ক্ষমতাসীনদের ‘টাকার খনি’

ক্ষমতাসীনদের ‘টাকার খনি’

রাজধানীর রূপনগরের চলন্তিকা ঝিলপাড় বস্তিটি তিন দশক ধরে ক্ষমতাসীন দলের কিছু নেতা-কর্মীর কাছে ছিল ‘টাকার খনি’। জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের অধিগ্রহণ করা ঝিলের ২০ একর জমির ওপর গড়ে তোলা বস্তির প্রায় ১৫ হাজার ঘরের ভাড়া, চোরাই বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির লাইন সংযোগের মাধ্যমে প্রতিমাসেই তারা হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।

গত ১৬ আগস্ট ভয়াবহ এক অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যায় ওই বস্তিটি। এ ছাড়াও রূপনগর থানা এলাকাতেই রয়েছে আরও ৭টি বস্তি। সেসব বস্তি থেকে স্থানীয় প্রশাসন ও ক্ষমতাসীন দলের কিছু নেতা-কর্মী লুটে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা।

রূপনগরের ওই আট বস্তি এক দশক ধরে নিয়ন্ত্রণ করছেন ক্ষমতাসীন দলের ৯ প্রভাবশালী ব্যক্তি। ঢাকা-১৬ আসনের ৬ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ড ঘিরে গড়ে ওঠা ঝিলপাড় বস্তি ছাড়াও অন্য বস্তিগুলো হলো কমিশনারের বস্তি, ভোলার বস্তি, দুয়ারিপাড়া, শিয়ালবাড়ি, লেকপাড় ও ট-ব্লক বস্তি। এ ছাড়াও ছোট পরিসরে বেগুন টিলা ও বালুর মাঠ নামে দুটি বস্তি রয়েছে রূপনগরে।

এসব বস্তির প্রায় ৫০ হাজার ঘরে চোরাই বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির লাইন সরবরাহের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী প্রতিমাসে লুটে নিচ্ছেন মোটা অঙ্কের অর্থ। ২শ থেকে ৫শ ঘরের দায়িত্ব দেওয়া হয় একেক জনকে। পাঁচ-ছয় হাতের প্রতিটি ঘর থেকে আড়াই হাজার টাকা মাসোহারা তোলা হয়।

ঘর ভাড়া এবং বিভিন্ন সেবার লাইন থেকে প্রতিমাসের সুনির্দিষ্ট আয় বলা না গেলেও স্থানীয় সূত্র ও বস্তির দায়িত্বপ্রাপ্তদের কাছ থেকে জানা গেছে এর পরিমাণ ১০ কোটি টাকারও বেশি। বস্তির নিয়ন্ত্রক সেই ৯ প্রভাবশালী এতটাই ভয়ঙ্কর যে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি, ঢাকা ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) ও ওয়াসা কর্তৃপক্ষের নাকের ডগায় অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় গ্যাস-পানি-বিদ্যুতের চোরাই সংযোগ দিচ্ছে নিজেরাই। বছরের পর বছর সবকিছুই ঘটছে চোখের সামনে। কিন্তু নীরব ভূমিকায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্নেরও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। যাদের দায়িত্ব এ অনিয়ম রুখে দেওয়া- স্থানীয় সেই সাংসদ ও কাউন্সিলর থেকে শুরু করে ওয়াসা, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, অবৈধ সংযোগের বিষয়ে তারা অবগত নন। চাঁদাবাজির বিষয়টিও তাদের নজরে আসেনি। এসব অনিয়ম বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেন তারা।

ঢাকা-১৬ আসনের সাংসদ ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, বস্তিতে গ্যাস-বিদ্যুৎ নিয়ে এত বাণিজ্য হয় তা আমার জানা ছিল না। আপনারা তথ্য দেন, অন্য যে কটি বস্তি রয়েছে, সেগুলোতে অবৈধ কোনো সংযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে গ্যাস-বিদ্যুতের কর্মকর্তাদের নিয়ে আমি নিজেই অভিযানে যাব। এখন থেকে কেউ আর অবৈধ সংযোগ ব্যবহার করতে পারবে না। আমার নাম ভাঙিয়ে যদি কেউ এ অপকর্মে যুক্ত হয়, তাদের আমি নিজেই আইনের কাছে সোপর্দ করব।

