উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে অংশ নিবে বিএনপি: মির্জা আলমগীর

উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে অংশ নিবে বিএনপি: মির্জা আলমগীর

উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। শনিবার রাতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্থায়ী কমিটির বৈঠকের এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। তিনি বলেন, আগামী ১৪ অক্টোবর ৮টি উপজেলায় যে নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে আমরা যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে বিএনপি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে অংশ নেওয়ার এই সিদ্ধান্ত নিল।

গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে শনিবার বিকাল ৫টায় স্থায়ী কমিটির বৈঠক শুরু হয়। রাত সাড়ে ৭টায় দলের মহাসচিব বৈঠক থেকে বেরিয়ে সংবাদ ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের কাছে বৈঠকের নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো তুলে ধরেন।

মির্জা আলমগীর বলেন, ভারতের আসামের নাগরিকপঞ্জি নিয়ে সেখানকার মন্ত্রী, বিজেপি নেতা এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের যেসব বক্তব্য দেশটির বিভিন্ন পত্রিকায় বেরিয়েছে তাতে বলা হয়েছে যে, ১৯ লাখ যারা বাদ পড়েছেন তাদের মধ্যে অধিকাংশ বাংলাদেশি নাগরিক। আমরা এই বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, আমরা মনে করি যে, এই ধরনের বক্তব্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে যে, সরকার এ ব্যাপারে নীরব থাকছেন। এখানে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী যখন বাংলাদেশে এসেছিলেন তখন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে যে বৈঠক হয়েছে, সেই বৈঠকে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন যে, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাকে নিশ্চিত করেছে যে, এটা ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। যখন বাদ পড়াদের বাংলাদেশের নাগরিক বলা হচ্ছে, বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর কথা বলা হচ্ছে, তখন কিন্তু সেটা ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় থাকছে না। আমরা এই বিষয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। আমরা বাংলাদেশের সরকারের কাছে এই ব্যাপারে পরিষ্কার ব্যাখ্যা চাই, ব্যাখ্যা দাবি করছি।

তিনি বলেন, জাতিকে অন্ধকারে না রেখে সরকারের জানানো উচিত আসলে ব্যাপারটা কী?

মির্জা আলমগীর বলেন, সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারের নিয়ন্ত্রণে আনবে। এই থেকে এটাই প্রমাণিত হয়েছে আসলে সরকার অর্থনৈতিক দিক থেকেও দেউলিয়া হয়ে গেছে। এখন যেসব প্রতিষ্ঠানগুলোতে তাদের জমাকৃত উদ্বৃত্ত আছে তা কখনো কাউকে হাত দিতে হয়নি। সরকার বলছে সেটা তারা বিভিন্ন প্রজেক্টে ব্যয় করতে চায়।

বিএনপির এই নেতা বলেন, এটাতে সরকারের দেউলিয়াত্ব প্রমাণ হয়ে যাচ্ছে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ব্যাংকগুলো। যেসব ব্যাংকে ওই সব প্রতিষ্ঠানের টাকাসমূহ জমা আছে। যখনই টাকাগুলো নিয়ে যাবে তখন তারল্য সংকট দেখা দেবে ব্যাংকগুলোতে। এ ছাড়া যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী ওই সব স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন তাদের যেসব বেতন-ভাতা, পেনশন-গ্র্যাচুইটি- এসব অর্থ তারা সঠিকভাবে পরিশোধ করতে পারবে বলে আমরা মনে করি না, সমস্যা তৈরি হবে।

মহাসড়কে টোল আদায়ের সরকারের সিদ্ধান্তেরও নিন্দা জানিয়েছে স্থায়ী কমিটি বলে জানান বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, আমরা মনে করি যে, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনে সেই অবস্থায় দাঁড়ায়নি যে, রাস্তার ওপরে টোল আদায় করতে হবে। আমরা মনে করি জনগণের ওপর আরও একটা বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে।

স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিএসএমএমইউতে চিকিৎসাধীন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে অবিলম্বে তার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবি জানিয়েছে বলে জানান মির্জা আলমগীর।

স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন।

এমআই