বিএনপির ৪১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ

বিএনপির ৪১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ

আজ ১ সেপ্টেম্বর। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ৪১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ৪২ বছরে পা দিল দলটি। ১৯৭৮ সালের এই দিনে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দেশ ও জাতির ঐতিহাসিক প্রয়োজনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি নামে রাজনৈতিক দলটি প্রতিষ্ঠা করেন। যে দলের অনুসারীরা হবেন বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী, ধর্মীয় মূল্যবোধের ধারক-বাহক, দেশপ্রেমে উজ্জীবিত সৎ ব্যক্তিত্ব ও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ধারণায় অনুপ্রাণিত। তিনি নিজেও এসব গুণের অধিকারী ছিলেন। জিয়াউর রহমানের বিএনপি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশে শুরু হয় উন্নয়ন ও উৎপাদনের রাজনীতি।

সৈনিক জীবন থেকে শুরু করে স্বাধীনতার ঘোষণা, মুক্তিযুদ্ধ, রাষ্ট্র পরিচালনা সবত্রই জিয়াউর রহমানের একটি সমুজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে, যা জাতি কোনোদিন ভুলতে পারবে না। বিএনপির ৪১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী, শুভানুধ্যায়ী এবং দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। দেশের এক চরম সংকটে সিপাহী জনতা (৭ নভেম্বর) শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে বন্দিদশা থেকে মুক্ত করে বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন করান।

প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান আওয়ামী লীগের গড়া একদলীয় বাকশালের পরিবর্তে বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু করেন। ১৯৭৮ সালের এই দিনে বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। বিএনপি প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দেশের রাজনীতিতে গণতন্ত্রের পাশাপাশি এনে দেন আমাদের জাতিসত্তার পরিচয়, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ। জিয়াউর রহমানের উন্নয়ন, উৎপাদন ও গণতান্ত্রিক আদর্শ লালন করেই বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর থেকে পাঁচ পাঁচবার বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হয়েছে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাহাদতবরণের পর দলের বর্তমান চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও এক যুগসন্ধিক্ষণে দলের দায়িত্ব নিয়ে একের পর এক ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেন।

স্বৈরাচারী এরশাদের আমলে তিনি আন্দোলন করে আপসহীন নেত্রী উপাধি পান। তার নেতৃত্বে বিএনপি তিনবার ক্ষমতায় আসীন হয়। বিএনপিকে ধ্বংস করার জন্য আদালতকে ব্যবহার করে মিথ্যা সাজানো মামলায় বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে বিএনপি আজ তাদের ৪১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করছে।

বিএনপির ৪১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাণী দিয়েছেন। দিবসটি পালনে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনগুলো নানা কর্মসূচি পালন করছে। এছাড়া বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম ও মিডিয়া ক্রোড়পত্র প্রকাশসহ বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে দলের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। আগামীকাল ২ সেপ্টেম্বর বিএনপির পক্ষ থেকে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সারাদেশে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে।