নির্ভরযোগ্য সূত্র ও বস্তিবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লুটেরা এ বিশাল চক্রের সিন্ডিকেটে জড়িত রয়েছে রূপনগর থানাপুলিশ, ওয়াসা, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ বিভাগের দুর্নীতিবাজ কিছু কর্মকর্তা। অবৈধ গ্যাস সংযোগ থেকে আদায় করা অর্থের ২৫ ভাগ প্রতিমাসে পান তিতাস গ্যাস কোম্পানির ওই অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বিদ্যুৎ সংযোগের ২০ ভাগ অর্থ পৌঁছে দেওয়া হয় রূপনগর থানা ও ডেসকোর লোকজনের হাতে। ওয়াসার অসাধু কর্মকর্তারাও মাসের ৫ তারিখের মধ্যেই পেয়ে যান ১০ ভাগ টাকা।

স্থানীয় মাস্তান-সন্ত্রাসী, ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক নেতা, কথিত সাংবাদিকসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের নামেও বরাদ্দ রয়েছে। সবার যোগসাজশে গড়া শক্ত সিন্ডিকেটের কারণে তিনটি সেবা খাতের মধ্যে গ্যাস থেকে এক কানাকড়িও যায় না সরকারের ঘরে। তবে বিদ্যুৎ ও পানি থেকে যৎসামান্য অর্থ জমা হয় সরকারি কোষাগারে।

সম্প্রতি বদলি হয়ে আসা তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের মিরপুর জোনের উপমহাব্যবস্থাপক মো. মনিরুল ইসলাম জানান, ঝিলপাড় বস্তিতে অবৈধ সংযোগ প্রদানকারীদের তথ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অবৈধ সংযোগের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করে শাস্তির আওতায় আনা হবে।

ঢাকা উত্তর ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও রূপনগর থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি রজ্জব হোসেনের কার্যালয়ের পেছনের বিশাল বস্তিকে কেউ বলেন ঝিলপাড় বস্তি, কেউ বলেন চলন্তিকা বস্তি। রূপনগর থানার পেছনে মূল সড়ক থেকে ৫-৬ ফুট নিচে এ বস্তিটিতে প্রায় ১৫ হাজার পরিবার বাস করত। ১৬ আগস্ট সন্ধ্যায় বস্তির দক্ষিণ-পশ্চিমাংশের ভুয়া দন্ত চিকিৎসক ফরিদ সরকারের ঘরে ‘বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট’ থেকে লাগা আগুন ছড়িয়ে পড়ে বস্তিটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানীর দ্বিতীয় বৃহত্তম ঝিলপাড় বস্তির ১৫ হাজার ঘর থেকে প্রতিমাসে ভাড়া তোলা হতো প্রায় ৩ কোটি টাকা। চোরাই সংযোগের মাধ্যমে দুই ঘরপ্রতি বরাদ্দ ছিল একটি ডাবল গ্যাসের চুলা। যাদের ভাড়া ৩ হাজার টাকা, তাদের জন্য বরাদ্দ ছিল একটি চুলা। প্রতি ডাবল চুলা থেকে মাসিক ভাড়ার সঙ্গে অতিরিক্ত নেওয়া হতো ১২শ টাকা এবং সিঙ্গেল চুলায় আদায় করা হতো ১ হাজার টাকা। সেই হিসাবে অবৈধ গ্যাস সংযোগ থেকে আয় ছিল কোটি টাকারও বেশি। একটি লাইট-ফ্যান-টিভির জন্য ঘরপ্রতি গুনতে হতো ৩শ টাকা। ফ্রিজ চালালে আলাদা দিতে হতো ২শ টাকা। বাজারে রাস্তার পাশে ভ্রাম্যমাণ দোকানিকে প্রতি বৈদ্যুতিক লাইটের জন্য দৈনিক দেওয়া লাগত ১শ টাকা। সেই হিসাবে বিদ্যুৎ খাতে আয় ছিল অর্ধকোটি টাকার বেশি। পানির সংযোগ থেকে উঠানো হতো প্রায় ২০ লাখ টাকা।

বস্তিবাসী স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর ভাষ্য, রূপনগর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রজ্জব হোসেনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হতো ঝিলপাড় বস্তি। এ ছাড়াও সংশ্লিষ্ট ছিল রূপনগর থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ৬ নং ওয়ার্ড ইউনিট যুবলীগের সভাপতি রুহুল আমিন, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নূর আলম খোকন, ৬ নম্বর ওয়ার্ড ইউনিট যুবলীগের কর্মী দুলাল হোসেন ওরফে কারেন্ট দুলাল, কাউন্সিলর রজ্জবের মেয়ের জামাই সোহেল রানা, শ্যালক রাসেল, কাউন্সিলরের ভাগ্নে রনি, ডিশবাবু, আওয়ামী লীগকর্মী কবির আহমেদ, যুবলীগ কর্মী খোকন, জাহাঙ্গীর হোসেন, নুরুল ইসলাম, আনসার মিয়া, মোহাম্মদ দিলু, মোহাম্মদ হানিফ, তুষার ও ছাত্রলীগের রূপনগর থানার সভাপতি মিঠুসহ অন্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত হেলাল উদ্দিন, জামালউদ্দিন, মতিউর রহমান ওরফে খোকন, আক্তার হোসেন, খলিলুর রহমান ও তৈয়ব আলীসহ অর্ধশত ব্যক্তি।

