‘ক্ষমতা হারানোর ভয়ে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিচ্ছে না সরকার’

‘ক্ষমতা হারানোর ভয়ে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিচ্ছে না সরকার’

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, অবৈধ মিডনাইট সরকারের প্রতিহিংসার কারাগারে তার শারীরিক অসুস্থতার ক্রমাগত অবনতি হলেও ক্ষমতা হারানোর ভয়ে সরকার তাকে মুক্তি দিচ্ছে না।

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কারাবন্দিত্বের ৫৬৮তম দিন উল্লেখ করে বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, এ সরকার মানবতাবোধশুন্য এবং বেআইনি কাজে এতো অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে যে, তারা বেগম খালেদা জিয়ার বিপদজনক অসুস্থতাও ভ্রুক্ষেপ করছে না। সরকারের অমানবিক ও নিষ্ঠুর আচরণ প্রমান করে দেশনেত্রীর প্রাণনাশ করতে এক গভীর ষড়যন্ত্রে মেতেছে তারা।

অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য আইন আদালতকে কব্জা করে দেশনেত্রীর জামিনে বাধা দেয়া হচ্ছে। তার সুচিকৎসা হচ্ছে না। এখন আবার তার অসুস্থতা নিয়ে এই সরকারের বিকৃত মনস্ক লোকজন ফেসবুকে বিভিন্ন গুজব ছড়াচ্ছে। তিনি বলেন, জুলুমবাজ মিডনাইট দখলদারদের বলব-দেশনেত্রীকে মুক্তি দিন এখনি! আপনাদের দুর্দিন আসতেও বেশী সময় লাগবে না। সময় সব সময় একরকম থাকে না। বাতাস সব সময় একদিক দিয়ে প্রবাহিত হয়না। প্রতিহিংসা আর দাম্ভিকতার পতন শ্বাশ্বত ও অনিবার্য।

রাকসুর সাবেক এই ভিপি বলেন, আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ধরে ইতিহাস বিকৃত করার চেষ্টা করে আসছে। সত্যকে ঢেকে দিয়ে মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠিত করতে মিথ্যাচার করে আসছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের আলোচনা সভায় বলেছেন, ‘পঁচাত্তর সালের ১৫ আগষ্ট শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকান্ডের মাষ্টারমাইন্ড জিয়াউর রহমান। ষড়যন্ত্রের পুনরাবৃত্তি একই সূঁত্রে গাথা। আগষ্টেরই ২১ তারিখে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে বঙ্গবন্ধুর কন্যাকেও নিশ্চিহ্ন করতে প্রকাশ্যে গ্রেনেড হামলা করা হয়েছিল। এখনো ওদের ষড়যন্ত্র চলছে। এখনো বাতাসে চক্রান্তের গন্ধ আসছে।’ তিনি বলেন, ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য যদি সত্য হয়, তাহলে ১৫ আগষ্টের মর্মষ্পর্শী ঘটনার পর আওয়ামী লীগেরই লোকজন সরকার গঠন করলো কিভাবে? ওবায়দুল কাদের সাহেব আপনি ১৫ আগষ্টের বিষয়ে এইচটি ইমামকে জিজ্ঞেস করুন তাহলেই সব উত্তর পেয়ে যাবেন।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, যারা সেদিন লাশ ডিঙিয়ে মোশতাক সরকারের স্পীকার থেকে শুরু করে মন্ত্রী-এমপি ছিলেন এদের অনেকেই বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বড় বড় পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন এবং তারা এমপি হলেন কিভাবে ? তৎকালীন সেনাপ্রধানের কোন দায় নেই, অথচ মহান স্বাধীনতা ঘোষক জিয়াউর রহমানের নাম কেন টেনে নিয়ে আসেন সেটি আমরা জানি। সেটি হলো-জিয়াউর রহমানের জনপ্রিয়তা, যা নানা কুৎসা রটানোর পরেও আজও তা বিন্দুমাত্র মলিন হয়নি।