বিএনপির ঘোষণাপত্র : প্রায় ২৮টি বিষয়কে জাতীয় উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির জন্য নির্ধারণ করে বিএনপি তার ঘোষণাপত্র আজ থেকে ৪১ বছর আগে নির্ধারণ করে যা আমাদের ধারাবাহিক উন্নয়নে ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্ববহ। ১. বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে অনুপ্রাণিত ও সংহত ইস্পাত কঠিন ঐক্য, ২. উৎপাদনের রাজনীতি, ৩. জনগণের গণতন্ত্র ও রাজনীতি, ৪. রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা, ৫. সামাজিক অন্যায় ও বৈষম্য দূরীকরণ, ৬. সার্বভৌমত্ব, সামাজিক ন্যায় বিচার ও দ্রুত উন্নয়ন, ৭. মৌলিক অধিকার, বিচার বিভাগ ও আইনের শাসন, ৮. বিলুপ্ত মানবিক মূল্যবোধের পুনরুজ্জীবন, ৯. স্থানীয় সরকার ও বিকেন্দ্রীভূত রাজনৈতিক ক্ষমতা, ১০. সামাজিক ন্যায় বিচারের অর্থনীতি, ১১. জনসম্পদের সার্বিক উন্নয়ন ও সদ্ব্যবহার, ১২. নারীর সার্বিক মুক্তি ও প্রগতি, ১৩. জাতিগঠন সমাজসেবা ও যুবশক্তির ব্যবহার, ১৪. পল্লী উন্নয়ন, ১৫. গণমুখী কৃষিনীতি, ১৬. সমবায় ভিত্তিতে জাতীয় উন্নয়ন, ১৭. সৃজনশীল, উৎপাদনমুখী এবং গণতান্ত্রিক শ্রমনীতি, ১৮. জীবনমান উন্নয়নভিত্তিক স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম, ১৯. গণমুখী ও জীবননির্ভর শিক্ষা কার্যক্রম, ২০. উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, ২১. প্রাকৃতিক সম্পদের সদ্ব্যবহার, ২২. অনুন্নত এলাকা ও জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন, ২৩. সার্বভৌমত্ব সুনিশ্চিত রক্ষাকবচ হবে সশস্ত্রবাহিনী, ২৪. জাতীয় প্রগতি ও সমৃদ্ধি অর্জনে মুক্তিযোদ্ধা, ২৫. বাংলা ভাষা, সাহিত্যের সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও প্রসার, ২৬. বাংলাদেশি সাহিত্য সংস্কৃতি ও ক্রীড়ার বিকাশ, ২৭. ধর্মীয় শিক্ষা, ২৮. জাতীয় পররাষ্ট্রনীতি হবে স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, সমৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক প্রীতি ও সখ্য।

১৯৭৯ সালের ফেব্রুয়ারির সাধারণ নির্বাচন : বিএনপি ৩০০ আসনের মধ্যে ২২০টি আসন লাভ করে। সাধারণ নির্বাচনের পর দেশ থেকে সামরিক আইন ও জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করা হয়। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ১৯ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান শান্তিপূর্ণ বিপ্লবের ডাক দেন। ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে সুবেহ সাদিকের সময় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সেনাসদস্য কর্তৃক শহীদ হন।

১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি একজন সাধারণ গৃহবধূ থেকে রাজনীতিতে আসেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। ১৯৮২ সালের ৮ জানুয়ারি সংবাদপত্রে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে একটি শোসনহীন, দুর্নীতিমুক্ত, আত্মনির্ভরশীল দেশ গঠনের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল গঠন করেছিলেন। বিগত কিছুকাল যাবৎ আমি বিএনপির কার্যক্রম গভীরভাবে লক্ষ্য করেছি। দলের ঐক্য ও সংহতি বিপন্ন হতে পারে, এমন মনে করে আমাকে দলের দায়িত্ব নেয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। তাই দলের বৃহত্তর স্বার্থে বিএনপিতে যোগ দিয়েছি ও দলের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হয়েছি। দেশ ও জাতির স্বার্থে এবং শহীদ জিয়ার গড়া দলে ঐক্য ও সংহতির স্বার্থে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যাওয়া আমার লক্ষ্য।’

১ এপ্রিল ১৯৮৩ : এই দিনে বিএনপির বর্ধিত সাধারণ সভা থেকে বেগম খালেদা জিয়াকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান পদে আসীন করা হয়।

আগস্ট ১৯৮৪ : বেগম খালেদা জিয়া বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন এবং বিএনপিতে নতুন প্রাণের সৃষ্টি হয়। নেতাকর্মীরা নতুন আশার আলোয় আবারো রাজপথে নেমে আসে। এরপর বেগম খালেদা জিয়ার ওপর নানাবিধ হুমকি আসতে থাকে, চক্রান্ত চলতে থাকে তাকে ব্যর্থ করে দেয়ার। কিন্তু অকুতোভয়, সাহসী, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ও গণতন্ত্রের পথে পথ চলতে আপসহীন ভূমিকা নিয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়া।

১৯৮৬ সালের সাধারণ নির্বাচন : বিএনপি ১৯৮৬ সালের সাধারণ নির্বাচন বয়কট করে। এ নির্বাচন আওয়ামী লীগেরও বয়কট করার কথা থাকলেও আওয়ামী লীগ এ প্রহসনের নির্বাচনে অংশ নেয় ও জাতীয় বেঈমান খেতাব প্রাপ্ত হয়।

