অর্থ বিতরণ নিয়ে মুখ খুলেছে খালেদ

আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতাকে ৫ কোটি এবং সম্রাটকে ৫০ লাখ টাকা দেন খালেদ

আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতাকে ৫ কোটি এবং সম্রাটকে ৫০ লাখ টাকা দেন খালেদ

রাঘববোয়ালদের নিয়ে মুখ খুলেছেন যুবলীগের খালেদ ভূঁইয়া ওরফে ক্যাসিনো খালেদ। তিনি ফাঁস করেছেন কাকে কত টাকা দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের শীর্ষ কয়েকজন নেতার নাম বলেছেন র‌্যাবের জেরার মুখে। তিনি যুবলীগ নেতা সম্রাট, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আবু কাওসারসহ বেশ কয়েকজনের নাম বলেছেন। তালিকা দিয়েছেন পুলিশের বেশ কয়েকজনের। এ ছাড়াও কার কাছে কত অস্ত্র রয়েছে, তারও হিসাব দিয়েছেন খালেদ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য দিয়ে বলেছে, র‌্যাবের জেরায় খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া তার অর্থের উৎস এবং সেগুলো ব্যয়ের চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। আর এসব টাকা যারা উঠাতেন তাদের নামও ফাঁস করেছেন। অন্তত ২৫ জন তার সহযোগী রয়েছেন, যাদের অনেকেই ছিলেন হকার আর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। তারা প্রত্যেকেই এখন কোটিপতি। তাদের কেউ টাকা উঠাতেন, কেউ হয়েছেন ক্যাসিনোর মালিক। তারা প্রত্যেকেই যুবলীগ নেতা। প্রধান ক্যাশিয়ার যুবলীগ নেতা মাকসুদসহ এই ২৫ জনই এখন লাপাত্তা।

র‌্যাব সূত্র জানায়, খালেদ ভূঁইয়ার এই সহযোগীদের গ্রেফতারে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হচ্ছে। র‌্যাব জানায়, খালেদ মুক্তিযোদ্ধা চিত্তবিনোদন ক্লাব থেকে মাসে ৩ লাখ টাকা করে নিতেন। শাহজাহানপুর রেলওয়ে গেট সংলগ্ন মাছের বাজার থেকে মাসে ৬০ হাজার টাকা, শাহজাহানপুর লেগুনা থেকে মাসে ৩০ হাজার টাকা, ফুটপাথ থেকে মাসে ২০ হাজার টাকা, আর ইয়ংমেন্স ক্লাব থেকে মাসে ৪০ লাখ টাকা করে নিতেন। চাঁদাবাজির মাধ্যমে অর্জিত অঢেল এসব টাকা রাখতেন ৯টি ব্যাংকে। এর মধ্যে মালয়েশিয়ার আরএইচবি ব্যাংকে তার ৬৮ লাখ টাকা জমা আছে বলে স্বীকার করেছেন।

এ ছাড়া সিঙ্গাপুরের ইউওবি ব্যাংকে জমা আছে দেড় কোটি টাকা, ব্যাংকক অব ব্যাংকে এক লাখ টাকা, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে সাড়ে ৬ কোটি টাকা, ব্র্যাক ব্যাংকে আড়াই কোটি টাকা, এনসিসি ব্যাংকে তার নামে এফডিআর করা আছে ১৯ কোটি টাকা। ব্র্যাক ব্যাংকে তার স্ত্রী সুরাইয়া আক্তারের নামে রাখা আছে ৫০ লাখ টাকা। এনসিসি ব্যাংকে এবং ব্র্যাক ব্যাংকে তার অর্পণ প্রোপার্টিজের নামে ১৫ লাখ করে ৩০ লাখ টাকা জমা আছে।

তার চাঁদাবাজি করা টাকার একটা অংশ তিনি আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ ও পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছেও পাঠাতেন বলে তদন্তকারী কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন। বলেছেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি মোল্লা আবু কাওসারকে সুমন নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে ৬০ লাখ টাকা দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতাকে একটি প্রজেক্টের জন্য খালেদ দিয়েছেন ৫ কোটি টাকা। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটকে ৫০ লাখ টাকা, আনিছুর রহমানকে ৪০ লাখ টাকা, আবদুর রহমান ও নূরুল হুদাকে দুই কোটি টাকা দেন। যুবলীগের একজন শীর্ষ নেতাকে মোটা অংকের টাকা দেন নিয়মিত। এ ছাড়া ডিএমপির মতিঝিল বিভাগ এবং ডিবি পুলিশের পূর্ব বিভাগের দুই কর্মকর্তাকে নিয়মিতভাবে বিভিন্ন অংকে টাকা দিয়েছেন। চাঁদাবাজির জন্য তার ক্যাডার বাহিনীর মধ্যে ছিল গোড়ানের কাউন্সিলর আনিস ও তার সহযোগী পিচ্চি রুবেল।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এ কে মুমিনুল হক সাঈদ এবং তার সহযোগী হাসান উদ্দিন, আরামবাগ ক্লাবের প্রহরী জামাল ও কাজিন সুমনের মাধ্যমে চাঁদা আদায় করতেন। যুবলীগ নেতা মাকসুদ ক্যাশিয়ার হিসেবে খালেদের টাকা উঠাতেন। তার ক্যাডার বাহিনীর মধ্যে আরও রয়েছে- ১১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রিজভী, মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের এনামুল হক আরমান ওরফে ক্যাসিনো আরমান, রানা মোল্লা। এ ছাড়া মিল্কি হত্যা মামলার তিন আসামি কাইল্লা আমিনুল, অঙ্কর এবং উজ্জ্বল মোর্শেদ তার ক্যাডার বাহিনীর অন্যতম সহযোগী। ক্যাসিনো বকুল, ল্যাংড়া জাকির ও ড্রাইভার জিসানও ক্যাডার বলে জানিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। খালেদ বলেছেন, বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা গোড়ানের রাউফুল আলম শুভর কাছে ৪/৫টি বিদেশি পিস্তল রয়েছে।

এমজে/