১৪ দিন কোনো চিকিৎসক যাননি খালেদা জিয়াকে দেখতে: রিজভী

১৪ দিন কোনো চিকিৎসক যাননি খালেদা জিয়াকে দেখতে: রিজভী

বেগম খালেদা জিয়াকে বিনা চিকিৎসায় হত্যার ষড়যন্ত্র চলছে অভিযোগ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, গত ১৪ দিন ধরে কোনো চিকিৎসক যাচ্ছেন না সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে।

শুক্রবার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনের বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই অভিযোগ করেন।

রিজভী বলেন, আপনারা জানেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বর্তমানে ভীষণ অসুস্থ। তাকে কারাগার থেকে বিএসএমএমইউতে (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার অসুস্থতা নিয়ে চলছে সরকারের নির্দয় আচরণ। তার উন্নতমানের সুচিকিৎসার অধিকারটুকু কেড়ে নেয়া হয়েছে। গত ১৪ দিনে কোনো চিকিৎসক তার কাছে যাননি।

তিনি বলেন, বিএসএমএমইউয়ের উপাচার্য গত সপ্তাহে রিমাটোলজিষ্টদের দিয়ে যে মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছেন অদ্যাবধি সেই মেডিকেল বোর্ড বেগম জিয়া কিংবা তার কোনো স্বজনকে চিকিৎসার বিষয়ে কোনো রিপোর্ট দেননি। প্রচন্ড ব্যথা-বেদনায় দেশনেত্রী রাতে মোটেই ঘুমাতে পারছেন না। আগের তুলনায় বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থা খুবই শোচনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। দুই মাস আগে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দাঁতের এক্স-রে করা হলেও এখন পর্যন্ত সেই রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। যেহেতু বেগম খালেদা জিয়ার ব্লাড সুগার মাত্রাতিরিক্ত তাই তার দাঁতের সমস্যার কারণে চোখসহ শরীরের অন্যান্য সমস্যা প্রকট হওয়ার সম্ভাবনা খুবই বেশি।

বেগম খালেদা জিয়ার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের বাইরে জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, বারবার ইনস্যুলিন পরিবর্তন এবং ইনস্যুলিনের মাত্রা বৃদ্ধি করার পরেও কোন অবস্থাতেই তার সুগার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। কোনো কোনো সময় এটি ২৩-২৪ মিলিমোল পর্যন্ত উঠে যাচ্ছে। সুগার নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে খাবারের পরিমাণ অনেক কমিয়ে দেয়াতে শরীরের ওজন অনেকখানি হ্রাস পেয়েছে। তিনি হাঁটতে পারেন না, হাত নাড়াতে পারেন না।

বিশেষায়িত হাসপাতালে বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৱসার দাবি জানিয়ে রিজভী বলেন, যথাযথ চিকিৎসার বিষয়ে আমরা বারবার দাবি করা সত্ত্বেও দেশনেত্রীকে উন্নতমানের যন্ত্রপাতিবিশিষ্ট দেশের কোন বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়নি। দেশনেত্রীর সুস্থ জীবন প্রত্যাশা করছে দেশবাসী সবাই। কিন্তু সরকারের নির্মম আচরণে মানুষ চরম ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েছে। কারাগারে নেয়ার সময় সুস্থ বেগম জিয়াকে এখন হুইল চেয়ারে চলাফেরা করতে হয়। দেশবাসী দেশনেত্রীর জীবনের পরিণতি নিয়ে এখনও অজানা আতঙ্ক ও শঙ্কার মধ্যে রয়েছে।

বেগম খালেদা জিয়ার জীবন নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, সরকার দেশনেত্রীর জীবন নিয়ে গভীর মাষ্টারপ্ল্যানে ব্যস্ত। এই মাষ্টারপ্ল্যান হচ্ছে-গণতন্ত্রের ধ্বংসস্তুপের ওপর জাতীয়তাবাদী শক্তিকে নির্মূল করে গণতন্ত্রকে ধ্বংস ও দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে দুর্বল করা। কারণ বেগম খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের এক জাগ্রত অর্নিবান সত্তা। তাই তাকে নিয়ে বর্তমান মিডনাইট নির্বাচনের সরকার এক সর্বনাশা পথে হাঁটছে। এ কারণেই গণতন্ত্রের প্রতীক বেগম খালেদা জিয়াকে রোগে-শোকে-ব্যথা-বেদনায় জর্জরিত রেখে কারাগারে আটকিয়ে রেখেছে।

বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতাকে সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে না অভিযোগ করে বিএনপির এই যুগ্ম মহাসচিব বলেন, বর্তমান মিডনাইট ভোটের সরকার মানবতাবোধশুন্য এবং বেআইনি কাজে এতো অভ্যস্ত যে, তারা সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিপজ্জনক অসুস্থতাও ভ্রুক্ষেপ করছে না। সরকারের অমানবিক ও নিষ্ঠুর আচরণ প্রমাণ করে দেশনেত্রীর প্রাণনাশ করতে তারা গোপনে মহাপরিকল্পনা আঁটছে। আইন আদালত বর্তমানে শেখ হাসিনার হাতের মুঠোয় আছে বলে বেগম খালেদা জিয়ার জামিনও শেখ হাসিনার হাতের মুঠোয় বিদ্যমান।

রিজভী বলেন, দেশের মানুষের কাছে একটি কথা পরিষ্কার হয়ে গেছে শুধুমাত্র ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে রাখতে এবং দেশজুড়ে লুটপাট আর দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য গড়ে তুলতেই বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দি করে রাখা হয়েছে। ১১ বছরের বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগ দেশ থেকে গণতন্ত্রকে নির্বাসিত করেছে, পাশাপাশি দেশের লক্ষ কোটি টাকাও নির্বাসনে পাঠিয়েছে। দেশে লুটের রাজত্ব কায়েম করেছে। তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে অথচ মুক্তিযুদ্ধে ত্যাগ, তিতিক্ষা, নির্ভয় আত্মোৎসর্গের ব্রত ছিল কিন্তু আওয়ামী লীগের চেতনা হিংসা, প্রতিহিংসা, জিঘাংসা ও ভোগবাদের মিলিত রুপ।

এমজে/