১৯৯০ স্বৈরাচারের পতন : এরপর আরো ৫ বছর স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে একলা পথ চলেন বেগম খালেদা জিয়া। এ সময় আন্দোলন করে অসহনীয় জুলুম নির্যাতন সহ্য করেন এবং ‘গণআন্দোলন’ সংগঠিত করেন। ১৯৯০ সালে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে সরকার পতনের একদফা আন্দোলনের ডাকে দেশের মানুষ রাজপথে নেমে আসে। ফলে এরশাদ ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়। বেগম খালেদা জিয়ার গণআন্দোলন সফল হয়। ফিরে আসে গণতন্ত্র। বেগম খালেদা জিয়ার আপসহীন নেতৃত্বের কারণে দেশবাসীর মাঝে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা তৈরি হয় এবং তিনি ‘দেশনেত্রী’ আখ্যায়িত হন।

১৯৯১ সাধারণ নির্বাচন : বেগম খালেদা জিয়ার আপসহীন নেতৃত্বে গণতন্ত্রের বিজয়ের ফলে এ সাধারণ নির্বাচনে বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করে এককভাবে সরকার গঠন করে ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া প্রথম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। কিন্তু তৎকালীন বিরোধী দলের নেত্রী শেখ হাসিনা বেগম খালেদা জিয়া সরকারকে একদিনও শান্তিতে থাকতে দেবে না বলে সংসদে হুঁশিয়ারি দিয়ে সরকারের মেয়াদের ৫ বছরে শতাধিক হরতাল ও অসহযোগের মাধ্যমে নৈরাজ্য ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে।

১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ সাধারণ নির্বাচন : সংবিধান রক্ষার জন্য ১৯৯৬ সালে নির্বাচন হয়। সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি সংবিধানে সংযুক্ত করতে এবং সাধারণ নির্বাচন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করতেই ১৯৯৬ সালের নির্বাচন করা হয়। এ নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ ছিল শুধু সংবিধান পরিবর্তন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করা। ৩ জুন ১৯৯৬, সাধারণ নির্বাচন : প্রধান বিরোধী দল হিসেবে বিএনপি দেশবাসীর সেবা করার সুযোগ পায়। বিরোধী দল হয়েও সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে বিএনপি মানুষের কাছে আবারো নতুন পথের সন্ধান দেয়।
১ অক্টোবর ২০০১, সাধারণ নির্বাচন : নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে বিএনপি ৫ম বারের মতো বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে নির্বাচিত হয় এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ৩য়বার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।