সূত্রে জানা গেছে, গত ১৬ আগস্ট ঝিলপাড় বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের পর পরই পল্লবী জোনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রূপনগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গোলাম রাব্বানীকে বস্তির অবৈধ গ্যাস-বিদ্যুতের নিয়ন্ত্রক যুবলীগ কর্মী কারেন্ট দুলালকে আটকের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু পরিদর্শকের সঙ্গে সখ্য থাকায় তাকে আটক করেননি। পরে তিনি নিজে ছুটিতে চলে যান। দুলাল বর্তমানে আত্মগোপন করে আছে। তাকে ধরতে দফায় দফায় অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।

সদ্য যোগদান করা পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মোস্তাক আহমেদ আমাদের সময়কে বলেন, বস্তিকেন্দ্রিক গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির বিষয়টি দেখে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। পুলিশ দেখে মাদক বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিষয়টি। এ বিষয়ে আমরা তৎপর রয়েছি। বস্তিকেন্দ্রিক চাঁদাবাজির ভাগ কোনো পুলিশ সদস্য পায়, সে বিষয়ে আমি অবগত নই। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

ওয়ার্ড কাউন্সিলর রজ্জব হোসেনের আরামবাগের বাড়ির সামনের বস্তিটিকে স্থানীয়রা ‘কাউন্সিলরের বস্তি’ বলেই চেনেন। ঝিলপাড় বস্তির মতোই চাঁদার হার এখানেও। এ বস্তির সহস্রাধিক ঘর থেকে প্রতিমাসে ভাড়া তোলা হয় প্রায় অর্ধকোটি টাকা। এ বস্তির নিয়ন্ত্রক হলেন রূপনগর থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম খোকন ও যুবলীগ কর্মী কারেন্ট দুলাল। এ ছাড়াও ফকির কবির, জামাল, ডিশ রকি চৌধুরী, মিজান, বাইট্টা খলিল, ভিডিও বাবু তাদের কর্মী বাহিনী দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করে ‘কাউন্সিলরের’ বস্তি।

যুবলীগ নেতা নূরে আলম খোকন ও কারেন্ট দুলালের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাদের সেলফোন বন্ধ পাওয়া যায়। রূপনগরে গিয়েও দেখা মেলেনি তাদের।

বস্তি নিয়ন্ত্রণ ও চাঁদাবাজদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে কাউন্সিলর রজ্জব হোসেন জানান, ঝিলপাড় বস্তিসহ কোনো বস্তিতেই তার কোনো ঘর নেই। সামনে মেয়র নির্বাচন, ওই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একটি মহল তার বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে। যারা বস্তিতে চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত তারা নব্য আওয়ামী লীগার। এরাই যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে বস্তি নিয়ন্ত্রণ করছে।

রূপনগর থানার অদূরেই দুয়ারিপাড়া বস্তি। এখানেও চাঁদার রেট একই। এ বস্তির ৮ হাজার ঘর থেকে মাসিক ভিত্তিতে আদায় হয় আড়াই কোটি টাকারও বেশি। এখানকার বস্তিঘর থেকে রূপনগর-পল্লবীতে চলা ৭ হাজার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ব্যাটারিও চার্জ দেওয়া হয়। এ খাত থেকে আদায় করা হয় অর্ধকোটি টাকা। সব মিলিয়ে এ বস্তি থেকে প্রতিমাসে আদায় হয় ৩ কোটি টাকা।

দুয়ারিপাড়া মূল বস্তির নিয়ন্ত্রক হলেন রূপনগর থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক (প্রস্তাবিত) আবদুল লতিফ মোল্লা। স্থানীয় সাংসদের খাস লোক পরিচয়দানকারী এ ব্যক্তি এক সময় ছিলেন রাখাল। চোরাই রিকশা কারবারে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আগে নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা থাকলেও বস্তির টাকায় এখন তিনি কোটিপতি। তার রয়েছে একাধিক আলিসান বাড়ি। অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে আবদুল লতিফ মোল্লা আমাদের সময়কে বলেন, বস্তিতে কোনো চাঁদাবাজির সঙ্গে আমি জড়িত নই। এমপি সাহেব আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন, তাই দেখভাল করি মাত্র।

