বিএসএমএমইউ’র পরিচালকের বক্তব্য অসামঞ্জস্যপূর্ণ : রিজভী

বিএসএমএমইউ’র পরিচালকের বক্তব্য অসামঞ্জস্যপূর্ণ : রিজভী

বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে বিএসএমএমইউ-হাসপাতালের পরিচালক সরকারের শেখানো কথা বলছেন বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।

দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সোমবার বিকেলে নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বি-ব্লকের শহীদ ডা: মিল্টন হলে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যগত বিষয়ে গণমাধ্যমকে অবহিত করতে গিয়ে বিএসএমএমইউ’র পরিচালক বলেন, ‘খালেদা জিয়া ভাল আছেন, চিকিৎসায় সন্তুষ্ট। গত সাত মাস আগে বেগম খালেদা জিয়া ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও বাতজ্বরজনিত বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেও এখন বেশিরভাগ অসুখের উন্নতি হয়েছে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে অবস্থা স্থিতিশীল হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার সাথে বিকেল ৪টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও দেখা পাওয়া যায় না। প্রায় সময় ডাক্তাররা কেবিনে গিয়ে তার সাথে সাক্ষাতের সুযোগ পান না।’

তার উক্ত বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রিজভী বলেন, অথচ বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক ঝিলন মিয়া সরকার বলেছেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসকদেরকে যথেষ্ট সহযোগিতা করেন এবং অত্যন্ত বিনয়ী ব্যবহার করেন। তিনি হাঁটতে পারেন না, অন্যজনের সহায়তায় তাকে হাঁটতে হয়। তার আরো চিকিৎসা প্রয়োজন। একজন অসুস্থ মানুষের লাইফ স্টাইল অনেক রকম হয়, এটা আমি স্বাভাবিক মনে করি। এসব বিষয়গুলো সম্মান করেই আমাদের চিকিৎসা করতে হয়। ম্যাডাম আমাদের সাথে সবসময় হাসিখুশি কথা বলেন। কিন্তু চিকিৎসক হিসেবে নানা অসুবিধার কারণে আমাদেরও প্রতিদিন বেগম খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করা সম্ভব হয় না।’

রিজভী বলেন, অধ্যাপক ঝিলন মিয়া সরকারের বক্তব্যের সাথে পরিচালকের বক্তব্য অসামঞ্জস্যপূর্ণ। পরিচালক সরকারের শেখানো কথাই বলছেন। বিএসএমএমইউ’র পরিচালকের বক্তব্যে এটি সুস্পষ্ট যে, ৭৫ বছর বয়সী ভয়ানক অসুস্থ চারবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে কারাবন্দী রেখে বিনা চিকিৎসায় তিলে তিলে নিঃশেষ করার মহাআয়োজন চলছে। প্রধানমন্ত্রীর মনোভাবই প্রতিফলিত হয়েছে পরিচালকের বক্তব্যে।

তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার প্রাণনাশের দূরভিসন্ধি নিয়েই তাকে কারাগারে বন্দী করে রাখা হয়েছে। প্রতিদিন তার শরীর ভেঙে পড়ছে, স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটছে। উন্নতমানের চিকিৎসার অভাবে তিনি এখন প্রতিনিয়ত চলৎশক্তিহীন হয়ে পড়ছেন। তাকে মুক্তি দিয়ে সুচিকিৎসার সুযোগ দেয়ার জন্য দেশের সর্বস্তরের মানুষের অব্যাহত সুতীব্র দাবি ও তার পরিবারের আবেদন-অনুরোধ কানে তুলছে না মধ্যরাতের গহ্বরে জন্ম নেয়া এই ভীত সন্ত্রস্ত দুর্বল সরকার। তারা দেশনেত্রীকে কোনোভাবেই মুক্তি না দিয়ে কারাগারে হত্যার নীলনকশা বাস্তবায়নে উন্মত্ততা দেখাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, দেশের মানুষ সকলেই জানেন, তাদের প্রাণাধিক দেশনেত্রীর অবস্থা অত্যন্ত সঙ্কটাপন্ন। এখনি সুচিকিৎসা না করাতে পারলে তার সুস্থ অবস্থায় ফিরে না আসার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তিনি বিছানা থেকে উঠতে পারেন না, নিজের খাবার খেতে পারেন না, তিনি এক পা হাঁটতেও পারেন না। আগে এক হাত তুলতে পারতেন না, এখন দুই হাতই তুলতে পারেন না। স্বাস্থ্য অত্যন্ত ক্ষীণ হয়ে পড়েছে। হাত-পা অবশ হয়ে গেছে। কথা বলতেও কষ্ট হয়। আমাদের দলের সংসদ সদস্যবৃন্দ এবং তার পরিবারের সদস্যরা তা সচক্ষে দেখে এসেছেন।

রিজভী বলেন, এখন শেখ হাসিনা দেশনেত্রীর অসুস্থতা নিয়ে নিয়মিত মিথ্যাচার করে চলেছেন। কখনো কখনো নির্দয় ‘ডার্ক হিউমার’ করছেন। শেখ হাসিনা গত শনিবার সন্ধ্যায় আজারবাইজানে স্থানীয় হিলটন হোটেলে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সাথে সাক্ষাৎকালে বলেছেন, ‘বিএনপি খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিকে আন্দোলনের ইস্যু বানাতে তাকে অসুস্থ বলছে। খালেদা জিয়া কারাগারে অন্য বন্দীদের চেয়ে বেশি সুযোগ-সুবিধা লাভ করছেন।’ এর আগে শেখ হাসিনা লন্ডনে গিয়ে বলেছিলেন ‘খালেদা জিয়াকে সারাজীবন কারাগারে রাখবেন তিনি! এসব কথাবার্তাতেই সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ মেলে-বেগম জিয়াকে বন্দী অবস্থায় বিনা চিকিৎসায় চিরতরে পঙ্গু করে দিতে চান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, দেশনেত্রীকে রাজনীতি এবং নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রেখে একতরফাভাবে নির্বাচন করার পর এখন তাদের ভয়ের মাত্রা আরো বেড়ে গেছে। এ কারণে বেগম খালেদা জিয়াকে জামিন দেয়া হচ্ছে না। তার ওপর ইতিহাসের বর্বরতম নিপীড়ন চালানো হচ্ছে। আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, অবিলম্বে দেশনেত্রীকে মুক্তি দিয়ে সুচিকিৎসার সুযোগ দিন। অন্যথায় তার যদি কোনো ক্ষতি হয় তবে সকল দায় শেখ হাসিনা ও তার সরকারকেই বহন করতে হবে।

এমজে/