১১ জানুয়ারি ২০০৮ জরুরি অবস্থা জারি : বিএনপি সরকার ২৮ অক্টোবর মেয়াদ শেষে ক্ষমতা ছেড়ে দিলে প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগের লীগ- বৈঠার সন্ত্রাসের নৈরাজ্য ও মানুষ হত্যায় লিপ্ত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে আওয়ামী লীগ বিচারপতি কে এম হাসানকে মেনে নেয়নি। ফলে দেশে সাংবিধানিক সংকট তৈরি হয়। এক পর্যায়ে মরহুম রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ইয়াজ উদ্দিন আহমেদ বিএনপির সাবেক মহাসচিব ও আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে বৈঠক করে তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হন। সে অনুযায়ী আওয়ামী লীগ ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে নমিনেশন পেপার জমা দেয়। কিন্তু দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে ৩ জানুয়ারি হঠাৎ আওয়ামী লীগ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেয়। এ পরিস্থিতিতে ১১ জানুয়ারি ২০০৮ সালে জরুরি অবস্থা জারি করে তৎকালীন সামরিক বাহিনী সমর্থিত মঈন-ফখরুদ্দীনের অবৈধ সরকার রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে। বিএনপিকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি ষড়যন্ত্র হয়েছিল এই অবৈধ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উদ্দেশ্য ছিল বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া। এজন্য তারা দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করে। আটক করে তার দুই ছেলেকে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপর চালানো হয় নির্মম নির্যাতন। বর্তমান তিনি লন্ডনে চিকিৎসাধীন আছেন। গ্রেফতার থেকে বাদ যায়নি দলের সিনিয়র নেতারাও। তারা বিএনপিকে দুইভাগে বিভক্ত করে সংস্কার ইস্যুকে কেন্দ্র করে। দল প্রায় দু ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। দীর্ঘ এক বছর কারাভোগের পর মুক্তি পেয়ে আবারও দলকে সুসংগঠিত করে তোলেন বেগম খালেদা জিয়া। দলের প্রতিটি নেতাকর্মীর প্রত্যয়দীপ্ত বলিষ্ঠ প্রতিরোধের মুখে ও গণতন্ত্রের আপসহীন নেত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সুদৃঢ় নেতৃত্ব ও জাতীয়তাবাদী শক্তির কাছে নতজানু হয়ে তারা পরিশেষে সাধারণ নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়।
২৯ ডিসেম্বর ২০০৯, সাধারণ নির্বাচন : দীর্ঘ ২ বছর সামরিক বাহিনীর সমর্থিত অবৈধ সরকারের অধীনে কারচুপির সাধারণ নির্বাচনে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে মেনে নিতে বিএনপি বিরোধী দলের আসনে বসে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারে বহুল জনপ্রিয় নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের কথা না থাকলেও ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখতে তারা দেশের ৯০ ভাগ মানুষের মতামতকে উপেক্ষা করে সে ব্যবস্থা বাতিল করে দেয়। বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, দেশের বিশিষ্টজন, বুদ্ধিজীবী, বিদেশি কূটনীতিকরা এ রাজনৈতিক সংকট সমাধানে বারবার সরকারের কাছে দাবি জানালেও আওয়ামী লীগ এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। এমনকি জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন, তার বিশেষ দূত এবং মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ উন্নয়ন সহযোগীদের আহবানও আমলে নেয়নি সরকার।

৫ জানুয়ারি ২০১৪ সালের ভোটারবিহীন নির্বাচন : ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি একতরফা প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসীন হন। একতরফা ৫ জানুয়ারির নির্বাচন দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল বয়কট করে। বিনা ভোটে নির্বাচিত হয় ১৫৪ সংসদ সদস্য। বাকি আসনে ভোট পরে মাত্র ৫ ভাগ। ভোটারবিহীন সে নির্বাচন দেশে-বিদেশে কোথাও গ্রহণযোগ্যতা পায়নি।

৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ একাদশ জাতীয় নির্বাচন : ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও তার আগের রাতে অর্থাৎ ২৯ তারিখ রাতেই সারাদেশের কেন্দ্র দখল করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নির্বাচন কর্মকর্তাদের সহায়তায় জাতীয় নির্বাচন সম্পূর্ণ করে। দলে ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের দিন শুধু আনুষ্ঠানিকতা সম্পূর্ণ করে ফলাফল ঘোষণা করে। যা সারাদেশসহ বিশ্ব গণমাধ্যমে ফলাওভাবে প্রচারিত হয়। যে নির্বাচনে শতাধিক ভোট কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়ে। তাছাড়া ৮০ থেকে ৯৯ ভাগ ভোট পড়েছে শত শত কেন্দ্রে। দেশের সবচেয়ে বৃহৎ দল বিএনপিকে দেয়া হয়েছে ৬টি আসন। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরে ও আগে সরকারের নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিএনপিসহ বিরোধী দলের লাখ লাখ নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা ও গায়েবী মামলা দায়ের করে। মামলা থেকে বাদ যায়নি মৃত ব্যক্তি, হজপালনরত ব্যক্তিসহ বিদেশে থাকা ব্যক্তিরাও। হাজার হাজার নেতাকর্মী আটক করে কারাবন্দি করা হয়। এমন একটি ভোট ডাকাতির নির্বাচন সম্পন্ন করতে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা সাজানো মামলায় সাজা দিয়ে আগেই কারাবন্দি করা হয়। আইন আদালত, গণমাধ্যমে সবই নিয়ন্ত্রণ করা হয় আগে থেকেই। বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণে নিতে দেশের প্রধান বিচারপতিকে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়। বাংলাদেশের মানুষ এমন ভোট ডাকাতির নির্বাচন আগে কখনই দেখেনি। নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলো। একতরফা ভোটারবিহীন নির্বাচনে দেশের গণতন্ত্র আজ মৃতপ্রায়।