দুয়ারিপাড়া ক-ব্লক ১ নং রোড থেকে ৪ নম্বর রোড পর্যন্ত সহস্রাধিক ঘরের একচ্ছত্র অধিপতি মহানগর উত্তর মহিলা আওয়ামী লীগের সদস্য নাজমা বেগম। আর দুয়ারিপাড়া বালুর মাঠ বস্তির সহস্রাধিক ঘরে অধিপতি হলেন সাজু মোল্লা। তিনি আবদুল লতিফ মোল্লার ছেলে। এ ছাড়াও স্থানীয় আ.লীগ কর্মী মোতালেব মেম্বার ওরফে মোবারক মেম্বার, আমির হোসেন মেম্বার, ভাইগনা ফারুক, সাজু মোল্লা, মনির মোল্লা ও লুৎফর মোল্লা তাদের কর্মী বাহিনী দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করেন দুয়ারিপাড়ার বস্তিগুলো।

ডেসকোর মিরপুর জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম শাহ সুলতান জানান, বস্তির মুখেই স্থাপিত পোল মিটারে যতটুকু বিদ্যুৎ ব্যবহার হয় সেই বিল পাওয়া যায়। ওই পোল মিটার থেকে কারা বিদ্যুৎ ব্যবহার করে, তারা কাকে অর্থ দেয় সে বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না বলে জানান। এ অঞ্চেলের যেসব স্থানে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে তা বিচ্ছিন্ন করতে ব্যবস্থার কথাও বলেন তিনি।

পল্লবী থেকে দুয়ারিপাড়া যাওয়ার পথে ঢালে গড়ে তোলা হয়েছে ভোলার বস্তি। এখানকার সহস্রাধিক ঘর থেকে আদায় করা হয় প্রায় অর্ধকোটি টাকা। এ বস্তির নিয়ন্ত্রক হলেন রূপনগর ভোলার বস্তি ইউনিট আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ফারুক। কাউন্সিলর রজ্জবের অনুসারী ফারুকের ছোট ভাই হারুন দেখভাল করেন বস্তিটি।

রূপনগরের শিয়ালবাড়ি এলাকার শিয়ালবাড়ি বস্তিতে রয়েছে প্রায় ৫ হাজার ঘর। ঝিলপাড় বস্তির মতো এখানেও চাঁদার হার একই। এখান থেকে আদায় হয় দেড় কোটি টাকারও বেশি। এ বস্তির নিয়ন্ত্রক হলেন রূপনগর থানা আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক আবদুল সাত্তার মাতবর। এ ছাড়া রূপনগর থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম খোকন, রূপনগর থানা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক শেখ মো. নাছির, ৭ নম্বর ওয়ার্ড কৃষক লীগের সাবেক সভাপতি জহুর মাতবর, এনালান খান, শরীফ মাতবর, হারুন, মজিবুর রহমান ওরফে ভাঙারি মুজিবর, মারুফ মাতবর, ওমর আলী মাতবর ও আনিস ‘আর্মি’ তাদের কর্মী বাহিনী দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করেন শিয়ালবাড়ি বস্তি। বস্তির চাঁদাবাজির সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততা নেই দাবি করে আ.লীগ নেতা আবদুল সাত্তার বলেন, আমার সম্মান নষ্ট করতে হয়তো কেউ অপপ্রচার চালাচ্ছে।

রূপনগরে সচিবদের জন্য নির্মিত ভবনের পেছনে গড়ে তোলা হয়েছে ট-ব্লক বস্তি। এখানকার প্রায় ৪ হাজার ঘর থেকে তোলা হয় প্রায় ৪০ লাখ টাকা। এর নিয়ন্ত্রক হলেন ৬ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি এসএ খোকন। এ ছাড়াও ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুুর রহিম সর্দার ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক রাসেল মোড়ল তাদের কর্মী বাহিনী দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করেন ট-ব্লক বস্তিটি।

লেকপাড় বস্তি গড়ে উঠেছে রূপনগর আবাসিক এলাকার পেছনে (২৭, ৩১, ৩২, ৩৩) লেক দখল করে। চক্রাকারে এ বস্তির সহস্রাধিক ঘর থেকে আয় আসে অর্ধকোটি টাকা। বস্তির নিয়ন্ত্রক হলেন রূপনগর থানার স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি এনামুল ওরফে মামা। এ ছাড়া রূপনগর থানা কৃষক লীগের স্থানীয় এক নেতার ভাগনে দোলন, রূপনগর থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শুভ, ছাত্রলীগ কর্মী আলীম ও ইব্রাহিম তাদের কর্মী বাহিনী দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করেন লেকপাড় বস্তি।

এমআই