তিনি বলেন, বাকশালের মৃত্যুকূপ থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্র পূণ:প্রতিষ্ঠার জন্যই শহীদ জিয়ার বিরুদ্ধে তুষের আগুনের মতো জ্বলতে থাকে আওয়ামী নেতাদের প্রতিহিংসা। কারণ আওয়ামী লীগের ইতিহাস রাজনৈতিক হিংসার ইতিহাস। এরা কারো প্রাপ্য সম্মান দিতে জানে না। এরা নির্বোধ আত্মপ্রেমিক।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ১৫ আগষ্টের সময় বিএনপি’র সৃষ্টি হয়নি এবং শহীদ জিয়াউর রহমান তখন তো কোন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন না। তাহলে তাঁকে অভিযুক্ত করতে আওয়ামী নেতারা এতো তৎপর কেন ? তৎকালীন সেনাপ্রধানের কোন দায় নেই কেন ? কারণ তিনি আওয়ামী লীগের এমপি ছিলেন। ইতিহাসই এর প্রমান। তিনি বলেন, যে ব্যক্তিরা সাবেক রাষ্ট্রপতি মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকান্ডের প্লট তৈরি করেছিল, যে ব্যক্তিরা খন্দকার মোশতাকের শপথে অংশ নিতে বঙ্গভবনে গিয়েছিল। সেই ব্যক্তিরাই এখন সরকারের চারপাশে ঘোরাঘুরি করছে। তিনি আরো বলেন, পঁচাত্তরে আওয়ামী লীগের লোকেরাই একজন আরেকজনকে হত্যা করেছে, একজন আরেকজনের কাছ থেকে ক্ষমতা দখল করেছে।

রিজভী বলেন, আজকে পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, এই আওয়ামী লীগ শুধুমাত্র ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য, নিজেদের ক্ষমতা মগ্নতার কারণে তারা সাবেক রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারী এবং সেই হত্যার প্লট যারা তৈরি করেছিল সেইসব ব্যক্তিদের সাথে সখ্যতা করতে পিছপা হয় না। অথচ কেবল প্রেসিডেন্ট শহীদ জিয়াউর রহমানকে হেয় করার জন্য ক্ষমতা দখল করে এধরনের অসত্য বক্তব্যের ধারাবর্ষণ করে যাচ্ছে। কারণ জোর করে ক্ষমতায় থাকার কারণে সরকারী-বেসরকারী প্রচার মাধ্যমের সব আলো গায়ের জোরে ওরা নিজেদের দিকে টেনে রেখেছে। তবে দেশের সচেতন প্রতিটি মানুষ জানেন প্রকৃত ইতিহাস। এসব করে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে জনগণের মনিকোঠা থেকে সরানো যাবে না।

অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, বুধবার প্রধানমন্ত্রীর নিজ কার্যালয়ে ‘এসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্স’ এর একটি প্রতিনিধি দল তার সাথে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি বলেন-‘বাংলাদেশে সব টেলিভিশন চ্যানেল এখন পূর্ণ স্বাধীনতা উপভোগ করছে’। মত প্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য বছরের সেরা মিথ্যাচার।

তিনি বলেন, স্বাধীন দেশে মানুষ এখন পরাধীন। মানুষের নাগরিক স্বাধীনতা সম্পূর্ণভাবে হরণ করা হয়েছে, কারণ এদেশের মানুষ গুম-খুন তথা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের ভয়ে কথা বলতে ভয় পায়, সত্য কথা বললেই মানুষের ওপর নির্যাতন নেমে আসে। সত্য প্রচারের জন্য গণমাধ্যম বন্ধ করে দেয়া হয় এবং গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের জেল, জুলুম ও গুমের শিকার হতে হয়।

