বালিশ তো পর্দার কাছে হেরে গেছে

আ’লীগ দেশের অর্থনীতি ফোকলা করে দিয়েছে: মির্জা আলমগীর

আ’লীগ দেশের অর্থনীতি ফোকলা করে দিয়েছে: মির্জা আলমগীর

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের অর্থনীতি ফোকলা করে দিয়েছে। মেগা প্রজেক্ট হচ্ছে মেগা চুরি। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রজেক্ট করা হয়- এটা নাকি একটা আইডল অর্থনীতি। কিন্তু অতি দ্রুত বিশ্বের কাছে প্রমাণিত হয়ে গেছে এটা ফাঁপা অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে।

শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক স্মরণসভায় তিনি এ সব কথা বলেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের ১০তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এ সভার আয়োজন করে ‘সাইফুর রহমান স্মৃতি পরিষদ’। ২০০৯ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান সাইফুর রহমান।

মির্জা আলমগীর বলেন, আজকের পত্রিকাতে আছে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, হলমার্ককে আবার সুযোগ দেয়া হবে। অর্থাৎ লুটেরা অর্থনীতিকে আবার লুটেরার মধ্য দিয়ে নিয়ে আসা হবে। এদের চরিত্র হচ্ছে- এরা লুটেরা। আমি আগেও বলেছিলাম এরা সব লুট করছে চারদিকে। এমনভাবে লুট করছে যে, অর্থনীতি ফোকলা হতে চলেছে।

ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পর্দা কেনায় দুর্নীতির সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, একটি পর্দার মূল্য ৩৭ লাখ টাকা! এটি একটি হাসপাতালের জন্য কেনা হয়েছে। পর্দা কেলেঙ্কারির কাছে রূপপুরের বালিশকাণ্ড হেরে গেছে।

তিনি বলেন, সাইফুর রহমান একজন দেশপ্রেমিক ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগের আমলে আসা সাপ্লাইয়ার্স ক্রেডিটের প্রজেক্ট বাতিল করে দিয়েছিলেন। যে কোনো অর্থনীতিবিদকে জিজ্ঞাসা করলে দেখবেন তারা বলবেন, সাইফুর রহমান সাহেবের সময়ে সামষ্টিক অর্থনীতি ছিল সবচেয়ে ভালো। ইচ্ছা করে নিজেরা লাভবান হওয়ার জন্য বা দলের লোকদের লাভবান করার জন্য সাইফুর রহমানরা দেশের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দেননি। এটা খুব বড় কথা- দেশ বিক্রি করে দেননি।

মির্জা আলমগীর আরো বলেন, আজকে সাইফুর রহমান সাহেবরা থাকলে এই রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি হতো না। এই যে ব্যাঙের ছাতার মতো সমস্ত কিছু উঠে আসছে, রূপগঞ্জে আনবিক প্ল্যান্ট এভাবে তৈরি হতো না।

বিএনপির সময়ে ব্যাংকের অনুমতি না দেয়ার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, খুব চাপ ছিল নতুন ব্যাংক দেয়ার, লিজিং কোম্পানি দিতে হবে। তিনি (সাইফুর রহমান) শেষমুহূর্ত পর্যন্ত দেননি। আমাদের লোকেরাও বিক্ষুব্ধ উনি দেননি। অনেকে ব্যবসায়ী ছিলেন তারা বলেছেন যে, আমরা পাইনি। তিনি (সাইফুর রহমান) বলেছিলেন, আমি এখানে লুটেরা অর্থনীতিতে পরিণত করতে পারি না। আজকে প্রমাণ হয়েছে এই যে ব্যাঙের ছাতার মতো ব্যাংক দিয়েছে, ব্যাংগুলো মুখথুবড়ে পড়ে আছে।

মির্জা আলমগীর দাবি করেন, জিয়াউর রহমানের এই কৃতিত্ব ছিল। তিনি গ্যালাক্সি অব জুয়েলস নিয়ে এসেছিলেন। তিনি কতগুলো উজ্জ্বল নক্ষত্রকে তুলে নিয়ে এসেছিলেন, যারা দেশটাকে ওই বটমলেস বাসকেট থেকে সমৃদ্ধির বাংলাদেশে নিয়ে গিয়েছিলেন। আমি আমাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বলেছিলাম, বিদেশিরা এখন্ও মনে করে, যদি জিয়াউর রহমানের জন্ম না হতো তিনি যদি বাংলাদেশের পলিটিক্সে না আসতেন তাহলে বাংলাদেশ একটা ফেইলড স্টেটে পরিণত হতো।

সরকারের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে সরকার বড় বড় কথা বলে। সবকিছু তাদের নিয়ন্ত্রণে। গণমাধ্যম তাদের নিয়ন্ত্রণে। সরকার কথা বলতে দেয় না, তারা চায় না সত্য প্রকাশ হোক।

তিনি বলেন, আজকে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে বন্দি করে রেখেছে শুধু একটা মাত্র কারণে যে, উনি যদি বাইরে থাকেন তাহলে লুটপাট চলবে না। এভাবে মানুষের অধিকারকে বিনষ্ট করা যাবে না। ঠিকই উনি সমগ্র মানুষকে নিয়ে সেটাকে প্রতিহত করবেন। ইনশাআল্লাহ এ দেশের মানুষ দেশনেত্রীকে অবশ্যই মুক্ত করে আনবে। গণতন্ত্রকে মুক্ত করবে এবং তাদের প্রতিহত করবে।

সাবেক অর্থমন্ত্রীর প্রশংসা করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, জাতীয় সম্পদ যাতে গুটি কয়েকের মধ্যে সীমাবদ্ধ হতে না পারে, যাতে করে জনগণের কাছে পৌঁছানো যায় অর্থাৎ সম্পদের সুষম বণ্টন করার জন্য সব সময়ে সাইফুর রহমান সাহেব সংগ্রাম করতেন। আমরা তার জুনিয়র সহকর্মী হিসেবে কাছে থেকে তা দেখেছি। আমি দেখেছি উনি কীভাবে ধনীদের থেকে সম্পদ এনে সাধারণ মানুষের কাছে বিতরণ করতেন- এটা চেষ্টা করতেন।

বিএনপি নেতা কাইয়ুম চৌধুরী ও এজিএম শামসুল হকের পরিচালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস-চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, এম নাসের রহমান প্রমুখ।