১৭ কোটি মানুষের জন্য একটি মাত্র ঠাকুর পুরস্কার: মির্জা আব্বাস

১৭ কোটি মানুষের জন্য একটি মাত্র ঠাকুর পুরস্কার: মির্জা আব্বাস

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে ‘দেশের স্বার্থ রক্ষা হয়নি’ অভিযোগ করে বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস বলেছেন, ভারতের অনেক পাওয়ার বিপরীতে বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের জন্য এসেছে মাত্র একটি ঠাকুর শান্তি পুরস্কার।

সফরের তৃতীয় দিন শনিবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে সাতটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়। তিনটি যৌথ প্রকল্প উদ্বোধন করেন দুই প্রধানমন্ত্রী।

ওই সব চুক্তি ভারতের পক্ষে গেছে বলে দাবি করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।

রবিবার এক ফেইসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, “দুতরফা বৈঠকে একতরফা চুক্তি, তরল গ্যাস, চট্রগ্রাম মংলা বন্দর, ফেনী নদীর পানিও যাবে ভারতের ত্রিপুরার সাব্রুম শহরে। কথা ছিল মৃতপ্রায় তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা নিয়ে আসবেন, উল্টো পানি দিয়ে আসলেন।

“শুধু কি পানি? তরল গ্যাস, একাধারে চট্রগ্রাম আর মংলা সমুদ্রবন্দর, গভীর সমুদ্রের গ্যাস ব্লক, করিডরসহ অজানা আরও অনেক অনেক কিছু। বিনিময়ে এদেশের ১৭কোটি মানুষ কি পেলাম আমরা? ১৭ কোটি মানুষের জন্য একটি মাত্র ঠাকুর পুরস্কার।”

শনিবার রাতেই নয়া দিল্লিতে এক অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনাকে ‘টেগর পিস অ্যাওয়ার্ড’ দিয়েছে এশিয়াটিক সোসাইটি কলকাতা। শান্তি প্রতিষ্ঠা, ক্ষুধা ও দারিদ্র্য দূর এবং দুর্নীতি প্রতিরোধে ভূমিকার জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে এই পদকে ভূষিত করার কথা জানায় তারা।

মির্জা আব্বাস বলেন, “দেশ কী পেল আর না পেল তাতে কী? দিল্লির পুতুল হয়ে সুতোর টানে নড়েচড়ে ঠাকুর শান্তি পুরস্কারতো এসেছে দেশে, এটাই বা কম কিসের?”

এই বিএনপি নেতার মতে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার দর কষাকষি করে দেশের মানুষের ন্যায্য প্রাপ্যটুকুও আদায়ে ‘ব্যর্থ হয়েছে তার নতজানু পররাষ্ট্র নীতির কারণে’।

তিনি বলেন, “এভাবে আর কতদিন? বাংলাদেশের জনগণের সাথে দুটো দেশের সরকারের এই তামাশা আর কত দিন? তামাশার পর তামাশা, নাটকের পর নাটকে জনগণ আর বোকা হবে না।”

এ প্রসঙ্গে ক্যাসিনোকাণ্ডে রোববার যুবলীগ নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটকে গ্রেপ্তার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মির্জা আব্বাস।

তিনি বলেন, “ক্যাসিনোর পুরোনো নাটক আজকেই সামনে আনলেন? অবৈধ চুক্তির হেডলাইন ঢাকতে মিডিয়াকে দিলেন নতুন হেডলাইন? জনগন এখন সব বোঝে। আজকের হেড লাইন হবে- দেশবিরোধী চুক্তি ঢাকতে পুরোনো ক্যাসিনো নাটকের নতুন সংস্করণ।”
মির্জা আব্বাস বলেন, “তিস্তার ন্যায্য হিস্যা পানি, ফারাক্কার অভিশাপতো রয়েই গেছে, হালে সিকিমের উজানে ২০টি বাঁধ দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে প্রায় সবটুকু পানি, যেটুকু ছাড়ছে সেটুকুও তারাই আবার পশ্চিমবঙ্গে নিয়ে নিচ্ছে। ভরা মৌসুমে পানি ছেড়ে বন্যায় ডুবিয়ে মারছে, আবার খরা মৌসুমে আটকে দিচ্ছে। নদীমাতৃক বাংলাদেশ মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছে।”

তিনি দাবি করেন, “বাংলাদেশের অনুমতি ছাড়াই ফেনী নদী থেকে অবৈধভাবে বছরের পর বছর পানি উত্তোলন করে নিয়ে যাচ্ছিল ভারত। আন্তর্জাতিক আইন অমান্য করে সীমান্তের জিরো লাইনে পাম্প বসিয়ে নদী থেকে পানি উত্তোলন করে চলেছে নয়া দিল্লি। পানি উত্তোলন না করতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানালেও পাত্তাই দেয়নি ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।

“এবারের সফরে সেই অবৈধতার পাকা পোক্ত বৈধতা দিয়ে এলেন আমাদের সরকার।”
মির্জা আব্বাস বলেন, “দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষিত তিস্তার পানির বিষয়টিকে পুরোপুরি পাশ কাটিয়ে উল্টো এখন ফেনী নদী থেকে ১.৮২ কিউসেক পানি ত্রিপুরার সাব্রুম শহরে সরবরাহে রাজি হয়ে এসেছে বাংলাদেশ। সঙ্কীর্ণ দলীয় স্বার্থে দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে।

“বন্ধুত্ব আর দাসত্ব এক কথা নয়। আমরা খালি দিয়েই গেলাম, বিনিময়ে জুটলো না কিছুই। ১৭ কোটি মানুষ কি এখন পদক ধুয়ে পানি খাব?”

এমজে/