বিবেকের তাড়নায় নির্বাচন নিয়ে মহাসত্য স্বীকার করেছেন মেনন : রিজভী

বিবেকের তাড়নায় নির্বাচন নিয়ে মহাসত্য স্বীকার করেছেন মেনন : রিজভী

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বিবেকের তাড়নায় নির্বাচন নিয়ে মহাসত্য স্বীকার করেছেন ১৪ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন।

রবিবার সকালে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা রিজভী বলেন, কথায় বলে, ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। সত্যকে কখনও ধামাচাপা দেয়া যায় না। সত্য কোন না কোনভাবে প্রকাশিত হয়-ই। নিশিরাতের সরকারের সঙ্গী রাশেদ খান মেনন যেকোনো কারণেই হোক, এবার নিজের মুখে মহাসত্যটি স্বীকার করেছেন। মেনেন বলেছেন, ‘২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর কোনো নির্বাচন হয়নি। তিনি বলেছেন-আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, ওই নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারেনি। এমনকি পরবর্তীতে উপজেলা এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও ভোট দিতে পারেনি দেশের মানুষ। উন্নতির প্রচারণার আড়ালে মানুষের সব অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে এবং ব্যাপক দুর্নীতি হচ্ছে। ক্যাসিনো অভিযানের নামে ছিঁচকে কিছু দুর্নীতিবাজ ধরা হলেও মূল হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে।’ এদেরকে কবে ধরা হবে সে প্রশ্নও তুলেছেন জনাব মেনন।

রিজভী বলেন, অবশেষে সত্য কথাটা অকপটে জনগণের সামনে স্বীকার করতে হলো মেনন সাহেবকে। বিবেকের তাড়নায় মেনন সাহেব যে সত্যকথাগুলি বলতে শুরু করেছেন, হয়তো কয়েকদিন পর ওবায়দুল কাদের এবং হাসান মাহমুদরাও বলবেন। আর এই কথাগুলি যতোই তাদের নিকট থেকে বেরিয়ে আসবে ততোই বন্ধক রাখা আত্মা মুক্ত হবে।
চুনোপুটিদের ঘাড়ে দায় চাপিয়ে দুর্নীতির রাঘববোয়ালদের সরকার বাঁচানোর চেষ্টা করছে মন্তব্য করে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, এখন যারা গণভবন দখলে রেখে দুর্নীতির বিরুদ্ধে চটুল কথাবার্তা বলছেন, ৯ লক্ষ কোটি টাকা পাচারের দায় দায়িত্ব তারা এড়াতে পারবেন না-যা মেনন সাহেব উল্লেখ করেছেন। খালেদ, শামীম কিংবা ক্যাসিনো সম্রাটদের কাঁধে টাকা পাচারের দায় দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়ে গণভবন দখলকারীরা নিজেদের দায়মুক্তির যেই কূটকৌশল অবলম্বন করছেন, তাদের চালাকি জনগণের কাছে স্পষ্ট। দেশ থেকে নয় লক্ষ কোটি টাকা পাচার হয়ে গেলো, গণভবন দখলকারীরা জানেন না, এটা জনগণ বিশ্বাস করে না। গত একদশকে লুটেরাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে সরকার প্রমাণ করেছে, এই লুটপাটের সঙ্গে তারা আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িত। এখন দুই একটা ইমিটেশন সম্রাটদের ধরে নয় লক্ষ কোটি টাকা পাচারের সম্পূর্ণ হিসেব তাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়ার কূটকৌশল জনগণ ঠিকই বুঝতে পারে।

