সরকার দুর্নীতিবাজদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না: মওদুদ

সরকার দুর্নীতিবাজদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না: মওদুদ

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেছেন, সরকার দুর্নীতিবাজদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। তিনি বলেন, আজকে যে প্রতিটা ক্ষেত্রে পতন ঘটেছে, এই পতনের কারণ হলো দেশে কোনো প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার নেই। যার কারণে আজকে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। তাদের নিজেদের দলের নেতা-কর্মীদের দুর্নীতি এমন প্রসার লাভ করেছে যাতে সরকার তাদের নিজেদের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে।

শুক্রবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে এগ্রিকালচারিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এ্যাব বাংলাদেশ আয়োজিত মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

এ্যাব সভাপতি হারুন-অর-রশিদের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, কৃষিবিষয়ক সম্পাদক ওমর ফারুক, সহ-প্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সভাপতি শামসুল আলম তোফা, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল প্রমুখ।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে মওদুদ আহমেদ বলেন, ২৯ ডিসেম্বর যে নির্বাচন হয়েছে সে নির্বাচন সংবিধানসম্মত হয়নি। সেজন্য আমাদের দেশে আজ একটি জবাবদিহিতাহীন সরকার বিরাজ করছে।

তিনি বলেন, এই সরকারের নিয়ন্ত্রণ এখন আর নেই। সেটার প্রমাণ আমরা গত দুই সপ্তাহে পেয়েছি। শামীম, খালেদ আর সম্রাট- এরা মাত্র তিনটি নাম, আরো শত শত নাম আছে এবং শত শত মানুষ আছে যুবলীগ করে, যারা চাঁদাবাজি করে ক্যাসিনো চালায় এবং জুয়ার আসর বসায়, এরা কারা? তারাতো এই দলেরই নেতৃবৃন্দ।

মওদুদ আহমেদ বলেন, আজকে ছাত্রলীগের শোভন-রাব্বানী সভাপতি-সেক্রেটারি হয়ে যে দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়েছিলেন আজ শুধু শোভন-রাব্বানী নয়, এ দলের মধ্যে অনেক শোভন-রাব্বানী রয়েছে। একজন ছাত্রনেতা ৮৬ কোটি টাকা দুর্নীতি করতে পারে এটা আমি কল্পনাও করতে পারি না। ছাত্রনেতা এত টাকা চাঁদাবাজি করবে এটা তো কল্পনার বাইরে।

তিনি আরো বলেন, আজ দুর্নীতি বাংলাদেশের সর্বত্র ছড়িয়ে গেছে। নিজেদের দলের মধ্যে তো আছেই এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ ভিসি দুর্নীতিতে অভিযুক্ত। ১১টি পাবলিক ইউনিভার্সিটির মধ্যে তিনজন ভিসির কুশপুত্তলিকা পোড়ানো হয়েছে। ভিসি একজন সম্মানিত ব্যক্তি, কিন্তু তারাও আজ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়ে গেছেন। একই সাথে আদালতেও দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়েছে।

মওদুদ আহমেদ আরো বলেন, অবিলম্বে এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। পদত্যাগ করে দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন নিবেন। যে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধিত্ব সরকার গঠিত হলেই এই নৈরাজ্য, চাঁদাবাজি, জুয়ারি, ক্যাসিনো দূর হবে। তাছাড়া এই সরকারের পক্ষে নিজেদের দলীয় লোকদের দুর্নীতি তারা দূর করতে পারবেন না। আজকে হয়তো খবরের কাগজে খুব ভালো করে ছাপানো হচ্ছে। দেখবেন কয়েকদিন পরেই এগুলো ধামাচাপা দিয়ে দেয়া হবে। এরা এতো প্রভাবশালী যে, এদের সাথে যেসব এমপি-মন্ত্রীরা জড়িত তাদের প্রভাবে শেষ পর্যন্ত এদের কিছুই হবে না।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরামের এ সদস্য বলেন, এ অবস্থার প্রেক্ষিতে আজকে সরকারের সবচাইতে বেশি প্রয়োজন দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা। আর গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হলে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। বেগম জিয়া একটি বানোয়াট মামলায় মাত্র দুই কোটি টাকার অভিযোগে আজকে তাকে জেলখানায় থাকতে হচ্ছে। এক বছর সাত মাস হয়ে গেছে, যে মামলায় তার সাতদিনের মধ্যে জামিন হওয়ার কথা, আজ এক বছর সাত মাসেও তার জামিন হয় না। সরকারের রাজনীতির প্রভাবের কারণ আদালতসমূহ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না। সে জন্যই বেগম খালেদা জিয়া আজ জেলখানায়।

তিনি আরো বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে এ সরকার ভয় পায়। কারণ তারা জানে বেগম খালেদা জিয়া যদি মুক্ত হন তাহলে দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসবে, স্বেচ্ছাচারিতা আর থাকবে না। ফ্যাসিবাদি সরকার আর থাকবে না, দেশে আইনের শাসন ফিরে আসবে।

মওদুদ আহমেদ বলেন, বেগম জিয়াকে আইনের আওতায় রেখে মুক্ত করা সম্ভবপর হবে না। আমরা অনেক চেষ্টা করেছি। কোনো আদালতে বেগম জিয়ার জন্য কোনো রকমের সুসংবাদ নেই। কারণ আদালতগুলোতে তারা সম্পূর্ণভাবে প্রভাব বিস্তার করেছেন। সেজন্য রাজপথেই একমাত্র পথ। আন্দোলন করে বেগম জিয়াকে মুক্ত করার জন্য আমাদের সকল গণতান্ত্রিক দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক শক্তিসমূহকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আন্দোলনের মাধ্যমেই বেগম জিয়াকে মুক্ত করতে হবে।

এমআই