সত্য লেখনির জন্য অনেককে দেশ ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে। বেশ কয়েকবার প্রধানমন্ত্রী তার সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছিলেন-টেলিভিশন আমি দিতেও পারি, নিতেও পারি। অর্থাৎ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর। সুতরাং গতকাল প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য তার কর্মের সাথে সম্পূর্ণ বিপরীত। তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগের প্রোপাগান্ডা মেশিন হিসেবে টিভি চ্যানেলগুলোকে ব্যবহার করা হচ্ছে। এখানে টেলিভিশন মালিক ও সংশ্লিষ্ট কলাকুশলীদের করার কিছুই থাকে না। তাদেরকে বাধ্য হয়ে সরকারী ট্যাবলেট গিলতে হচ্ছে। সত্য প্রচার করতে গেলে তাদের পরিণতি হবে ‘আমার দেশ পত্রিকা কিংবা দিগন্ত ও ইসলামিক টিভি চ্যানেলের মতো। যদি কেউ সত্য ও স্বাধীন মতামত গণমাধ্যমে প্রকাশক করে তাহলে তার ওপর নেমে আসবে অকথ্য জুলুমের ধারালো তরবারী। যেমন নেমে এসেছে আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক জনাব মাহমুদুর রহমান কিংবা বর্ষিয়ান লেখক-কলামিষ্ট শফিক রেহমানের ওপর।

সারাদেশে ডেঙ্গু মহামারী আকার ধারণ করেছে উল্লেখ করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, মানুষ আতংকে দিনযাপন করছেন। মিডিয়ার খবরে বলা হচ্ছে, প্রতিদিনই গড়ে তিন জন করে ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু ঘটছে। সরকারের মন্ত্রীরা এখনো ডেঙ্গু নিয়ে মিথ্যাচার করছেন। ঢাকা দক্ষিণের মেয়র ডেঙ্গুকে মহামারি অবস্থায় রেখে সিঙ্গাপুর গিয়ে বসে আছেন। উত্তরের মেয়র ব্যস্ত ফটোসেশনে। বিনা ভোটে গদি দখলকরা এই সব মন্ত্রী মেয়রদের জনগণের প্রতি ন্যুনতম দায়বদ্ধতা নেই।

তিনি বলেন, সরকার এখনো ডেঙ্গুতে মৃতের প্রকৃত সংখ্যা জানতে দিচ্ছে না মানুষকে। এ নিয়ে লুকোচুরি খেলছে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়। সরকারী পরিসংখ্যানে বলা হচ্ছে মৃতের সংখ্যা ৫২। আর রোগতত্ত্ব , রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) ডেঙ্গু সন্দেহে ১৭৩ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছে। গতকাল বুধবার খুলনা, যশোর ও ময়মনসিংহে একজন করে মোট তিন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে। ঢাকার বাইরে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। কিন্তু এডিস মশা নিধনে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ হতাশাজনক। রিজভী বলেন, তারা জনগণের ভোটে ক্ষমতায় না আসায় কে বাঁচলো কে মরলো তা নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই। তারা উন্নয়নের ফাঁপানো কেচ্ছা কাহিনী শুনিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে খুশি রাখার চেষ্টা করছে। আর দুই হাতে তারা কোটি কোটি টাকা লুটপাটে ব্যস্ত। এদের ব্যর্থতা প্রশ্নাতীত।

অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক সহ-সভাপতি, বাগেরগাট জেলা বিএনপির অন্যতম সদস্য শেখ আব্দুল হালিম খোকনকে গত মঙ্গলবার বাগেরহাট জেলার মোংলা থানা পুলিশ বিনা ওয়ারেন্টে জোরপূর্বক তার বাসা থেকে তুলে নিয়ে গেছে। এছাড়া জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল হুদা নুরুকে গতকাল গ্রেফতার করেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।

তিনি বলেন, তরুণ নেতৃত্বকে সমাজ থেকে উপড়ে ফেলতেই সরকার বেপরোয়া গতিতে ছাত্র নেতাদেরকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করছে, যাতে সরকারের ভয়ে ভীত হয়ে তারা ভয়াবহ দু:শাসনের বিরুদ্ধে কথা বলতে বা সোচ্চার হতে না পারে। তিনি শেখ আব্দুল হালিম খোকন এবং নুরুল হুদা নুরুকে গ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবী করেন।

এমজে/