নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান

ভয় দেখিয়ে লাভ নেই, দেশের মানুষের সঙ্গেই আছি: খালেদা জিয়া

ভয় দেখিয়ে লাভ নেই, দেশের মানুষের সঙ্গেই আছি: খালেদা জিয়া

ঢাকা, ৩ ফেব্রুয়ারি (জাস্ট নিউজ) : বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, যেখানেই থাকি আপনাদের সঙ্গে আছি। আমাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে লাভ নেই। তিনি বলেন, দলের নেতা ও এ দেশের মানুষের সঙ্গে আছি। তিনি দলের নেতাদের শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধ-প্রতিবাদ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকার পরামর্শ দেন।

শনিবার দুপুরে রাজধানীর হোটেল লা মেরিডিয়ানে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির প্রথম সভায় বেগম খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন।

সভার উদ্বোধনী বক্তব্যে বেগম খালেদা জিয়া আরো বলেন, মানুষ পরিবর্তন চায়। এই পরিবর্তন হতে হবে নির্বাচনের মাধ্যমে। সভায় বিএনপি চেয়ারপারসন জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, দেশের প্রয়োজনে এখন প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য।

সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী দেশ রক্ষা, সরকারের অন্যায়-জুলুমের বিরুদ্ধে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে জাতীয় ঐক্য গঠনের ডাক দেন। তিনি বলেন, আসুন আমরা সবাই মিলে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জনগণের জান-মাল রক্ষায় জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলি। দেশের প্রেক্ষাপটে যাই ঘটুক না কেন, প্রতিবাদ করলে নেতাকর্মীদের তা শান্তিপূর্ণভাবে করার নির্দেশ দেন।

সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিএনপি ভাঙার চেষ্টার কথাও তুলে ধরেন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, সে সময় চক্রান্তকারীদের ক্ষমা করেছিলেন তিনি। কিন্তু এবার আর ক্ষমা নয়। তিনি বলেন, বহু ষড়যন্ত্র হবে, অনেক সন্ত্রাস হবে। কিন্তু আমরা ভীত নই। যারা বেইমানি করেনি, আমরা যদি ভবিষ্যতে ক্ষমতায় আসি, তাদের কথা বিবেচনা করা হবে। তাই দল ভাঙার যত চেষ্টাই হোক কেউ ফাঁদে পা দেবেন না।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিএনপিতে সংস্কারের কথা বলে বেগম খালেদা জিয়াকে বাদ দিয়ে চলার বিষয়ে নেতাদের একটি অংশের চেষ্টা নিয়েও কথা বলেন তিনি। বলেন, ‘এক এগারোর সময় বিএনপি ভাঙার ষড়যন্ত্র হলেও ভাঙতে পারেনি। জিয়াউর রহমান ও তারেক রহমান তৃণমূলে যে ভীত তৈরি করেছে যে কারণে অনেক ষড়যন্ত্র করেও ভাঙতে পারেনি। দুই চারজন গেলেও নেতাকর্মীদের নিতে পারেনি।’

২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে সংস্কারপন্থী অংশের শীর্ষ নেতাদের অনেককেই মনোনয়ন দেয়নি বিএনপি। তবে পরে বেশ কয়েকজনকে দলে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। তবে আবার দল ভাঙার চেষ্টা হলে পরিণতি ভালো হবে না বলেও জানিয়ে দেন বেগম খালেদা জিয়া। বলেন, ‘ক্ষমা একবার হয়। বারবার হয় না।’

আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ‘সঠিক’ রায় পাবেন না বলেও মনে করেন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, ‘সর্বোচ্চ আদালত বলছে নিম্ন আদালত সরকারের কব্জায়। পত্রিকায় যা দেখছি তাতে বোঝা যাচ্ছে সঠিক রায় দেয়ার সুযোগ নেই। সঠিক রায় দিলে কী পরিণতি হয় তা তো দেখেছেন। তারেক রহমানের রায় দেয়ার পর বিচারককে দেশ ছাড়তে হয়েছে।’

জিয়া অরফানেস ট্রাস্ট মামলার রায়ের বিষয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘অপরাধই নেই, তাহলে বিচারটা করবে কিসের? তারা গায়ের জোরে ক্ষমতায় আসতে চায়।’

‘সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে অস্ত্রের মুখে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে’ উল্লেখ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিচারকরা এখন স্বাধীনভাবে রায় দিতে পারছেন না। ক্ষমতাসীন দল সংবিধানকে নিজেদের মতো করে সংশোধন করে নিয়েছে। সংবিধানে গণতন্ত্রের কিছু রাখা হয়নি। এখন ভোটের অধিকারও কেড়ে নিয়েছে।’

খালেদা জিয়া বলেন, আজকে যারা গণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতায় আসার দাবি করছে, অস্ত্রের মাধ্যমেই তারা ক্ষমতায় এসেছে। তত্ত্বাবধায়কের দাবি আওয়ামী লীগের ছিল। এ দাবির জন্য তারা ১৭৩ দিন হরতাল করেছে, জ্বালাও-পোড়াও করেছে। এখন তারা সব মুছে দিয়ে নিজেরা ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন করছে জনগণকে ভয় পায় বলে।

সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী বলেন, গুম-খুন-নিত্য ঘটনা। নৌকায় পচন ধরেছে বলে এত আগে নৌকা মার্কায় ভোট দিতে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) ওয়াদা নিচ্ছেন জনগণের কাছ থেকে। দেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আইনের শাসন নেই উল্লেখ করে বেগম খালেদা জিয়া বলেন, ডিজিটাল আইনের নামে নতুন কালাকানুন করা হচ্ছে মানুষের কণ্ঠরোধের জন্য।

আসন্ন জাতীয় একাদশ সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে বেগম খালেদা জিয়া বলেন, মানুষ পরিবর্তন চায়। এই পরিবর্তন হতে হবে নির্বাচনের মাধ্যমে। সেই নির্বাচনে অংশ নিতে ৬টি শর্ত দিয়েছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ভোট হতে হবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে, জনগণকে ভোটকেন্দ্রে আসার মতো পরিবেশ তৈরি করতে হবে, ভোটের আগে সংসদ ভেঙে দিতে হবে, নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষতা বজায় রেখে কাজ করতে হবে, ভোটের সময় সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে, সেনাবাহিনী মোবাইল ফোর্স হিসেবে কাজ করবে, যন্ত্রে ভোটের জন্য ইভিএম/ডিভিএম ব্যবহার করা যাবে না।

এসব শর্তের বিষয়ে খালেদা জিয়া নির্বাহী কমিটির সদস্যদের মতামত জানতে চাইলে সবাই উচ্চস্বরে হাত উচিয়ে এই শর্তের প্রতি সমর্থন জানান।

বেগম খালেদা জিয়া আজ শনিবার বেলা ১১টা ৫ মিনিটে লা মেরিডিয়েন হোটেলে এসে পৌঁছালে দলীয় নেতারা তাঁকে স্বাগত জানান। তারপর তাঁকে সভাকক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। মঞ্চে তার পাশে স্থায়ী কমিটির সদস্যরাও ছিলেন।

(জাস্ট নিউজ/একে/১৭৪৭ঘ.)