আবরার হত্যা : আন্দোলনকারীদের বিএনপির সমর্থন

ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে: রিজভী

ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে: রিজভী

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদের হত্যার ঘটনায় চলমান আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি।

বুধবার সকালে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলন বিষয়ে নিজেদের এ অবস্থান তুলে ধরেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেন, বুয়েটের মেধাবী ছাত্র শহীদ আবরার ফাহাদের নির্মম মৃত্যু কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটি ক্ষমতাসীনদের খুনের সংস্কৃতির ধারাবাহিক চর্চার একটি অংশ মাত্র। আজ তাই বাংলাদেশের মানুষের পক্ষের মানুষের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার সময় এসেছে। এই অন্ধকারের সরকারের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করে মানুষের অধিকার মানুষের হাতে ফিরিয়ে দিতে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের বিকল্প নেই।

তিনি আরো বলেন, আজ দেশের জনগণই যেন নিজ দেশে পরাধীন। এই পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে আমাদের জেগে উঠতে হবে। এদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করে দেশের জনগণের অধিকার ও দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সুনিশ্চিত করতে হবে।

লিখিত বক্তব্যে রিজভী বলেন, বুয়েটের মেধাবী ছাত্র শহীদ আবরার ফাহাদের বর্বরোচিত ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর যখন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশ ও আধিপত্যবাদ বিরোধী গগণবিদারী শ্লোগানে উত্তাল তখন সরকার ছাত্রদেরকে নিরস্ত করার জন্য নানা ছলছাতুরির আশ্রয় নিচ্ছে। সরকার প্রধান থেকে শুরু করে সরকারের মন্ত্রীরা নানা রকম বক্তব্য দিচ্ছেন। যে কারণে আবরারকে নির্মম নির্যাতনের মাধ্যমে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে, সে দিক থেকে দৃষ্টি ফেরাতে মরিয়া হয়ে ওঠেছে সরকার। মূলত দেশের মাটি, পানি, আকাশের স্বার্থে স্ট্যাটাস দেয়ায় বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আবরারের স্ট্যাটাসের পিছনের কারণই ছিল দেশবিরোধী চুক্তির বিরোধিতা ও সত্য ইতিহাস তুলে ধরা। আর দেশবিরোধী চুক্তিটি করেছেন বর্তমান মিডনাইট ভোটের সরকার জনগণের সাথে দিনে দুপুরে প্রতারণা করে। সুতরাং আবরার খুনের দায় সরকারও এড়াতে পারে না। দেশবিরোধী চুক্তি বাতিল ছাড়া আবরারের আত্মা শান্তি পাবে না। শহীদ আবরারের মা বলেছেন, ‘আমাকে শান্তনা দেয়ার চেষ্টা করো না। এই লাশ আমি বহন করতে পারবো না। আমি চাই আমার ছেলেকে জীবিত ফিরিয়ে দাও। আমার ন্যায়বিচার দরকার নেই। আমি কার কাছে বিচার চাইবো?’

রিজভী বলেন, বাস্তবে খুনী ও স্বৈরাচারের কাছে বিচার চাওয়ার সময় এখন না। এখন সময় এসেছে স্বৈরাচারের বিচারের। যারা নিজেদের ক্ষমতা আঁকড়ে রাখার জন্য একের পর এক দেশবিরোধী চুক্তি করে দেশের সবকিছু অন্যোর হাতে তুলে দিচ্ছে তাদের বিচার করতে হবে। গণমাধ্যমের কাছে জেনেছি আজ প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করে বক্তব্য দিবেন। জাতির সামনে বক্তব্য দেয়ার আগে সকল দেশবিরোধী চুক্তি বাতিল করবেন কি না জানতে চাই।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের ন্যায্য পাওনা পাওয়ার কোনো অধিকার নেই, ন্যায্য হিস্যার দাবি তোলাটাও যেন ভয়ংকর অপরাধ। সুতরাং আবরার ফাহাদ আওয়ামী শাসকগোষ্ঠীর কাছে অপরাধী, কারণ সে আওয়ামী লীগের বন্ধু রাষ্ট্রের বাংলাদেশের প্রতি আচরণের সত্য ইতিহাস তুলে ধরেছিল। এজন্য তাকে জীবন দিতে হলো। এসময়ের শ্রেষ্ঠ দেশপ্রেমিক আবরার ফাহাদ। মৃতুঞ্জয়ী আবরার ফাহাদ দেশের জন্য জীবন দিয়ে মৃত্যুকে জয় করেছে। এদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার যুদ্ধের প্রধান প্রেরণা হয়ে থাকবে আবরার ফাহাদ। আবরার ফাহাদ আমাদের প্রাণের পতাকা।

বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, যার রুমে যার উপস্থিতিতে আবরারকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয় সেই অমিত সাহার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এজাহারে তার নাম নেই, তাকে বহিষ্কারও করেনি ছাত্রলীগ। শেরেবাংলা হলের ২০১১ নম্বর রুম তথা টর্চার সেলটি অমিত সাহার। তাকে বাঁচাতে বুয়েট প্রশাসন ও বিতর্কিত পুলিশ কর্মকর্তা ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। অথচ প্রথম আলোসহ অধিকাংশ পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে: আবরারকে মারার সময় অমিত সাহা সেখানে উপস্থিত ছিল এবং সে মারামারিতে অংশ নেয়। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর অন্যরা লাশ নিয়ে গেলেও অমিত সাহা তার রুমেই ছিল। কক্ষের ভেতরে যখন আবরার এর ওপর অকথ্য টর্চার চলে তখন পুলিশ খবর পেয়েও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। তাকে বাঁচানোর জন্য এখন নানারকম অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে একটি গোষ্ঠী। আন্দোলনরত ছাত্রদের দাবীর সাথে আমরাও অবিলম্বে অমিত সাহাকে গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি। একই সাথে ছাত্রদের প্রতিটি দাবির সাথে একাত্মতা ঘোষণা করছি।

‘একটা ভুল ধারণা তৈরি হচ্ছে যে, বাংলাদেশ ভারতকে গ্যাস দিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু বিষয়টি হচ্ছে বিদেশ থেকে আমদানি করা গ্যাস প্রক্রিয়াজাতকরণ শেষে তা ভারতে রফতানি হবে।’ পররাষ্ট্র মন্ত্রী আব্দুল মোমেনের বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, কি হাস্যকর যুক্তি! এই মন্ত্রীকে বলতে চাই, বিদেশ থেকে গ্যাস এনে আমাদের প্রক্রিয়া করে ভারতে রফতানি করতে হবে কেনো? ভারত নিজে কি প্রক্রিয়া করতে জানে না? আপনি যেখান থেকে গ্যাস আনবেন সেখান থেকে ভারত নিজেই তো গ্যাস নিতে পারে, আপনাকে কেনো দিতে বলবে ? প্রধানমন্ত্রীকে বলবো- জাতীয় স্বার্থবিরোধী চুক্তির প্রতিবাদ করতে গিয়ে লাশ হতে হলো আবরারকে। চুক্তি বাতিল করে প্রমাণ দিন- আপনি আবরারের পক্ষে, ভারতের আবদারের পক্ষে নন।

রিজভীর আরো বলেন, গোটা দেশকে এখন একটি টর্চার সেলে পরিণত করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো এখন কন্সেন্ট্রেশন ক্যাম্প। ছাত্র-যুবক-আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সবাই এখন লীগের টর্চার সেলের নির্মম শিকার। আপনারা দেখেছেন, যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেফতারের পর সেখানে পাওয়া গেছে আধুনিক টর্চার সেল। যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন সম্রাটের অফিসে পাওয়া গেছে টর্চার সেল। বুয়েট ছাত্রলীগের আইন বিষয়ক উপসম্পাদক অমিত সাহার ২০১১ নাম্বার কক্ষ যেখানে আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে নৃশংসকায়দায় হত্যা করা হয়, সেই কক্ষটিও একটি টর্চার সেল। একদিকে চলছে গুম খুন অপহরণ আর বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, অপরদিকে সারাদেশে রয়েছে ছাত্রলীগ-যুবলীগের টর্চার সেল। এই টর্চার সেলগুলোই ২০১৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর দিবাগত রাতের গর্ভে জন্ম নেয়া বর্তমান সরকারের শক্তির উৎস।

তিনি বলেন, আজ একদিকে বাংলাদেশের পক্ষের জনগণ আর অপরদিকে ছাত্রলীগ-যুবলীগ, হাতুড়ি লীগ সরকারি লীগের সন্ত্রাসীরা। এই সন্ত্রাসীরা জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। এই সন্ত্রাসীদের কাছে নিজ দেশের স্বার্থ বড় নয়। তাই বাংলাদেশের স্বার্থের পক্ষে কথা বলতে চায়, লিখতে চায় তাদের বিরুদ্ধে এই সন্ত্রাসীদের এতো ক্ষোভ। এতো প্রতিহিংসা। এতো জিঘাংসা। বাংলাদেশের স্বার্থের পক্ষে একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসও এই সন্ত্রাসী এবং তাদের রাজনৈতিক গডফাদারদের বুকে কাঁপন ধরায়।

বাংলাদেশের স্বার্থের পক্ষে মত প্রকাশ করায় যারা ছয়টি ঘন্টা ধরে একজন নিষ্পাপ মেধাবী শিক্ষার্থীকে ঠাণ্ডা মাথায় পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করলো এরা কি মানুষ? এরা হানাদার বাহিনীর চেয়েও নিকৃষ্ট। এরা মানুষরূপী দ্বিপদ জন্তু। এই জানোয়াররা বুয়েটেই তাদের বর্বরতা দেখায়নি। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় এবং নিরীহ বিশ্বজিৎ এর ওপর এই জানোয়ারদের নৃশংসতা দেশের জনগণ দেখেছে। সেই সময়ও এই জানোয়াররা হাতুড়ি ও দা-বটি নিয়ে শিক্ষার্থীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তরিকুলকে যেভাবে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করতে করতে শরীর থেঁতলে দিয়েছিলো সেই জানোয়ারদের বিচার কি হয়েছিল? হয়নি। হয়নি বলেই ঠাণ্ডা মাথায় টর্চার সেলে নিয়ে ভিন্ন দল মতের মানুষকে পিটিয়ে মেরে ফেলা এখন ছাত্রলীগ-যুবলীগ তাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিণত করেছে, বলেন রিজভী।

এমজে/