রিজভী বলেন, জনমনে প্রশ্ন, এইসব সম্রাটদের কারা তৈরী করেছিল? এইসব সম্রাট তো একদিনে তৈরী হয়নি। যে সব রাজা-বাদশাহ-সম্রাজ্ঞীরা এসব ক্যাসিনো সম্রাটদের তৈরী করেছিল তারা এখন নিজেদের গা বাঁচানোর চেষ্টা করলেও জনগণ জানে, সরকারের উচ্চমহলের আনুকুল্য না পেলে রাষ্ট্রের এতো লক্ষ কোটি টাকা লোপাট সম্ভব নয়। ব্যাংকগুলোকে খালি করে দেয়া সম্ভব নয়। লক্ষ কোটি টাকা ঋণখেলাপি হওয়া সম্ভব নয়। উচ্চ পর্যায়ের আনুকুল্য না থাকলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আটশো দশ কোটি টাকা লোপাট হওয়ার পরও জনগণকে ২৪ দিন পর্যন্ত জানতে না দেয়ার ধৃষ্টতা সম্ভব ছিল না।
তিনি বলেন, এখন বিপদ টের পেয়ে দুই একটা সম্রাট ধরে নিজেদের দুর্নীতির কালিমালিপ্ত চেহারা ঢাকা সম্ভব নয়। কারণ, শীর্ষ নেতাদের আনুকুল্য থাকার কারণেই রাজধানীতে ৬০টি অবৈধ ক্যাসিনো তৈরী হতে পেরেছিলো, খালেদ-শামীম-সম্রাট তৈরী হয়েছিল। দেশের আনাচে-কানাচে আরও যে কতো খালেদ-শামীম-সম্রাট রয়েছে সেগুলো কিন্তু অধরায় থেকে গেল। উচ্চ পর্যায়ের আনুকুল্য থাকার কারণেই এই সব ক্যাসিনো হোতাদের জন্ম হয়েছে। এদের মধ্য থেকেই অনেকেই এমপিসহ সরকারের পদও বাগিয়ে নিয়েছেন। এটা প্রমাণিত গত একদশকে গণভবনের উৎসাহ ও প্রণোদনায় চলেছে ‘শিষ্টের দমন দুষ্টের লালন’। সুতরাং বর্তমানে আসল সমস্যা গণভবনে। এখন দেশকে বাঁচাতে হলে, জনগণকে বাঁচাতে হলে দেশে দুর্নীতিবাজদের লালনকারী নেপথ্য রাজা-বাদশাহ-আমীর-ওমরাদের পতন ঘটাতে হবে। গণভবনকে দুর্নীতিবাজদের দখলমুক্ত করে জনগণের গণভবন জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেয়া এখন সময়ের দাবি।

রিজভী বলেন, ২০১৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর মধ্যরাতে জনগণের ভোট ডাকাতি করে যারা এখন গণভবন দখলে রেখে চটুল কথাবার্তা বলে নিজেদেরকে ধোয়া তুলশী পাতা প্রমাণের চেষ্টা করছেন, জনগণ তাদের আসল চেহারাটা জানে।

দেশ চলছে সম্পূর্ণ উল্টো পথে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, যারা অপরাধী রাজদণ্ড তাদের হাতে। আর নিরাপরাধ থাকেন কারাগারে। গণতন্ত্র ও দেশের পক্ষে কথা বলার কারণেই আজ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে। শেখ হাসিনার পলিটিক্যাল মনোপলি নীতির কারণেই নিহত সংবিধান, স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা ও স্বচ্ছ নির্বাচন।

তিনি বলেন, সত্যের ঢোল বাতাসে বাজে, অপকর্ম করেও কখনও কখনও বিবেকের তাড়নায় সত্য প্রকাশ করতে বাধ্য হয় মানুষ, বিবেকবান মানুষের মনে অপরাধবোধ অস্থিরতা সৃষ্টি করে। দুর্নীতিবাজ সরকারের বিশ্বস্ত কমরেড রাশেদ খান মেননের বক্তব্যের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য কি তা আমাদের জানা নেই তবে জাতির সামনে রাজস্বাক্ষী হয়ে রাতের ভোটের ভোট ডাকাতির স্বীকারোক্তি প্রদানের মাধ্যমে নিজের দায় ও অপরাধ তিনি স্বীকার করে নিলেন। এই বক্তব্যের পর নৈতিকতা ও বাস্তবতার দিক দিয়ে সরকারের উচিত সংসদ ভেঙে দেয়া। সংসদে বহাল থাকার নৈতিক অধিকার তাদের নেই। যেহেতু তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত নন। বর্তমান সরকারেরও যদি বিন্দু মাত্র লজ্জা থাকে তাহলে আজকেই তাদের পদত্যাগ করে সরে যাওয়া উচিত। তারা যে অবৈধ সরকার তাদের সঙ্গের লোকেরাই তা আজ স্বীকার করেছেন। দেশের জনগণ জীবনের ভয়ে কথা বলতে পারছেনা, এটাও তারা স্বাক্ষ্য দিচ্ছেন।

এমজে/