ছাত্রলীগ জঙ্গি সংগঠন : রিজভী

ছাত্রলীগ জঙ্গি সংগঠন : রিজভী

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগকে জঙ্গি সংগঠন হিসেবে অভিহিত করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, একটি কর্তৃত্ববাদী পরিবেশ কায়েম করার জন্য ছাত্রলীগ এই হামলা চালাচ্ছে।

মঙ্গলবার সকালে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

রিজভী বলেন, গতকাল দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাসের নেতৃত্বে তাদের ৩০ থেকে ৪০ জন জঙ্গি সন্ত্রাসী নেতাকর্মী লাঠি, রড ও ইট নিয়ে ছাত্রদলের নেতাকর্মী ও সাংবাদিকদের উপর বর্বরোচিত হামলা চালিয়েছে। মোবাইল ছিনতাই করেছে। এই নারকীয় জঙ্গি হামলায় ছাত্রদলের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন। আমরা এই জঙ্গিবাদী সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা, ঘৃণা ও প্রতিবাদ জানাই।

তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিনষ্টের মাধ্যমে একটি কর্তৃত্ববাদী পরিবেশ কায়েম করার জন্য ছাত্রলীগ এই হামলা চালাচ্ছে। তারা হামলা নির্যাতনের মাধ্যমে ক্যাম্পাসে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করেছে। আর হলগুলোতে মিনি কনসেনট্রেশান ক্যাম্প তৈরি করে রেখেছে তারা। ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের হাত থেকে কেউ নিরাপদ নয়। তারা সন্ত্রাসের অভয়ারণ্যে পরিণত করেছে প্রতিটি ক্যাম্পাসকে। সাংবাদিক, সাধারণ শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রতিনিয়ত হামলায় শিকার হচ্ছে। এসব ঘৃণ্য সন্ত্রাসের দায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন কোনো ভাবেই এড়াতে পারে না।

রিজভী আরো বলেন, গত একদশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশের প্রায় প্রতিটি ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ যেভাবে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে এতে স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয়েছে, তারা রাজনৈতিক সংস্কৃতিও শেখেনি। একটি ভালো পারিবারিক মূল্যবোধেও বেড়ে উঠেছে বলে মনে হয় না। যে কোনো মূল্যে ক্ষমতায় থাকার জন্য ক্ষমতাসীন সরকার যেভাবে ছাত্রদেরকে প্রতিহিংসাপরায়ণ করে তুলছে এটি কারো জন্যই মঙ্গলজনক নয়।

‘গতকাল তাদের হিংস্র আচরণে মনে হয়েছে তারা বদরুল লীগ, ছিনতাই লীগ, চাঁদাবাজলীগ, জঙ্গি লীগ, চাপাতিলীগ, হাতুড়িলীগ, দখললীগ, ইয়াবালীগ, টেন্ডারলীগ, ধর্ষকলীগের অচলায়তনে পতিত থেকে ছাত্রসমাজের কাছে পূতিগন্ধময় হয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিনই গণমাধ্যমে আওয়ামী লীগের অনুসারী এই সংগঠনটির চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ধর্ষণ, হত্যা, দখলের খবর বের হচ্ছে। তারা সন্ত্রাস করে আসছে। তাদের আচরণ প্রমাণ করে ক্ষমতাসীন দলের হাইকমান্ড ছাত্রলীগের হাতে বই-খাতার বদলে অস্ত্র, বন্দুক, চাপাতি তুলে দিয়েছেন। যার একটি নজির গতকাল দেখা গেল গণতন্ত্র চর্চার পীঠস্থান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে।’

বিএনপির সিনিয়র এ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, সন্ত্রাস, উগ্রতা কখনো রাজনীতির ভাষা হতে পারে না। মনে রাখতে হবে এই ক্যাম্পাস প্রতিটি শিক্ষার্থীর, কোনো রাজনৈতিক দলের নিজস্ব সম্পত্তি না। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন কোনো সরকার বিরোধী ছাত্র সংগঠন নেই, যারা ছাত্রলীগের বর্বর হামলার শিকার হয়নি। একটি সফল কাউন্সিলে নির্বাচনের মাধ্যমে ছাত্রদল নতুন উদ্যোমে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাচ্ছে- এটা ছাত্রলীগ সহ্য করতে পারছে না। কারণ বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ছাত্রসংগঠন ছাত্রদল। যখন ছাত্রদল সারাদেশের কাউন্সিরদের দ্বারা নির্বাচিত হয়েছে, তখন ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ৮৬ কোটি টাকার চাঁদাবাজির খবর সারা দেশকে চমকিয়ে দিয়েছে। একদিকে ছাত্রদলের গণতন্ত্র চর্চার প্রশংসা আর অন্য দিকে ছাত্রলীগের চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজিতে দেশবাসীর কাছে যেভাবে হেয় হয়েছে সেটিকে ঢাকার জন্যই এখন তারা সন্ত্রাসীর পথ অবলম্বন করছে। ফলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত ছাত্রদলকে তারা সহ্য করতে পারছে না।

