক্ষেও একটি গাড়ি ভাংচুরের অভিযোগ পেয়েছেন বলেও তিনি স্বীকার করেন। এ ঘটনায় মামলা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এমআই