মোসাদ্দেক আলী ফালুর সম্পত্তি ক্রোক ও অবরুদ্ধের আদেশ

মোসাদ্দেক আলী ফালুর সম্পত্তি ক্রোক ও অবরুদ্ধের আদেশ

বিএনপি নেতা মোসাদ্দেক আলী ফালুর স্থাবর সম্পত্তি ক্রোক এবং অস্থাবর সম্পত্তি অবরুদ্ধের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

এছাড়া এনসিসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোসলেহ উদ্দীন আহমেদ ও তার স্ত্রীর নামীয় ১৫টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধেরও আদেশ দিয়েছে আদালত।

মঙ্গলবার ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক মো. আল মামুন এই আদেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন দুদকের প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর।

ফালুর স্থাবর সম্পত্তি ক্রোক ও অবরুদ্ধের জন্য দুদকের উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান আবেদন করেন।

অন্যদিকে মোসলেহ উদ্দীন আহমেদ ও তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের জন্য সহকারী পরিচালক মামুনুর রশিদ চৌধুরী আবেদন করেন।

আবেদনে মোসাদ্দেক আলী ফালুর বিষয়ে বলা হয়, আসামি অসৎ উদ্দেশ্যে অপরাধজনক বিশ্বাস ভঙ্গ করে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অসৎ উদ্দেশ্যে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ গড়ে তোলেন। এ সমস্ত অবৈধ সম্পদ বিভিন্ন পন্থায় দুবাইয়ে পাচার করেন এবং এ পাচার করা ১৮৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা স্থানান্তর, রূপান্তরের মাধ্যমে নিজেদের দখলে রেখে এর অবৈধ প্রকৃতি, উৎস অবস্থান গোপন বা এর ছদ্মাবরণে পাচার বা পাচারের প্রচেষ্টায়/ষড়যন্ত্রে সংঘবদ্ধভাবে সম্পৃক্ত থেকে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২), (৩) ধারার শাস্তিযোগ্য অপরাধ করায় উত্তরা পশ্চিম থানায় গত ১৩ মে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

মামলার প্রাথমিক তদন্তে এবং রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, রোজা প্রোপার্টিজের পরিচালক ফালু। রোজা প্রোপার্টিজের সম্পত্তি মূলত তারই ভাতিজা নাঈম উদ্দিন আহমদের নামে ক্রয়কৃত। যা অবৈধ সম্পদ হিসেবে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত। তাই রাজধানীর কাকরাইলে ২০১৫ সালে ২৩ আগস্ট ক্রয়কৃত ১৬ কোটি টাকায় ওই স্থাবর সম্পত্তি অন্যত্র হস্তান্তর করতে না পরে এজন্য ক্রোক করা প্রয়োজন। এছাড়া রোজা প্রোপার্টিজের কাওরান বাজারস্থ সাড়ে নয় কোটি টাকার, রাজীন ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি বিডির ২৬ কোটি ৯৮ লাখ টাকার এবং দুবাই এ রোজা এন্টারটেইনমেন্ট এফজেডই ও রোজা ইনভেস্টমেন্ট এলএলসির ৪৯ লাখ ৪০ হাজার টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধ করা প্রয়োজন। মামলা নিষ্পত্তির পূর্বে এ স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ হস্তান্তর বা স্থানান্তর হয়ে গেলে মামলার উদ্দেশ্যে ব্যাহত হবে।

অন্যদিকে মোসলেহ উদ্দীনের পারমিশন মামলার আবেদনে বলা হয়, আসামি কোটি কোটি টাকা তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট নামে পরিচালিত বিভিন্ন ব্যাংকে পরিচালিত একাধিক হিসাবে স্থানান্তর করে পরবর্তীতে নিজ, নিকট আত্মীয় এবং স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন হিসাবে স্থানান্তরের মাধ্যমে নগদ উত্তোলন করে এবং প্লেসমেন্ট, লেয়ারিং, ইন্টিগ্রেশন করে মানিলন্ডারিং করেছেন মর্মে প্রাথমিক তথ্য-প্রমাণাদি পাওয়া গেছে। আসামি অসৎ উদ্দেশ্যে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ গড়ে তোলেন। এ সমস্ত অবৈধ সম্পদ বিভিন্ন অবৈধ পন্থায় লন্ডারিং করেন যা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২),৪(৩) ধারা ও দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৭(১) ধারায় মামলা দায়েরের যথেষ্ট কারণ রয়েছে। মোসলেহ উদ্দীন অস্থাবর সম্পদসমূহ অবৈধভাবে অর্জন করেছেন নিজে এবং স্ত্রী লুনা শারমিনের যৌথ নামে বিভিন্ন ব্যাংকে ও আর্থিক লগ্নকারী ও ব্রোকারেজ হাউজে প্রতিষ্ঠানে জমা ও লগ্নী করেছেন। যার মধ্যে উত্তরা ব্যাংক, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া, সিটি ব্রোকারেজ, এনসিসিবি, সিএসএমএল ও ই সিকিউরিটিজ এবং যমুনা ব্যাংকের আটটি হিসাবে থাকা দুই কোটি ৮৬ লাখ ৭৯ হাজার ৪০২ টাকা এবং স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া, ডাচ বাংলা ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক ও সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকে সাতটি হিসাবে ছয় কোটি ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র রয়েছে। আসামি কর্তৃক অবৈধ উপায়ে অর্জিত ওই সকল অস্থাবর, সম্পদসমূহ অন্যত্র হস্তান্তর, স্থানান্তর বন্ধক বা বেহাত করার প্রচেষ্টা করছেন। এ অস্থাবর সম্পদ হস্তান্তর বা স্থানান্তর হয়ে গেলে আইনের উদ্দেশ্যই ব্যাহত হবে। এজন্য অবিলম্বের এ আসামির অস্থাবর সম্পত্তি অবরুদ্ধ করা প্রয়োজন।

এমজে/