রিজভী বলেন, কয়দিন আগে দুর্নীতি টেন্ডারবাজী চাঁদাবাজীর কারণে তাদের নেত্রী শেখ হাসিনা বহিষ্কার করেছে চাঁদাবাজ লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে। আমরা এই সন্ত্রাসী সংগঠন নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানাচ্ছি। একই সাথে দেশের প্রতিটি ক্যাম্পাসে সহাবস্থান নিশ্চিত করার আহবান জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, আমরা বারবার গণতান্ত্রিক পথে হাঁটতে চেয়েছি কিন্তু সরকার নিজেরাও গণতন্ত্রের চর্চা করছে না, আমাদেরকেও করতে দিচ্ছে না। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সম্মেলন এবং নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল ১৪ সেপ্টেম্বর। ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা সেভাবে প্রস্তুতিও নিয়েছিল। কিন্তু গত ১২ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার অফিস টাইম শেষ হওয়ার পূর্বমুহূর্তে তড়িঘড়ি করে আদালতের রায়ের দোহাই দিয়ে ছাত্রদলের কাউন্সিলকে বানচাল করার জন্য ১২ জন সাবেক ছাত্র নেতার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সরকার।

তিনি আরো বলেন, সারাদেশে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা কমপক্ষে ৩৬ লাখ। দেশে এতো মামলার স্তূপ রেখে ছাত্রদলের কাউন্সিল বন্ধ করা দূঢ়ভিসন্ধিমূলক। যে দেশের মানুষ বিচার চেয়েও পায় না, আর ছাত্রদলের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক চর্চার বিরুদ্ধে হুটহাট মামলার রায় বের করে নিয়ে আসতে একঘন্টা সময় লাগে না।

রিজভী বলেন, ওয়ান ইলেভেনের তথাকথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে বিএনপির মহাসচিব পদ নিয়ে তারা কোর্টে গিয়েছিলো। কোর্ট ওই সময়ে পরিষ্কার বলে দিয়েছিলো যে, কোনো রাজনৈতিক দলের ব্যাপারে আদালত হস্তক্ষেপ করতে পারে না, সেই এখতিয়ার আদালতের থাকা উচিত নয়। এটা ছিল তখন আদালতের পর্যবেক্ষণ। আমরা অতীতে কখনো দেখিনি রাজনৈতিক দলের কার্যক্রমে আদালত যুক্ত হচ্ছে বা হস্তক্ষেপ করছে। এখন আদালতকে নগ্নভাবে ছাত্রদলকে ধ্বংস করার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ এতই বিএনপিকে ভয় পায় যে একটা ছাত্রদলের কমিটি নিয়েও তাদের গায়ে জ্বালা ধরেছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশকে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা লুটেপুটে ফোকলা করে দিয়েছে। সরকার তথাকথিত উন্নয়নের কথা বলে নেতাদের উন্নয়ন, দুর্বৃত্তের উন্নয়ন, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের উন্নয়ন, হাজার কোটির মালিকদের লুটপাটের উন্নয়নেই যে ব্যস্ত ছিল সেই সত্যগুলোই এখন প্রতিদিনই গণমাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের দলানুগত ভিসিরা লুটপাটের প্রতিযোগিতায় নেমেছে।

রিজভী বলেন, ক্ষুদ্র দফতরি হয়ে শত কোটির মালিক হয়েছে এদের আমলে। সিঙ্গাপুরের শীর্ষ ৫০ ধনীর তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন বাংলাদেশের সামিট গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ আজিজ খান। তার বর্তমান সম্পত্তির পরিমাণ ৯১০ মিলিয়ন (৯১ কোটি ডলার) যা বাংলাদেশি অর্থে প্রায় ৭৬৭৫ কোটি টাকা। এই আজিজ খান হলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী কর্নেল (অব.) ফারুক খানের সহোদর ভাই। খবর বেরিয়েছে, এই সাত হাজার কোটি টাকা থেকে, গত বছরেই তিনি দুই হাজার কোটি টাকা কামিয়েছেন কুইক রেন্টাল প্রকল্পের বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসিয়ে রেখে, মুফতে ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে। কুইক রেন্টাল প্রকল্পের উদ্যোক্তারা বিদ্যুৎ উৎপাদন না করে, অলস উৎপাদন ক্ষমতা থাকার কারণে ক্যাপাসিটি চার্জ পান। সামিট গ্রুপ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পিডিবির কাছ থেকে ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে দুই হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে। ক্যাপাসিটি চার্জ হিসাবে দুই হাজার কোটি টাকা নিয়ে যাওয়া একটা অবিশ্বাস্য লেভেলের লুটতরাজ। এভাবেই ক্ষমতাসীন দলের লোকজন বিদেশে টাকা পাচার করে দেশকে দেউলিয়া করে দিচ্ছে। আর জনগণের দৃষ্টি ভিন্নদিকে ফেরাতে লোক দেখানো অভিযান চালাচ্ছে সরকার। গত দুই দিনে অবৈধ অর্থ, দুর্নীতি -মাদক-জুয়া-ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান ফিকে হয়ে সরকারের আসল চেহারা বেরিয়ে এসেছে।

এমজে/