ছাত্রলীগের কারণে সমগ্র ছাত্ররাজনীতি দায়ী হতে পারে না : রিজভী

ছাত্রলীগের কারণে সমগ্র ছাত্ররাজনীতি দায়ী হতে পারে না : রিজভী

ছাত্রলীগের কারণে সমগ্র ছাত্ররাজনীতি দায়ী হতে পারে না মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সন্ত্রাস, দুর্নীতি এবং রক্তপাতের অজুহাতে সমগ্র ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের চক্রান্ত গভীর মাস্টারপ্লানের অংশ।

সোমবার দুপুরে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

এছাড়া আজ ঝিনাইদহ জেলার মহেষপুর ও চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সকাল থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হলেও ভোটারদের সেখানে ঢুকতে দেয়া হয়নি। মহেশপুরে প্রত্যেকটি ভোট কেন্দ্র থেকে বিএনপি প্রার্থীর এজেন্টদের মারধর ও বের করে দেয়া হয়েছে এবং রাস্তার মোড়ে-মোড়ে লাঠিসোটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। একই অবস্থা সাতকানিয়াতেও। এই দুই উপজেলাতে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের সাথে পাল্লা দিয়ে পুলিশও ভোটারদের বের করে দিচ্ছে। এই দুই উপজেলায় ভোটের নামে প্রকাশ্যে ভোট জালিয়াতির উৎসব শুরু হয়েছে।

লিখিত বক্তব্যে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ছাত্র রাজনীতিকে যারা কলুষিত করেছে, মারামারি-দলাদলিকে যারা উৎসাহিত করেছে, ক্যাম্পাসে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা বিস্তারে যারা মদদ দিয়েছে তারাই প্রকৃত ছাত্ররাজনীতিকে মানুষের চোখে হেয় করেছে। তারাই এখন সমগ্র ছাত্র রাজনীতিকে বন্ধ করে দিতে চাচ্ছে। ছাত্রসমাজ জনগোষ্ঠীর আলোকিত সম্প্রদায়, তারা আলোকদীপ্ত চোখে রাষ্ট্র ও সমাজে অনাচারগুলো চিহ্নিত করে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। যুগে যুগে এই ছাত্রসমাজই অন্যায়-অসাম্য-অবিচারের বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছে। নিজের শরীরের রক্ত ঝরিয়ে ভাষার অধিকার থেকে শুরু করে স্বাধীকার স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। এরা নির্যাতিত জনগণের ভ্যানগার্ড হিসেবে রাজপথে দৃপ্তপায়ে এগিয়ে গেছেন।

তিনি বলেন, ছাত্রসমাজের সেই মহিমান্বিত ঐতিহ্য ম্লান করেছে বর্তমান ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী। স্বাধীনতার পরপরই ব্যালট বাক্স ছিনতাই ও শহীদ মিনারে ছাত্রী লাঞ্ছনার মধ্য দিয়ে ছাত্রলীগ তাদের যাত্রা শুরু করে। তাদের উত্তরসূরীরাই বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে হলে প্রচলিত বিধিবিধানকে তোয়াক্কা না করে নিষ্ঠুর ও সর্বনাশা নির্যাতন ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। আর এটা সম্ভব হয়েছে সরকারের ছত্রছায়ায়। হলে হলে টর্চার সেল গঠিত হয়েছে। একের পর এক ক্ষমতাসীন ছাত্রলীগ দ্বারা শিক্ষার্থী খুনের ঘটনা ঘটছে। এর ভয়ঙ্করতম রূপ দৃশ্যমান হলো মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে।

রিজভী বলেন, ছাত্রলীগকে এই কয়েক বছরে এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে তারা কোনো এথিকসের ধার ধারেনি। এই কদাচারের জন্য সমগ্র ছাত্রসমাজ বা ছাত্ররাজনীতি দায়ী হতে পারে না। সরকারের কাছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকসহ তথা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিরঙ্কুশ আনুগত্যের কারণেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত আইন-কানুন, বিচারের তোয়াক্কা করছে না ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন। তাদের দৌরাত্ম্য ও উপদলীয় হানাহানির কারণে সমগ্র ছাত্ররাজনীতি নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে একটি নৈতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিস্থিতি অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবেই তৈরি করেছে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী। আত্মসম্মানহীন একটি নিপীড়ক সংগঠন ছাড়া ছাত্রলীগ আর কিছুই নয়। এর জন্য বহু শতাব্দীর ‘একাডেমিক ফ্রিডম’সহ বহু মুক্তি আন্দোলন সংগ্রামের পথিকৃৎ ছাত্ররাজনীতিকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো ঠিক নয়।

‘এখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে’- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ভোটারদের ভোট দিতে না দেওয়া কি সু-নীতি? এটাতো এক মহাদুর্নীতি। পুলিশ এবং সরকারী দলীয় ক্যাডারদের দিয়ে দিনে-দুপুরে ভোট জালিয়াতি করা মহাদুর্নীতিরই বহিঃপ্রকাশ। আর এই মহাদুর্নীতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে বুক ফুলিয়ে বিগত ১০/১১ বছর ধরে করে আসছেন ক্ষমতাসীনরা। দুই একজন চুনোপুটিকে ধরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান বলে না বরং এই অভিযানের নামে বড় বড় দুর্নীতিকে আড়াল করা হচ্ছে। উন্নয়নের নামে গত ১০ বছরে যে অসংখ্য দুর্নীতির গুপ্তধন তৈরি হয়েছে সেগুলো উদ্ঘাটন করা তো দূরে থাক বরং সেগুলোকে পাহারা দেয়া হচ্ছে। সরকারি ব্যাংক, শেয়ারবাজার, পদ্মাসেতুর লুটেরারা অধরায় থেকে যাচ্ছে। পর্দাকাণ্ড, বালিশকাণ্ডের মতো বিস্ময়কর দুর্নীতিগুলো শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্ববাসীকেও তাক লাগিয়ে দিয়েছে। বড় বড় দুর্নীতির মহারথিরা ক্যাবিনেটসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত আছেন। কারণ ক্ষমতাসীনদের কাছে দুর্নীতির রুই-কাতলারা হচ্ছে দেশপ্রেমিক। সুতরাং তাদেরকে কেউ স্পর্শ করতে পারবে না।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মীর সরফত আলী সপু, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এমজে/