ঢাকার প্রবেশমুখে তল্লাশি, আবাসিক হোটেলে কড়াকড়ি

ঢাকার প্রবেশমুখে তল্লাশি, আবাসিক হোটেলে কড়াকড়ি

ঢাকা, ৭ ফেব্রুয়ারি (জাস্ট নিউজ) : বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মামলার রায়কে সামনে রেখে ঢাকায় সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে পুলিশ।

বুধবার ভোর থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এ নির্দেশনা কার্যকর থাকবে বলে মঙ্গলবার ডিএমপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এছাড়া রাজধানীর সব প্রবেশ পথে কড়া তল্লাশি জোরদার করা হয়েছে। কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে আবাসিক হোটেলগুলোতে। গণপরিবহন চলাচল কমে গেছে গত রাত থেকেই। ঢাকাসহ সারা দেশে ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

বিএনপি নেতাকর্মীদের বাসায় বাসায় তল্লাশি চালানোর অভিযোগ করা হয়েছে দলের পক্ষ থেকে। মঙ্গলবার বিকাল থেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পুলিশের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। রাতে বিপুল সংখ্যক পুলিশ কার্যালয়ের বাইরে অবস্থান করে। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ কার্যালয়ে গত কয়েকদিন ধরে টানা অবস্থান করছেন।

এদিকে রায়ের দিন বৃহস্পতিবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা সতর্ক অবস্থানে থাকবেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। শ্রমিক লীগ সমর্থিত পরিবহন শ্রমিকরা বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাজধানীর টার্মিনালগুলোতে অবস্থানের ঘোষণা দিয়েছেন। গতকাল থেকে রাজধানীতে নিরাপত্তা মহড়া শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। র‌্যাবের কয়েকটি দল বকশীবাজারসহ আশেপাশের এলাকায় মহড়া দেয়।

মিছিল-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা: ৮ই ফেব্রুয়ারি ঢাকায় মিছিল-সমাবেশ ও জমায়েতের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। এছাড়া এদিন ভোর ৪টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত মহানগর এলাকায় লাঠি, ছুরি, চাকুসহ ধারালো অস্ত্র, বিস্ফোরক ও দাহ্যপদার্থ বহনে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।

যানবাহলে তল্লাশি, কড়াকড়ি: মঙ্গলবার থেকেই ঢাকার সড়কগুলো ফাঁকা হতে শুরু করেছে। মঙ্গলবা ঢাকার পথে বাস চলাচল ছিল সীমিত। দূরপাল্লার যানবাহন প্রবেশে বিভিন্ন মোড়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। এমনকি সিলেট, চট্টগ্রাম, রাজশাহীসহ বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি বৃদ্ধি করা হয়েছে। ঢাকার প্রবেশমুখে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করছে পুলিশ ও র‌্যাব। বিশেষ করে রাতে তল্লাশি বৃদ্ধি করা হয়। আব্দুল্লাহপুর, কেরানীগঞ্জের বসিলা, বাবুবাজার, যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, কুড়িল এলাকায় তল্লাশির জন্য চেকপোস্ট বাড়ানো হয়েছে। সোমবার থেকেই কেরানীগঞ্জ- মোহাম্মদপুর সড়কের শহীদ বুদ্ধিজীবী সেতু এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করতে দেখা গেছে র‌্যাব সদস্যদেরকে। মঙ্গলবার বেলা পৌনে ৪টায় ঢাকার হাইকোর্ট, মৎস্য ভবন, প্রেস ক্লাব, পল্টন, কাকরাইল এলাকায় মহড়া দিয়েছে র‌্যাব-৩। মহড়ায় শতাধিক র‌্যাব সদস্য অংশ নেন। নাশকতা প্রতিরোধে র‌্যাব পেট্রোল ডিউটি বৃদ্ধি করেছে বলে র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে।

র‌্যাব-৩ এর অপারেশন অফিসার সাখাওয়াত হোসেন জানান, সকল প্রকার অপরাধ, নাশকতা প্রতিরোধে র‌্যাব সক্রিয় রয়েছে। প্রতিদিন র‌্যাব-৩ এর দেড় শ’ থেকে দু’শ সদস্য পেট্রোল ডিউটি করছেন বলে জানান তিনি। তল্লাশি বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে গ্রেপ্তার। পোশাকধারী র‌্যাব-পুলিশের পাশাপাশি মাঠে সক্রিয় রয়েছে গোয়েন্দারা। ঢাকার সিএমএম আদালত সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার ২৬৮ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করা হয়েছে। তার আগের দিন গ্রেপ্তার করে হাজির করা হয়েছিলো ২৩১ জনকে।

আবাসিক হোটেলে কড়াকড়ি: এদিকে অলিখিত নির্দেশনায় রাজধানীর আবাসিক হোটেলগুলোতে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। নতুন করে অতিথিকে থাকতে দেয়া হচ্ছে না। পুরনো অতিথিদেরও আজকের মধ্যে হোটেল ছেড়ে যেতে বলা হয়েছে।

পুলিশের পক্ষ থেকে মৌখিকভাবে পল্টন, ফকিরাপুল, গুলিস্তান, বংশাল, শাহবাগ, রমনা এলাকার হোটেলগুলোতে অতিথি উঠাতে নিষেধ করা হয়েছে। এমনকি যেসব অতিথি মঙ্গলবার পর্যন্ত অবস্থান করেছেন তাদের সবাইকে আজকের মধ্যে চলে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। তবে ঝামেলা এড়াতে এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চান না হোটেল কর্তৃপক্ষ।

পল্টনের হোটেল ভিক্টরী ইন্টারন্যাশনাল ডিলাক্স হোটেলে কথা বললে ওই হোটেলের অভ্যর্থনাকারী সাইফুল ইসলাম জানান, ৯ই ফেব্রুয়ারির আগে হোটেলে গেস্ট উঠাতে নিষেধ করেছে পুলিশ। এই হোটেলে ৭৪টি কক্ষ রয়েছে। কক্ষগুলো ৭ই ফেব্রুয়ারির মধ্যে খালি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। পুলিশের নিষেধাজ্ঞার কারণে ফকিরাপুল, বংশাল এলাকার কিছু হোটেল বন্ধ করে দিয়েছেন হোটেল কর্তৃপক্ষ। ৮ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই হোটেলগুলো বন্ধ থাকবে।
এদিকে ডিএমপির পক্ষ থেকে লাঠি বা কোনো ধরনের অস্ত্র বহনে নিষেধাজ্ঞার কথা বলা হলেও ওই দিন শ্রমিকদের লাঠি হাতে রাজপথে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ।

মঙ্গলবার বাস মালিক সমিতির অফিসে এক যৌথসভায় এ কথা বলেন তিনি। রাজধানীর গুলিস্তান, মহাখালী, ফুলবাড়িয়া ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে ১৫ হাজার মালিক-শ্রমিক গজারি লাঠি নিয়ে অবস্থান নেবে বলে ঘোষণা দেন তিনি।

(জাস্ট নিউজ/ওটি/১৪২০ঘ.)