বর্তমান সরকার ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করতে বিরোধী দলের ওপর চালাচ্ছে দলন নিপীড়ন। লাখ লাখ নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলায় জেলে ঢুকিয়ে সরকার সারাদেশকে কারাগারে পরিণত করেছে। মিডিয়ার ওপরও চলছে দলন-নির্যাতন। দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছে। বিএনপির অভিযোগ মিথ্যা মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে বন্দি করে রেখেছেন। এই মামলায় জামিন পেলেও নতুন নতুন মামলায় গ্রেফতার দেখানোয় তিনি মুক্তি পাচ্ছেন না।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিএনপির ৪১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক বাণীতে বলেন, আমি বিএনপির ৪১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী, শুভানুধ্যায়ী এবং দেশবাসীকে প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। আজ থেকে ৪১ বছর আগে দেশের এক চরম ক্রান্তিকালে মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা, বিশ্বনন্দিত নেতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এদেশের মানুষকে একদলীয় দুঃশাসনের করাল গ্রাস থেকে রক্ষার জন্য বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি দেশ, দেশের মানুষের উন্নয়ন এবং বিশ্বের সকল রাষ্ট্রের সঙ্গে সমমর্যাদার ভিত্তিতে সৌহার্দ্য ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। বিএনপির ৪১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই মহান দিনে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের দলকে আরো গতিশীল করার ক্ষেত্রে মনেপ্রাণে কাজ করার জন্য প্রস্তুত থাকার আহবান জানাচ্ছি। বর্তমান দুঃসময়ে জনগণকে সংগঠিত করার কোনো বিকল্প নেই। দেশ আজ দুঃশাসন কবলিত। মানুষ ভয়াবহ নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিনাতিপাত করছে। গুম-খুনের আতঙ্ক মানুষের নিত্য সঙ্গী। আইন, বিচার, প্রশাসনকে সরকার কব্জার মধ্যে রাখার চেষ্টায় মরিয়া। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বেআইনি কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। ফলে সমাজে দেখা দিয়েছে বিপজ্জনক বিশৃঙ্খলা। খুন-খারাবি, নারী-শিশু নির্যাতন, অপহরণ, গুপ্তহত্যা ইত্যাদি অনাচারের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ সরকার যেখানে জনগণের প্রতিপক্ষ সেখানে মানুষের জানমালের কোনো নিরাপত্তা থাকতে পারে না। সুতরাং জনগণের নিরাপত্তা বিধানের জন্যই গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হবে। বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন বেগবান করতে হবে। তিনি প্রতিহিংসার শিকার। কারণ তিনিই গণতন্ত্রের প্রতীক এবং জনগণের নাগরিক ও বাক-ব্যক্তি স্বাধীনতার পক্ষে প্রধান কন্ঠস্বর। পাশাপাশি দেশের যেকোনো ক্রান্তিলগ্নে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থেকে অন্যায় ও জুলুমের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর প্রতি গুরুত্বারোপ করতে হবে। বিএনপির ৪১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই দিনে আমি দেশবাসীকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য উদাত্ত আহবান জানাই।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপির কর্মসূচি : বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে থাকায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ৪১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ ১ সেপ্টেম্বর আজ রবিবার সকাল ১০টায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ সকল পর্যায়ের নেতাকর্মী শেরেবাংলা নগরস্থ শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করবেন। এছাড়া আজ বেলা ৩টায় বিএনপি’র উদ্যোগে রাজধানীর রমনাস্থ ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স-বাংলাদেশ মিলনায়তনে বিএনপির ৪১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দসহ দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ বক্তব্য রাখবেন। বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীকে যথাসময়ে শেরেবাংলা নগরস্থ সাবেক প্রেসিডেন্ট শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তম-এর মাজার এবং রমনাস্থ ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ মিলনায়তনে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। এছাড়াও সারাদেশে মহানগর, জেলা, থানা-উপজেলা, পৌরসভা ও সকল ইউনিটে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি যথাযথভাবে পালন করবে বিএনপির নেতাকর্মীরা।

এমজে/